ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সেনা চৌকিতে হামলার আগে মাঝিদের অনুমতি চায় আরসা 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭
সেনা চৌকিতে হামলার আগে মাঝিদের অনুমতি চায় আরসা  প্রতীকী ছবি

টেকনাফ থেকে ফিরে: গত ২৪ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের সেনা চৌকিতে হামলা চালানোর আগে রাখাইন রাজ্যের মুসলিম গ্রামগুলোতে হামলার কথা আগেই জানিয়েছিলো আরাকান স্যালভেশন আর্মি বা আরএসএ। এ সময় তারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে মুসলিম মাঝিদের (মাতুব্বর) কাছ থেকেও হামলার বিষয়ে পরামর্শ নেন।

রাখাইনের মংডু টাউনশিপ এলাকার বাসিন্দা মওলানা আফজালুর রহমান (ছদ্মনাম) দীর্ঘদিন ধরে আছেন কক্সবাজারের টেকনাফে। সেখানেরই এক ধনী ও প্রভাবশালী পরিবারেই বিয়ে হয় তার ছোট খালার।

টেকনাফের সেই প্রভাবশালী পরিবারে থেকেই তিনি বাংলাদেশে পড়ালেখা শুরু করেন। যার শেষ হয়েছে চট্টগ্রামের পটিয়া মাদ্রাসায়। সেখান থেকেই তিনি দাওরা হাদিস (স্নাতক) পাস করেছেন। বছরে দু’একবার মংডু শহর উপকণ্ঠের বাড়িতে গেলেও মিয়ানমারে কিন্তু যাওয়া হয় নিয়মিতই। যেমন গত ২৪ আগস্টের হামলার আগেও কয়েকবার গিয়ে কয়েকদিন থেকে এসেছেন রাখাইনের কয়েকটি রোহিঙ্গা গ্রামে।

টেকনাফের একটি আবাসিক হোটেলে বসে কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে। বর্তমানে তিনি মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য আসা ত্রাণ বিতরণে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন।  

আফজাল বলছিলেন, আরাকার স্যালভেশন আর্মি বা আরএসএ’র অস্তিত্ব রাখাইনের প্রায় সব এলাকাতেই আছে। তবে এর সক্রিয় সদস্য ১শ’র বেশি হবে না। তবে সমর্থক অনেক। প্রতিদিনই এর সমর্থক বাড়ছে। তবে ২৪ আগস্ট সেনা চৌকি ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও স্থানীয় মগদের আক্রমণ-অগ্নি সংযোগের পর বেশির ভাগ রোহিঙ্গারই বিরক্তিও বেড়েছে এ সংগঠনটির ওপর। তবে সমর্থন বেড়েছে তরুণদের।

আফজাল জানান, আরসা’র সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত নন। তবে, তার ঘনিষ্ট কযেকজন এ সংগঠনের সদস্য এবং সে হিসেবে সংগঠনটির সঙ্গে তারও ঘনিষ্টতা রয়েছে। গত এক বছর তিনি সংগঠনটিকে অনেক কাছ থেকে দেখছেন। তারা গ্রামে গ্রামে দওয়াতি কাজের মাধ্যমে সংগঠনটির জন্য সদস্য সংগ্রহ করেছেন। একই সঙ্গে গরিব ও গ্রামের সাধারণ মানুষের সঙ্গেও তাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ঈদ-পার্বনে আরসা মুসলিমদের মধ্যে নানা ধরনের উপহার সামগ্রী বিতরণ করে।

এবারের কোরবানির ঈদ উপলক্ষেও তারা প্রচুর পশু কিনে বিতরণ করেছিলো। কিস্তু ২৪ আগস্টের পর ২৫ আগস্ট থেকে চলমান এথনিক ক্লিন্জিং শুরু হওয়ায় সেই গরু আর কোরবানি দেওয়া সম্ভব হয়নি।

অন্যদিকে বুথেডং (বুচিডং) এলাকার টমবাজারের বাসিন্দা মোহাম্মদ ফইজুল্লাহ। উখিয়ার একটি অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, বছরখানেক ধরেই আরসা বড় ধরনের আক্রমণের পরিকল্পনা করছিলো। এজন্য তারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে মাঝিদের (মাতুব্বর) অনুমতি আদায়েরও চেষ্টা করে। জবাবে মাঝিরা তাদের কোনো অনুমতি দেননি আবার না-ও করেননি।

ফাইজুল্লাহ বলেন, আরএসএ’র সদস্যরা গ্রামবাসী ও মাঝিদের বোঝানোর চেষ্টা করেছে, মানুষের অধিকার আদায় এবং দীর্ঘদিনের বঞ্চনার প্রতিশোধ নিতে তারা বিদ্রোহ করতে চায়। জবাবে, নিমরাজি ছিলেন মাঝিরা। তারা বলেছিলেন, পারলেই কেবল এমন দুঃসাহস যেনো দেখানো হয়। অযথা যেনো মৌমাছির চাকে ঢিল না ছোড়া হয়। কিন্তু আরএসএ ঠিকই মৌমাছির চাকেই ঢিল ছুড়েছে। লাখ লাখ মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে।

৯১ সালে সাত বছর বয়সে শরনার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আসেন শফিকুর রহমান। বর্তমানে তিনি হ্নীলা আল হোসানিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল। পরিবারের সবাই রাখাইনে ফিরে গেলেও তিনি থেকে গেছেন বাংলাদেশে। তিনিও পড়ালেখা করেছেন চট্টগ্রামের পটিয়া মাদ্রাসায়। বর্তমানে তিনি ক্যাম্পে ঘুরে ঘুরে স্বদেশী রোহিঙ্গাদের নানা ধরনের সহযোগিতা করছেন।

উখিয়ার বালুখালি ক্যাম্পের ঢালার মুখে বাংলানিউজকে তিনি বলছিলেন, আরএসএ বা আল ইয়াকিন কোনো জঙ্গি সংগঠন নয়, আরাকানের সব রোহিঙ্গা জনগণকেই আল ইয়াকিন বলা হয়। এটা জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের নাম। এদের কোনো অস্ত্র নেই। দেশি অস্ত্রই এদের মূল অস্ত্র। প্রতিদিন মা, বোন, স্ত্রীকে ভোগের জন্য সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার চেয়ে একইসঙ্গে প্রতিবাদ করে মরে যাওয়া তাদের কাছে সঠিক মনে হয়েছে। তাই দেশি অস্ত্র নিয়েই তারা প্রতিবাদ করেছে। হাতে বানানো ককটেল, কিরিচ, রামদা ও লাঠিই ছিলো হামলার মূল অস্ত্র।

বাংলাদেশ সময়: ০৫১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
আরএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।