ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সোয়া ৪ লাখ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ, মানবিক সহায়তায় বাংলাদেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
সোয়া ৪ লাখ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ, মানবিক সহায়তায় বাংলাদেশ সংবাদ সম্মেলনে মোফাজ্জল হেসেন চৌধুরী মায়া

ঢাকা: গত ২৫ দিনে মিয়ানমার থেকে সোয়া চার লাখ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে আন্তর্জাতিক সাহায্যে মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

সম্পূর্ণ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এলেও শিগগিরিই মিয়ানমার তার নাগরিকদের ফেরত নেবে এটাই প্রত্যাশা বাংলাদেশের।

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হেসেন চৌধুরী মায়া।

তিনি বলেন, গত ২৫ আগস্ট থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনিবন্ধিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গার সংখ্যা চার লাখ ২৪ হাজার। তারা প্রতিনিয়ত স্থান পরিবর্তন এবং বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করায় প্রকৃত সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে। এ পর্যন্ত বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের সংখ্যা পাঁচ হাজার ৫৭৫ জন।

মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিগত কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এসব নাগরিক দেশের অভ্যন্তরে সম্পূর্ণ অবৈধভাব মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

২৫ আগস্টের পর নতুন করে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী ও সাগর পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। নারী-শিশু ও অসহায় অনুপ্রবেশকারীদের করুণ চিত্র বিশ্ববাসীর নজরে এসেছে, বাংলাদেশ ও বিশ্ববাসী এ নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন। অসহায় এসব মানুষের দুঃখ-দুর্দশা মানবিক সংকট তৈরি করেছে।

“আমরা সম্পূর্ণ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করছি। এতো বিশাল সংখ্যক বিদেশি নাগরিকের আশ্রয়দান বাংলাদেশের জন্য কষ্টদায়ক হলেও এ মানবিক সংকটের সময় রোহিঙ্গাদের সাময়িক সময়ের জন্য সীমান্তবর্তী কুতুপালং ক্যাম্পের পাশে নতুন ক্যাম্প স্থাপন করে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাদের জন্য বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব সব ধরনের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ”

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মন্ত্রী বলেন, “সম্পূর্ণ মানবিক কারণে আমরা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছি। অতি দ্রুত মিয়ানমার তার নাগরিকদের ফেরত নেবে এইটাই আমাদের প্রত্যাশা। রোহিঙ্গা সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য কূটনৈতিক পর্যায়ে সকল ধরনের যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। আমার বিশ্বাস বিশ্ববাসী একমত হবেন। ”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য ওআইসিভুক্ত দেশসমূহকে আহ্বান জানিয়েছেন উল্লেখ করে মায়া বলেন, “তাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সকল দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, আজারবাইজান, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মালয়েশয়া, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশ তাতে সমর্থন দিয়েছে। ”

মন্ত্রী জানান, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং এবং টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া ক্যাম্পে ৩৩ হাজার ৫৪২ জন নিবন্ধিত রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। বিগত ২৫ বছর ধরে এই নিবন্ধিত শরণার্থীদের কার্যক্রম ইউএনএইচসি আর, ডব্লিউএফপি এর সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় তত্ত্বাবধান করে আসছে।

পূর্বের সহ বর্তমানে ১৪টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা বসবাস করে আসছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে থাকা চার লক্ষাধিক মানুষকে খাদ্য, চিকিৎসা, নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে একটি স্থানে অস্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ”

তিনি বলেন, “এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন এবং ইউএনএইচসিআর, আইওএম, বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি, ইউএএফপিএ, ইউনিসেফ, এসিএফ-সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা নতুন আগমনকারী রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা প্রদান করছে। এ পর্যন্ত দেশ-বদেশি সংস্থা থেকে প্রায় ২৫০ মেট্রিকটন চাল পাওয়া গেছে। এছাড়া ২০ মেট্রিকটন আটাসহ অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী পাওয়া গেছে।

ডব্লিউএফপি আগামী চার মাস চার লাখ পরিবারের খাবার সহায়তা করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইউএনএইচসিআর খাদ্য, চিকিৎসা, আশ্রয়সহ সার্বিক সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ”

কুতুপালং এলাকায় প্রায় দুই হাজার একর জায়গায় ১৪ হাজার শেড নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ত্রাণ বিতরণ সুষ্ঠু করতে ১৩টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছ। তবে বিচ্ছিন্নভাব যেন কেউ ত্রাণ না নেয় সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

আগত সবাইকে নির্মাণাধীন ক্যাম্পে নিয়ে আসার আগ পর্যন্ত খাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আটটি স্থানে প্রতিদিন এক বেলা রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। দুর্যোগ মন্ত্রণালয় ৫০০ মেট্রিকটন জিআর চাল ও নগদ ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

ডব্লিউএফপি ইতোমধ্যে উখিয়ায় ১৪টি স্থানে ত্রাণ সামগ্রী সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ শুরু করেছে। ৩৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর প্রতিদিন ১৪ হাজার ইউনিট খাবার পানি সরবরাহ করছে এবং ১০০ টিউবঅয়েল স্থান ও ৫০০ অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করেছে। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৮ ঘণ্টায় ৬৪ হাজার লিটার খাবার পানি সরবরাহ করতে পারে এমন চারটি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট কাজ শুরু করেছে।

ক্যাম্পে যোগাযোগের জন্য নতুন রাস্তা নির্মাণ, চট্টগ্রাম থেকে ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণ করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছে দিতে সেনাবাহিনী মোতায়েন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণের পুলিশ ও বিজিবি কাজ করছে।

এক প্রশ্নের জবাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সমন্বয় করে কাজ করবে। আশা করছি যতদিন প্রয়োজন তারা সাহায্য দেবে। না খেয়ে কেউ মারা যায়নি, এটাই বাংলাদেশের সাফল্য। অনিবন্ধিতদের নিবন্ধন করতে দুই মাস লাগবে বলে জানিয়েছেন সচিব।

সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ