বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকালে বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) রেজাউল করিম বলেন, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এম সাফায়েত হোসেনের নেতৃত্বে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনুসন্ধান শেষে এই প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সুবিধাজনক হওয়ায় এ পথে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি।
গত বছরের ০২ অক্টোবরে বেনাপোল বন্দরের ২৩ নম্বর পণ্যাগারে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৩৭ জন আমদানি কারকের পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে প্রায় হাজার কোটি টাকা লোকসান হয় ব্যবসায়ীদের।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ,অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বন্দর থেকে পণ্য চুরি ও অব্যবস্থাপনার কথা কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোন নজরদারি নেই। গত এক যুগ ধরে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানানো হলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। বন্দরের কর্মচারীরা অনিয়ম করে এখনও সাধারণ পণ্যাগারে কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থ নামাচ্ছেন।
বন্দরের ২২ নাম্বার পণ্যাগারের সুপারিন্টেন্ডেন্ট হাসানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বন্দরের পোস্টিং অফিস থেকে যদি সাধারণ পণ্যের পণ্যাগারে কেমিক্যাল নামানোর অনুমতি দেয়া হয় তাহলে তাদের করার কিছু করার থাকে না। এছাড়া কিছু সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আছেন যারা জোর করে এক একটি পণ্যাগার দখল করে রেখেছেন। এতে জায়গা সংকট হয়। তাদের কথা না শুনলে বিভিন্ন ভাবে হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।
বন্দর সুত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে বন্দরের ১০ নাম্বারসহ ১০টি পণ্যাগারে আগুনে পুড়ে ক্ষতি হয় ৩০০ কোটি টাকার পণ্য, ২০০১ সালে ২৬ নাম্বার পণ্যাগারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতি হয় ৩০ কোটি টাকার ,২০০৫ সালে ১০ ও ৩৫ নাম্বার পণ্যাগারে আগুনে ক্ষতি হয় ৭০ কোটি টাকার,২০০৯ সালের ১ জানুয়ারিতে ৩৫ নাম্বার পণ্যাগারে আগুনে নষ্ট হয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকার পণ্য। একই বছরের ২২ জুন ২৭ নাম্বার পণ্যাগারে আগুনে ক্ষতি হয় ১৫০ কোটি টাকার। আর সর্বশেষ ২০১৬ সালে ২ অক্টোবরে ২৩ নাম্বার পণ্যাগারে আগুনে পুড়ে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় আনুমানিক হাজার কোটি টাকা। এছাড়া ছোট খাটো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অনেকবার ঘটলেও তা ধামা চাপা পড়ে যায়।
বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, ২৩ নাম্বার পণ্য গুদামে অগ্নিকাণ্ডে তার প্রায় ২৫ লাখ টাকা মূল্যের তিনটি আমদানি পণ্যের চালান পুড়ে সম্পূর্ণ নষ্ট হয়। বন্দরের লোকজনের অনিয়মের কারণে ক্ষতির শিকার হবো আর তারা ক্ষতিপূরণ দেবেন না এটা মানা যায় না।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বন্দরের অব্যবস্থাপনা নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার অভিযোগ দিলেও তেমন কোন কাজ হয় না।
স্থানীয় ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী জমীর হোসেনের অভিযোগ, প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের আগে বন্দরের পণ্যাগার থেকে চুরি বেড়ে যায়। আর যখন চুরির পরিমাণ বেড়ে যায় তখন তা থেকে বাঁচতে পণ্যাগারের কর্মচারীরা ইচ্ছা করেই পণ্য গুদামে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে প্রচার করে বিদ্যুতের সট সার্কিটে আগুন লেগেছে। ধামাচাপা পড়ে যায় চুরির ঘটনা। গত দুই দশকে এ নিয়ে ৬ বার বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডে পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছে কয়েকশ’ আমদানি কারক। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ ক্ষতি পূরণ পায়নি।
আমদানি কারক চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের মালিক বিলাল চৌধুরী জানান, বেনাপোল বন্দরের পণ্য গুদামে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে তারও ১৫ লাখ টাকার আমদানি পণ্য পুড়ে যায়। তিনি ক্ষতি পূরণের আবেদন করলেও আজ পর্যন্ত পাননি। এমন কি বন্দর কর্তৃপক্ষ আগুনের কারণও তাকে জানায়নি। ওই ঘটনার পর থেকে পুঁজি হারিয়ে ব্যবসা বন্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) রেজাউল করিম বলেন,কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থের জন্য আলাদা পণ্যাগার রয়েছে। কিন্তু পণ্যাগারের লোকজন অনিয়ম করে কেন দাহ্য পদার্থ রেখেছিল সে বিষয়েও তদন্ত চলছে। আর আমদানি কারকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোন নিয়ম বন্দরের নেই বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৭
আরআই