কাজ করি দেশের তরে, সকলে খাই পেটপুরে - কোথায় আজ এই বাক্যটির নিভৃত তাৎপর্য? শ্রমজীবী মানুষ দিনভর হাড়ভাঙা পরিশ্রম শেষে তৃপ্তির খাদ্যগ্রহণ করে থাকেন পরের দিনের উদ্যমী শ্রমের জন্য। সোনালী অভিজ্ঞতার সৌন্দর্যে ভরা শ্রমজীবী প্রতিটি মানুষের গৌরব-কর্মময় হাত ভাতের জন্য হাহাকারমুখর!
অনেকে মুখফুটে বলতে পারেন না - ঊর্ধ্বগতির বাজারে তার চাল কেনার এই অক্ষমতার কথা।
কিন্তু বর্তমান বাজারে চালের মূল্যে ভালো নেই আমাদের চা শ্রমিকরা। পেটপুরে ভাত খাওয়া দিন তবে কী শেষ? তবে কী কথিত ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ বাক্যটি আজ প্রাচীন নিদর্শন-সংস্কৃতির সংগ্রহশালা জাদুঘরে ঠাঁই পেয়েছে?
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শ্রীমঙ্গল উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল টিপরাছড়া চা বাগানের ১১নং সেকশনে এসে দেখা যায় কর্মরত কিছু চা শ্রমিকদের। চায়ের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে কেমন আছেন আপনারা – এ প্রশ্নের উত্তরে বেরিয়ে আসে তাদের ক্ষোভ আর হতাশাগুলো।
ওই চা বাগানের এক নারী শ্রমিক সরস্বতী চাষা জানান, ‘এখন হামরা এক বেলা ভাত খায়ুছি বাবু। অন্যবেলায় চা আর রুটি খায়ুছি। লেখিয়া কি হইবেক? হামরাতে থোরা টাকা দিয়া যাও। ‘
তার কথার রেশ টেনে অপর নারী চা শ্রমিক গীতা বুনার্জি বলেন, ‘দৈনিক পঁচাশি টাকা হাজিরায় কি করে চাল কিনে খাবো বলেন? ছয় জন আছে আমারে সংসারে, আমরা দুইজন মাত্র কাজ করি। ’
‘তিনবেলা ভাত খাওয়ার কথা আমরা তো কল্পনাই করতে পারি না বাবু’ -বলে এ পরিবেশকে গভীর আবেগময় করে তোলেন মিনতি কাহার।
দুপুরের রোদের তীব্রতা তখন চা বাগানের সবুজ পাতায় পাতায়। কিন্তু সেই রোদের তীব্রতার থেকেই সুকঠিন তীব্রতর ক্ষুধার জ্বালা-যন্ত্রণা। শুধু টিপরাছড়ার কর্মরত এই শ্রমিকরাই নয়, সারাদেশের শ্রমিকসহ নিম্নআয়ের মানুষগুলো আজ এই যন্ত্রণারই ‘রাজসাক্ষী’ হয়ে আছেন!
বাংলাদেশ সময়: ১০২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭
বিবিবি/বিএস