গত ২৬ আগস্ট মংডুর বলিবাজার গ্রামে আগুন দেয় আরাকান আর্মি। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তাদের ঘর-বাড়ি।
মা ও ভাইয়ের সঙ্গে পালিয়ে আসার সময় পেছন থেকে গুলি করে সেনারা। এতে হাতে ঘাতকের বুলেটে আহত হন ভাই মনি আলম (১৯)। বালুখালি রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে আহত ভাই-বোনকে দেখাশোনা করছেন তাদের বিধবা মা। ত্রাণের সামগ্রী এনে মুখে তুলে দিচ্ছেন।
রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মেয়েদের সাধারণত অল্প বয়সে বিয়ে হয়, সন্তান জন্ম দেয়। এ ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম রেহানা বেগম।
রেহেনার মা উম্মে হাবিবা বলেন, ‘সংসারে অনেক অভাব ছিলো। সময়মতো বিয়ে দিতে পারিনি। পাত্র দেখা-দেখি চলছিলো। বেশি যৌতুক চায় বলে মিলছিলো না। আগুনের পোড়ার পর থেকে জ্বরে ভুগছে মেয়েটা। উরুর ক্ষতের কারণে হাঁটা-চলা করাও সমস্যা’।
অত্যাচারী মিয়ানমার সেনার ছোঁড়া বুলেটের ক্ষতস্থানে এখনো ব্যান্ডেজ বাধা রেহেনার ছোট ভাই মনি আলমের হাতে। যৌবনের দুরন্তপনা জীবন থেকে যে পড়ে গেছেন কঠিন বাস্তবতার বেড়াজালে- তা তার শুকনো মুখ দেখেই বোঝা যায়।
পালিয়ে আসার বর্ণনা দিয়ে মনি বলেন, ‘কোরবানির ঈদের আগের ঘটনা, দিনটি ছিলো শুক্রবার। নামাজের আগ মুহূর্তে বাড়িতে আগুন দেয় মগরা। একটু পরেই আসে সেনারা। দিকশূন্য হয়ে ছুঁড়তে থাকে গুলি। পালাতে গিয়ে মেজ ভাই গুলি খান। ঘরে পুড়ে মরেন ভাবি ও ভাইয়ের দুই ছেলে’।
‘বোনের গায়েও আগুন লাগে, হাত-উরু পুড়ে যায়। ঝোঁপে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচায় আমি। আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়ে ঈদের আগের দিন সীমান্ত পাড়ি দেওয়া শুরু করি। তুমব্রু সীমান্তবর্তী গ্রাম শিলখালি পার হওয়ার সময় হাতে গুলি লাগে। টানা সাতদিন হেঁটে বাংলাদেশে আসি’।
গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান সলভেশন আর্মি (আরসা) থানা ও পুলিশ ঘাঁটিতে হামলা চালায়৷এরপর থেকেই সহিংসতায় পুড়ছে রাখাইন রাজ্য। রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা ও নির্যাতন চালায় সেনাবাহিনী, জ্বালিয়ে দেয় গ্রামের পর গ্রাম। এমনকি সেনা সদস্যের হাতে ধর্ষণের শিকার হয় নারীরা। এরই ফলশ্রুতিতে শুরু হয় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশের জনস্রোত।
আরসার ওই ঘটনার পর থেকে মংডুর কোনো গ্রামের বাসিন্দা মনি আলম বলছিলেন, ‘২৪ আগস্টের পর আর্মির অত্যাচারের সীমা ছিলো না। প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে দিন কাটতো। আজ ওকে তো কাল তাকে মারছে। আরেকদিন শুনতাম, গুলি করে এক গ্রামের ৫০ জনকে মেরেছে। হাজার হাজার ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ভয়ঙ্কর সে দিনগুলো’।
জাতিসংঘ ও সরকারের তথ্যমতে, ২৪ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত চলমান ওই সহিংসতায় নতুন করে প্রায় চার লাখ ১৭ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে। তবে স্থানীয়দের মতে, নতুনদের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ১৫টি ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
এমসি/এএসআর