ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন-ভারতের অবস্থান এতোটা বিবেচ্য নয়’

মহিউদ্দিন মাহমুদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭
‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন-ভারতের অবস্থান এতোটা বিবেচ্য নয়’ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিউইর্য়ক, যুক্তরাষ্ট্র থেকে: রোহিঙ্গা ইস্যুতে সবাই সহানুভূতিশীল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে এ বিষয়ে চীন-ভারতের অবস্থান খুব একটা বিবেচ্য নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সকালের দিকে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে চীন-ভারতের অবস্থান বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন-ভারতের অবস্থান বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সমস্ত রাষ্ট্রদূতরা তারা কিন্তু রোহিঙ্গাদের ওখানে যান।

তারা তাদের (রোহিঙ্গা) অবস্থা দেখেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেন। আমরা প্রত্যেকের কাছ থেকে দেখেছি। সবাই কিন্তু সহানুভূতিশীল মন নিয়েই বিষয়টা দেখেছেন।  

‘কাজেই এখানে আমরা কিন্তু চীন বা ভারত- তাদের কি কথা বা তাদের কি মত সেটা এতো বিবেচ্য বিষয় নয়। কারণ এটা তাদের যার যার নিজের দেশের মতামত। তবে আমাদের দেশে তারা যখন রোহিঙ্গাদের দেখেছে তখন তাদের প্রত্যেকেই সহানুভূতিশীল। সেটা আমরা দেখেছি। ভারত চীন, সবাই কিন্তু এগিয়ে এসেছে। তারা ত্রাণ পাঠাচ্ছে, সব রকম সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫টি দেশের সঙ্গে মিয়ানমারের বর্ডার। এবং এই পাঁচটি দেশের সঙ্গে তাদের সমস্যা রয়েছে। উদ্বাস্তু সমস্যা। মিয়ানমারে ১৩৮টি জাতিগোষ্ঠী। তারা একে অপরের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ করেই যাচ্ছে। এটা কিন্তু মিয়ানমারের একটা সমস্যা। চীন, ভারত, বাংলাদেশ, লাওস, থাইল্যান্ড প্রত্যেকের সঙ্গে তাদের সীমান্ত। একেকদিকে একেক রকম সমস্যা রয়েছে।  

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গাদের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষ অত্যন্ত ভালো। ১৬ কোটি মানুষকে আমরা খাওয়াতে পারছি। রেহানাও বলেছে তুমি ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়ার দিচ্ছো আর এই ৫-৭ লাখ লোককে খাওয়ার দিতে পারবে না। তাদের রাখতে পারবে না- নিশ্চয়ই পারবে। এটা ঠিক, আমরা তা পারি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি বলেছি দরকার হলে আমরা এক বেলা খাবো, আর এক বেলার খাবার তাদের দিয়ে দেবো। বাঙালিরা কিন্তু সেটুকু করতে পারি।

জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলাপে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বিশ্বব্যাপী শরণার্থীরা যখন ঘুরে বেড়ায় তখন অনেক উন্নত দেশও তাদের আশ্রয় দেয় না। বা তারা দেশের দরজা বন্ধ করে দেয়। সেখানে বাংলাদেশের মতো একটা স্বল্পউন্নত দেশ এতো রিফিউজিকে আশ্রয় দিয়েছে, তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। দুঃসময়ে তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছে- এ বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে যা যা করণীয় তার পক্ষ থেকে করা হবে।  

বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার বিষয়ে আর কখনও প্রশ্ন না করার অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি একটা কথা জিজ্ঞেস করি- যারা তাদের সঙ্গে বসার কথা বলেন, ধরেন আপনার বাবা মাকে কেউ হত্যা করেছে, আপনাকে বলা হলো- ওদের সঙ্গে আপনাকে বসতেই হবে, আলোচনা করতেই হবে। পারবেন কেউ বসতে। বলেন আপনারা, বিবেককে জিজ্ঞেস করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তারপরও আমি দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে বসেছিতো। ২০১৪ নির্বাচনের আগে আমি নিজে ফোন করেছিলাম, সে ফোনের কথা ভুলে গেছেন আপনারা।

কোকো মারা যাওয়ার পর খালেদা জিয়ার গুলশানের অফিসে গিয়ে প্রবেশ করতে না পারার ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, আমি দেখতে গিয়েছি। আমাকে ঢুকতে দেয়নি। কতবড় অডাসিটি একবার চিন্তা করে দেখেন। এ ধরনের ছোটলোকিপনা যারা করে তাদের সঙ্গে আবার বসা কিসের।  

শেখ হাসিনা বলেন, এরপরে আর কেউ কখনও এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন আমার কাছে তুলবেন না। বিএনপির মতো একটা সন্ত্রাসী দল, জঙ্গিবাদী দল, যারা বাংলাদেশে জঙ্গি সৃষ্টি করেছে, বাংলা ভাই সৃষ্টি করেছে তাদের সঙ্গে বসতে হবে, তাদের সঙ্গে সমাধান করতে হবে। এই কথাটা দয়া করে আর কেউ বলবেন না। এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।  

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের হৃদয়ে স্থান পেলে সেটাই আমার জীবনের বড় পাওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী ও জাতিংসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন।

সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।  

এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে নিউইয়র্ক আসা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও কেন্দ্রীয় সদস্য এসএম কামাল।

নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণ এবং শুক্রবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করে ওয়াশিংটন যান প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর রওয়ানা হয়ে লন্ডনে যাত্রাবিরতি দিয়ে দুই অক্টোবর দেশে ফেরার কথা প্রধানমন্ত্রীর।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
এমইউএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।