ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

মেয়ের পিতৃত্বের দাবিতে ঘুরছে প্রতিবন্ধী আছিয়া

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭
মেয়ের পিতৃত্বের দাবিতে ঘুরছে প্রতিবন্ধী আছিয়া প্রতিবন্ধী আছিয়া, তার মা ও মেয়ে

সাতক্ষীরা: আড়াই বছরের মেয়ে মাহীর পিতৃত্বের দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী কুমারী মাতা আছিয়া খাতুন। কিন্তু প্রভাবশালীদের লালসার শিকার আছিয়া আড়াই বছরেও কোনো কূল কিনারা পায়নি।

অবশেষে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের দ্বারস্থ হন আছিয়ার পরিবার।

প্রতিবন্ধী আছিয়া খাতুন সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার আজিজপুর গ্রামের মোমিন গাজীর মেয়ে।

আছিয়া খাতুনের মা মছিরন বাংলানিউজকে জানান, ২০১৪ সালের ২৩ মে প্রতিবেশী নানী ফাতেমা খাতুন তার প্রতিবন্ধী মেয়ে আছিয়াকে নিয়ে একই গ্রামের মোকছেদ আলির বাড়িতে যান। পরে ফাতেমা খাতুন মোকছেদ আলি ও আছিয়াকে কৌশলে একটি ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজায় শিকল লাগিয়ে দেন। এ সময় মোকছেদ আলি আছিয়ার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। এর কিছুদিন পর তার শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিলে ডাক্তারি রিপোর্টে জানা যায় আছিয়া অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে।

তিনি আরও জানান, ওর বাবা বিষয়টি অভিযোগ আকারে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বরকে জানান। পরে মেম্বর আজগর আলির নেতৃত্বে প্রতিবেশী মোজাম্মেল হক, আমির আলি ও আবদুল হামিদের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠকে ধর্ষক মোকছেদ আলিকে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

জরিমানার ৫০ হাজার টাকা সালিশদার আবদুল হামিদ গ্রহণ করেন। সালিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, একই সঙ্গে তার গর্ভপাত করানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু আছিয়া, আছিয়ার বাবা ও মা তাতে অসম্মতি জানান।

পরে আছিয়ার মামা সামজেদ হোসেন সাজু দেবহাটা থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক (এসআই) মেজবাহউদ্দিন মামলাটির চার্জশিট দেন। এতে ধর্ষক মোকছেদ আলি ও সহযোগিতাকারী ফাতেমা খাতুনকে অভিযুক্ত করা হয়। পুলিশ ফাতেমাকে গ্রেফতার করে। ফাতেমা খাতুন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

প্রতিবন্ধী আছিয়ার মামা ও মামলার বাদী সামজেদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আসামিপক্ষের আবেদন অনুযায়ী ধর্ষিতা ও শিশু মাহীর রক্ত ডিএনএ টেস্টে পাঠানো হয়।

তিনি জানান, ডিএনএ টেস্টে নিগেটিভ রিপোর্ট আসায় আছিয়ার মেয়ের পিতৃত্বের দাবি ঝুলে যায়। এর ফলে দুই আসামিই খালাস পেয়ে যায়।  

আছিয়ার মামার অভিযোগ, মোকছেদ আলি রিপোর্ট প্রভাবিত করতে ডিএনএ টেস্টের জন্য নেয়া রক্তের স্যাম্পল পরিবর্তন করে অন্যের রক্ত পাঠায়। এজন্য প্রচুর টাকা খরচ করেছে সে। আমি এই রিপোর্টে নারাজি দিয়েছি। দ্বিতীয় দফায় ডিএনএ টেস্টের জন্য নিয়ম অনুযায়ী রক্ত দিয়েছে আছিয়া, তার মেয়ে মাহী ও আসামি মোকছেদ আলি। এখন পর্যন্ত এই রিপোর্ট সাতক্ষীরা আদালতে পৌঁছায়নি।

আছিয়ার অভিযোগ, প্রথমে সালিশের নামে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় ডিএনএ টেস্টে জাল জালিয়াতি করা হয়েছে। আমি আমার মাহীর পিতৃত্বের পরিচয় চাই।

পিতৃত্বের সঠিক পরিচয় নির্ধারণে এবারও এমন কোনো ঘটনা ঘটবে না তো-এমন প্রশ্ন রেখেছেন প্রতিবন্ধী আছিয়া খাতুন।

এ ব্যাপারে দেবহাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর আজগার আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমরা জানি। মাহীর পিতৃত্বের পরিচয় দরকার। স্থানীয়ভাবে আমরা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। মোকছেদ আলি তখন বিষয়টি স্বীকার করলেও টাকার জোরে সে এখন অস্বীকার করছে। তার শাস্তি হওয়া উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৩ ঘণ্টা, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।