ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ছেলেদের সম্পত্তি-বিরোধেই মায়ের হাতে ভিক্ষার ঝুলি!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
ছেলেদের সম্পত্তি-বিরোধেই মায়ের হাতে ভিক্ষার ঝুলি! বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে 'গুণধর' ৫ ছেলে যারা প্রতিষ্ঠিত, অথচ মা করেন ভিক্ষা; ছবি:বাংলানিউজ

বরিশাল: পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তির বণ্টন নিয়ে সন্তানদের মধ্যে চলছে যে তুমুল পারিবারিক বিরোধ, তার জের ধরেই মায়া-মমতা, আদর-যত্ন আর ভালোবাসাবঞ্চিত ছিলেন সত্তরোর্ধ্ব অসহায়-অসুস্থ মা মনোয়ার বেগম। পেটের দায়ে তাকে হাতে তুলে নিতে হয়েছিল ভিক্ষার ঝুলি।

বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি শফিকুল ইসলামের হস্তক্ষেপে অবশেষে ৫ ছেলেকে ডেকে এনে বৃদ্ধা মায়ের প্রতি তাদের অনাদর ও অবহেলার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।  

সন্তানরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের দরিদ্র কৃষক মৃত আইয়ুব আলীর স্ত্রী অসহায় বৃদ্ধা মনোয়ার বেগমকে ভিক্ষা করে খেতে হয়।

ক্রমাগত অনাদর-অবহেলায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি অফিসের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত প্রেসব্রিফিংয়ে ডিআইজি মোঃ শফিকুল ইসলাম-বিপিএম এতথ্য জানান।

এসময় তিনি বলেন, ডিআইজ অফিসের পুলিশ সুপার মোঃ হাবিবুর রহমান প্রামাণিকের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ ও মোফিজুল ইসলামকে নিয়ে বৃদ্ধা মনোয়ার বেগমের ঘটনায় তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর যদি দেখা যায় ছেলেরা দোষী তাহলে বৃদ্ধা মা ইচ্ছা করলে মামলা করতে পারবেন।

পাশাপাশি ওই বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসা এবং তার জীবিত থাকাকালীন সকল ব্যয়ভার পুলিশের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হবে বলে জানান ডিআইজি।

ডিআইজি আরো জানান, আজ বৃদ্ধা মায়ের ৫ ছেলেকে ডিআইজি কার্যালয়ে ডেকে এ বিষয়ে তাদের সাথে কথা বলেন তিনি। ৮ শতাংশ জমিজমা নিয়ে পারিবারিক বিরোধের জের ধরেই বৃদ্ধা মায়ের আজ এমন অনাদর-অবহেলা। এমনটাই জানিয়েছেন তার ছেলেরা।  

তিনি বলেন, পাঁচ ভাইদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ছোট ভাই গিয়াসউদ্দিন মায়ের কিছুদিন ভরণ পোষন করতেন। এর আগে বৃদ্ধা মাকে দেখাশোনা করতেন মেজভাই। জমি নিয়ে ছোট ভাই গিয়াসের সাথে কোন্দল ছিল অপর চার ভাইয়ের। চার ভাইয়ের অভিযোগ যে, তারা টাকা পাঠাতে চাইলেও ছোট ভাই গিয়াস টাকা দিতে বারণ করতেন। তবে ছোট ভাই গিয়াসউদ্দিন আমাদের জানিয়েছেন, অপর চার ভাই এবং বোন স্কুলশিক্ষিকা মরিয়ম সুলতানা মায়ের জন্য কোনো টাকা পাঠাতেন না।

এদিকে অযত্ন ও অবহেলার কারণে বৃদ্ধা মা ভিক্ষা করতে হয় বলে দাবি করেন বৃদ্ধার ৪র্থ ছেলে ও অটোরিক্সাচালক গিয়াসউদ্দিন। তবে ৫ম ছেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত এ.এসআই নেছারউদ্দিন ও মেজ ছেলে বরিশাল রেঞ্জ পুলিশে কর্মরত কনস্টেবল মোঃ জসিমউদ্দিন দাবি করেন তাদের মা কখনও ভিক্ষা কননি।

তারপরও পুরো বিষয়টি নিয়ে সন্তানরা সবাই অনুতপ্ত হয়ে মায়ের দায়িত্ব গ্রহণে সম্মতির কথা জানিয়েছেন ডিআইজিকে।

উল্লেখ্য, সন্তানরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও অসহায় ওই মাকে পেটের দায়ে জীবনের জন্য হাত পাততে হয়েছে মানুষের দ্বারে। কিছুদিন আগে ভিক্ষা করতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গিয়ে কোমরের হাড় ভেঙ্গে যায় তার। সেই থেকে তিনি বিনা চিকিৎসায় একটি ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবন-যাপন করছিলেন। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য(বাবুগঞ্জ-মুলাদা) অ্যাড টিপু সুলতানের নজরে এলে তিনি উদ্যোগ নিয়ে বৃদ্ধ মনোয়ারা বেগমকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত সোমবার ভর্তি করান।

এর পরপরই খবর পেয়ে বরিশালের ডিআইজি, এসপি এবং জেলা প্রশাসক তাকে দেখতে যান এবং তিনজনে ৩৭ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেন। সমাজসেবা অধিদপ্তর বৃদ্ধার ওষুধের খরচ বহন করা শুরু করে।

এ ঘটনার পাশাপাশি ১৮ সেপ্টেম্বর বৃদ্ধার মেয়ে ভূতেরদিয়া নবারুণ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মরিয়ম সুলতানাকে মায়ের প্রতি অবহেলা করার জন্য কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে না এই মর্মে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়।

বৃহস্পতিবার ডিআইজি অফিসে ডাকা হয় তার ৫ ছেলে সন্তান অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য ফারুখ আহম্মেদ, পুলিশ কনস্টেবল জসিম উদ্দিন, খুলনার খালিসপুরের চায়ের দোকানী মো: শাহাবুদ্দিন, ঢাকার মালিবাগে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে কর্মরত মো: নেছারউদ্দিন ও অটো চালক গিয়াস উদ্দিনকে।

বাংলাদেশ সময়:১৬৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭।
এমএস/ জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।