আর এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ এলাকার জনগণ ও ব্যবসায়ীরা স্থানীয় করুনানগর বাজারে বিক্ষোভও করেছেন। তাদের দাবি, মামলাটি সম্পূর্ণ সাজানো, পাওনা টাকা চেয়ে আইনি নোটিশ দেওয়ায় উল্টো ধর্ষণ মামলা করা হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও লোকজন জানান, ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে গত ২০ মে উপজেলার চরজাঙ্গালিয়া গ্রামের অঞ্জন চন্দ্র দাস আবু তাহেরের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা ধার নেন। এ সময় তিন মাসের মধ্যে ওই টাকা পরিশোধ করার কথা বলে নিজের সোনালী ব্যাংক কমলনগর শাখার (হিসাব নম্বর-১০০০১৩১৫৯) একটি চেক দেন তিনি।
পূর্ব নির্ধারিত ২২ আগস্ট তাহের চেক নিয়ে ব্যাংকে গিয়ে দেখেন, ওই হিসেবে কোনো টাকা নেই। ব্যাংক থেকে চেকটি ফেরত দেওয়া হয়। পরে ২৭ আগস্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চেকটি বাতিল করেন। পরদিন তাহেরের পক্ষে লক্ষ্মীপুর জজ কোর্টের আইনজীবী আব্দুল ওদুদ টাকা চেয়ে অঞ্জন চন্দ্র দাসকে আইনি নোটিশ পাঠান।
ওই সময় ৩০ দিনের মধ্যে পাওনা পরিশোধ করার জন্য বলা হয়। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে অঞ্জন।
এ বিষয়ে মামলার বাদী ও অঞ্জনের ভাই সুদেব চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের সঙ্গে তাহেরের লেনদেনের ঘটনা সত্য। ধষর্ণের শিকার হওয়ার বিষয়টা আমায় জানানোর পর আমি বাদী হয়ে মামলা করেছি। ’
এদিকে মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭ টার দিকে অঞ্জনের স্ত্রী বাড়ির পাশে পুকুর ঘাটে গেলে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা আবু তাহেরসহ অজ্ঞাত ৩-৪ জন তার মুখ চেপে ধরে। পরে জোরপূর্বক মুখ বেঁধে তাহের তাকে ধর্ষণ করেন।
পরে ওই নারীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর অঞ্জনের ভাই সুদীপ চন্দ্র দাস বাদী হয়ে করা মামলায় আবু তাহের ছাড়াও অজ্ঞাত পরিচয়ের ৩-৪ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
কমলনগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মহিন উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এ মামলার প্রধান আসামি তাহেরকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আর ভুক্তভোগী নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়।
এদিকে ঘটনাকে ষড়যন্ত্র দাবি করে পুলিশ হেফাজতে থাকা আবু তাহের সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাওনা টাকা চাওয়ায় আমাকে মিথ্যা মামলায় জেলে আসতে হয়েছে। গ্রেফতার করার পর থানায় নিয়ে পুলিশ বেদম পিটিয়েছে। এখনও হাত-পাসহ পুরো শরীরের ফোলা-জখম রয়েছে। আমি মামলাটির নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। ’
তবে পুলিশ হেফাজতে আসামিকে পেটানোর অভিযোগ অস্বীকার করে এসআই মহিন উদ্দিন বলেন, অভিযোগ সঠিক নয়। মামলাটি বেশ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হবে না।
যোগাযোগ করা হলে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটিকে এখনই ধর্ষণ বলা যাবে না। তবে প্রাথমিকভাবে যৌনাঙ্গে আঘাতের আলামত পাওয়া গেছে। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে, প্রতিবেদন হাতে পেলেই বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। ’
এদিকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক মামলা’য় ব্যবসায়ী তাহেরকে গ্রেফতার ও হয়রানির প্রতিবাদে বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) করুনানগর বাজারে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী।
তারা বলছেন, বলেন, প্রতিদিনিরে মতো রোববারও বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত করুনানগর বাজারে তাহের দোকানে ব্যস্ত ছিলেন ওইদিন ছিল সাপ্তাহিক হাটবার। অথচ মামলায় বলা হয়েছে, ওইদিন সন্ধ্যায় চরজাঙ্গালিয়া গ্রামে তিনি ধর্ষণ করেছেন।
এঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ সময়: ২২০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
এমএ/