ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই শতাধিক শিশুর জন্ম

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুই শতাধিক শিশুর জন্ম কক্সবাজারের উখিয়ায় আঞ্জুমান পাড়ার পালংখালী অস্থায়ী ক্যাম্পে সম্প্রতি জন্ম নেয় এক শিশু। ছবি: দীপু মালাকার

ঢাকা: মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে দুইশোর বেশি মা বাংলাদেশের আশ্রয় কেন্দ্রে নিরাপদে সন্তান প্রসব করেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর রোহিঙ্গা মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করছে। পাশাপাশি চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর স্বাস্থ্যসেবার জন্য অতিরিক্ত ১২টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নির্মাণ এবং বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে মন্ত্রণালয়।

সরকারের হিসাবে বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত চার লাখ ২৪ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন।

রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়ের মমতা দিয়ে, মমত্ববোধ দিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। ক্যাম্পে ১৬-১৮ জন গর্ভবতী নারী রোহিঙ্গা রয়েছেন।

তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা নাই। মহিলারা জানেন না কীভাবে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৭৩ জন নারী নরমাল ডেলিভারি হয়েছে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ার বলেন, এই সংখ্যা দুই’শ ছাড়িয়ে গেছে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ১০টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে চিকিৎসকদের উখিয়া ও টেকনাফে সংযুক্ত করা হয়েছে। মেডিকেল টিমগুলো ৮-১০ প্রকার ওষুধ এবং তিন ধরনের অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী (কনডম, খাবার বড়ি, তিন মাস মেয়াদি ইনজেকশন) বিতরণ করছে।

শরণার্থীদের ক্যাম্পগুলোতে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সম্পর্কিত ধারণা দিতে ৮৬ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান মোস্তফা সারোয়ার।

গর্ভবর্তী মায়েদের প্রসব পূর্ববর্তী শারীরিক চেকআপ, নিরাপদ প্রসব সেবা এবং প্রসব পরবর্তী সেবা নিশ্চিত করার জন্য উখিয়া ও টেকনাফে ৬ কেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টা প্রসব সেবার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে ১ জন স্যাকমো, ১ জন এফডব্লিউভি, ২ জন ডিপ্লোমা মিডওয়াইফ নিয়োজিত আছে। এছাড়াও জরুরি প্রসুতি সেবার প্রয়োজন হলে অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র এবং কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা আছে।
 
পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক আরও বলেন, রোহিঙ্গা শিশুদের ইপিআই টিকা প্রদানের জন্য ২০ জন পরিদর্শককে স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে সমন্বয় করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিবার পরিকল্পনা সেবা এবং মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এজন্য দুটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
 
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. এনায়েত হোসেন জানান, আঘাতপ্রাপ্ত দুই হাজার ৩৬৪ জন, ডায়রিয়ায় সংক্রামণের জন্য তিন হাজার ৫২০ জন, শ্বাসনালীর সংক্রমণে সাত হাজার ৯৬৯ জন ও চামড়ার অসুখে দুই হাজার ৩৩৫ জনকে এ পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। শিশুদের জন্য লাইন ডিরেক্টররা প্রয়োজনীয় খাদ্য নিশ্চিত করতে কাজ করছেন।
 
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, শরণার্থীদের জন্য নবনির্মিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ১২টি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে, যেগুলোর প্রত্যেকটি কেন্দ্রে পরিদর্শকসহ চিকিৎসক, নার্স, ধাত্রী ও প্যারামেডিক থাকবে। প্রতিটিতে ৫০ হাজার করে রোহিঙ্গা চিকিৎসা সুবিধা পাবে।
 
রোহিঙ্গাদের জন্য ৪০টিরও বেশি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে। এরমধ্যে বিভিন্ন সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৮টি প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার ১৪টি, স্থানীয় বেসরকারি সংস্থার ৯টি ও জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট ৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
 
রোহিঙ্গাদের জন্য উখিয়া ও টেকনাফের ৫০ শয্যার হাসপাতাল দুটিকে আরো ৫০টি করে অস্থায়ী শয্যা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
 
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, চিকিৎসাখাতে সরকারি চাকরিজীবী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একদিনের বেতন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করবে।
 
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।