ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চালের খুচরা বাজারে কমেনি দামের আগুন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
চালের খুচরা বাজারে কমেনি দামের আগুন চালের খুচরা বাজারে কমেনি দামের আগুন; ছবি:আনোয়ার হোসেন রানা

ঢাকা: গত এক মাসে চালের দামের ব্যাপক বৃদ্ধির কারণে ক্ষুব্ধ ও নাকাল সারাদেশবাসী। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের অভাবী মানুষ। হঠাৎ করে চালের এই দাম বৃদ্ধির পর তা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার কিছু পদক্ষেপ নিলেও এর এখন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ আছে চালের পাইকারি বাজারে। খুচরা বাজারে খুব একটা সুখবর নেই।

সম্প্রতি পাইকারি চালের বাজারে দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা হারে কমলেও এখনও খুচরা বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়ে নি। বাজারে মিনিকেট ৬৮ থেকে ৭০ টাকা, বিআর-২৮ ৬০ টাকা এবং পোলাও চাল প্রতি কেজি ৯৫ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মিরপুর, কাওরানবাজার ও মতিঝিল এলাকা ঘুরে দেখা যায় এ চিত্র।

মিরপুর-১ এর কাচাবাজারের মুদি দোকান ব্যবসায়ী সিরাজুল জানান, পাইকারি বাজারে দাম কমলেও আমরা তো আগে বেশি দামে চাল কিনে ফেলেছি। এখন তো কম দামে বিক্রি করা সম্ভব না। খুচরা বাজারে দাম আরও দুই দিন পর কমবে। এই আগের কেনা চাল বিক্রি শেষ হলে তারপর কমবে।

‘পাইকারি বাজারে চালের দাম কমার কারণে খুচরা বাজারে দাম কতটা কমতে পারে?’---এমন প্রশ্নের জবাবে কাওরান বাজারের আরেক খুচরা চালবিক্রেতা আজিজ জানান, খুচরা বাজারে ৪ থেকে ৫ টাকা প্রতি কেজিতে কমবে। তবে ক্রেতাদের যে নাজুক অবস্থা দেখছি তাতে দাম আরও কমা প্রয়োজন।

এদিকে ভিন্ন কথা বললেন সেগুনবাগিচা এলাকার মুদি দোকানদার জীবন। ৫০ কেজির চালের বস্তায় এখন ৭৫০ গ্রাম কম থাকে। কিন্তু দাম সেই ৫০ কেজিরই রাখা হয়। যেমন একটা বস্তা পাইকারি বাজার থেকে ৩১৫০ টাকায় কিনে পরিবহন খরচসহ ৩২০০ টাকা হয়। যদি আমি পুরো বস্তাসমেত বিক্রি করতে পারি তাহলে ভালো লাভের মুখ দেখা যায়। কিন্তু খুচরা বিক্রি করতে গেলে আমাদের দাম বাড়িয়ে বেচতে হয়। নইলে লাভ কমে যায়।

কাওরানবাজারের পাইকারি বিক্রেতা স্বপনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এভাবেই চলে আসছে অনেকদিন। এটা আজকের নতুন বিষয় না।

তবে দাম ৫ টাকা কমার কথা থাকলেও কেবল এই কারণে ৪ টাকা হারে কমতে পারে বলে জানিয়েছেন বেশিরভাগ খুচরা চাল ব্যবসায়ী।

এদিকে সরকারের কম দামে ওএমএস-এ চাল বিক্রির প্রক্রিয়ায় সন্তুষ্ট নন বেশিরভাগ ক্রেতা। বেশিরভাগ মানুষ আতপ চালের ভাত খান না। অথচ ওএমএস-এ আতপ চাল দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে রাজধানীবাসীর কাছ থেকে। আর এই আতপ চালই সরকারের পক্ষ থেকে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে করে অনেক মানুষই হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তবে একেবারে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী মানুষদের জন্য অনেক বড় ভরসা এই ৩০ টাকা কেজি দরে সরকারের চাল বিক্রির উদ্যোগ।

মিরপুরের তালতলায় ওএমএস প্রকল্পের ট্রাকের কাছে গিয়ে দেখা যায় প্রায় সবই দরিদ্র মানুষজন। যাদের পক্ষে ৬০ কিংবা ৭০ টাকা কেজি দরে চাল কিনে ভাত খাওয়া সম্ভব না। এই দামে চাল কিনতে হলে মারাত্মক টানাটানির মধ্যে কখনো এক বেলা, দু’বেলা খেয়ে দিন পার করতে হবে তাদের।  

তেমনই একজন নাসিমা। যিনি অন্য মানুষের বাসায় বুয়া হিসেবে কাজ করেন। তিনি বললেন, ভাত খাইলেই শান্তি। অত দাম দিয়া ভাত খাওয়া সম্ভব না। তাই আতপ চাল হইলেও খাই। দুইবেলা খাই। মাঝখানে কয়দিন টাকা ছিলো না তাই একবেলা খাইছি। যেসব জায়গায় কাজ করি তারাও কেউ বেশি ভাত রান্না করায় না যে খামু। আর সবকিছুর দাম বেশি বইলাই টাকা তাড়াতাড়ি শেষ হয়।

মতিঝিলে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শাহানূর জানান, পাইকারি বাজারে চালের দাম কমেছে শুনেছি। আশা করছি দাম কমবে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করতে পারি না। কী থেকে কী হয় কোনো ঠিক নাই। তাই আশায় আছি। আর ওএমএস প্রক্রিয়া থেকে চাল কিনে ওই ভাত তো আমি নিজেই খেতে পারি না। বাসায় অন্যরা খাবে কিভাবে?
বাংলাদেশ সময়:১৩২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
এমএএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।