ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

চর্মরোগ-নিউমোনিয়ায় কাহিল রোহিঙ্গারা 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
চর্মরোগ-নিউমোনিয়ায় কাহিল রোহিঙ্গারা  চর্মরোগ-নিউমোনিয়ায় কাহিল রোহিঙ্গারা। ছবি: বাংলানিউজ

কুতুপালং ক্যাম্প, উখিয়া, কক্সবাজার থেকে: মিয়ানমারের চলমান সহিংসতায় রাখাইন রাজ্য থেকে জীবন বাঁচাতে স্বামী ও ছয় সন্তানসহ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন আঞ্জুম। তারা থাকতেন সেখানকার গারবিলা গ্রামে। স্বামী আব্দুস সালাম কৃষিকাজ করতেন। 

শিলকালি সীমান্ত দিয়ে এসে কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে পরিবারটি। কিন্তু এখনো থাকার জন্য ঘর তৈরি করতে পারেননি।

এক বছরের ছোট মেয়ে সাহারাকে কোলে নিয়ে ক্যাম্প এলাকায় একটি ছাউনির নিচে বসে মা আঞ্জুম। সাহারার মাথায় ঘা হয়েছে, বেশ খানিকটা জুড়ে দগদগ করছে। ব্যথায় কাঁদছে শিশুটি।
 
ছোট এ শিশুটিকে এখনো কোনো চিকিৎসা দিতে পারেননি মা আঞ্জুম। দেখানো যায়নি কোনো চিকিৎসককেও। অন্যদিকে কাদা পানি পাড়াতে পাড়াতে আঞ্জুমেরও পায়ে ঘা হয়েছে। পা কেটে গিয়ে হয়েছে ইনফেকশনও।
 
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশিরভাগ মানুষের এরই মধ্যে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। কারো হাতে-পায়ে ঘা, আবার কারো মাথায় হয়েছে ফোঁড়া। বয়স্করাই চর্মরোগে পড়েছেন বেশি বিপদে।  
 
রোহিঙ্গা শরণার্থী রুবুর বয়স প্রায় ৫০ বছর। মিয়ানমারের বলিপাড়া থেকে পালিয়ে এসেছেন তিনি। তার হাতে ও মুখের একপাশে ঘা হয়েছে।

বাংলানিউজকে রুবু বলেন, ‘এক ঘরে এতো মানুষ থাকছে। না আছে পানি, না আছে পায়খানার তেমন কোনো ব্যবস্থা। সবদিকে ছড়িয়ে আছে ময়লা। কিভাবে কোনদিক থেকে কি লাগছে, কে জানে। হাতে হয়েছে ঘা, মুখের ভেতরটাও কেমন জানি লাগছে’।
 
চর্মরোগের পাশাপাশি ঠাণ্ডাজনিত রোগও বাড়ছে ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের মাঝে।  

মিয়ানমারের মেরুলা থেকে এসে খালাআনু আশ্রয় নিয়েছেন কুতুপালং ক্যাম্পে। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে তাকে। এতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত তিনি। দিনে দিনে তার শরীরের অবস্থা খারাপের দিকেই যাচ্ছে। ঘর থেকে বের হয়ে পাহাড় বেয়ে ক্যাম্প পর্যন্ত যাওয়ারও শক্তি নেই খালাআনুর।  
 
খালা আনু বাংলানিউজকে বলেন, ‘পলিথিনের ফাঁক দিয়ে বৃষ্টির পানি ঘরে ঢুকে কাঁথা-বালিশ সব ভিজে যায়। ভেজা অবস্থায়ই রাতে মাঝে মধ্যে বসে থাকতে হয়। এতে হয়তো নিমোনিয়ায় হইছে। একবার ক্যাম্পে গিয়ে চিকিৎসক দেখাইছি। কিন্তু বুড়া মানুষ এতো দূর যাইতে পারি না। আর সব রাস্তায় কাদা হয়ে আছে। পড়ে গিয়ে পা ভাঙলে কি করবো?’
 
গণস্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিকেল ক্যাম্পে সব ধরনের পর্যাপ্ত ওষুধ আছে বলে জানিয়েছেন ক্যাম্পটির চিকিৎসক ডা. বেগম নূর জাহান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী আসছেন। তাদের মধ্যে চর্মরোগ আর ঠাণ্ডাজনিত রোগ নিয়েই আসছেন। বিশেষ করে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে থাকলে চর্মরোগ হওয়াটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় পানিবাহিত রোগ বেড়ে গেছে’।

‘তবে আমাদের কাছে সব ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। কেউ এসে ফিরে যাবেন না’।
 
জাতিসংঘ ও সরকারের তথ্যমতে, মিয়ানমারের চলমান সহিংসতায় গত প্রায় একমাসে নতুন করে প্রায় চার লাখ ১৭ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে। তবে স্থানীয়দের মতে, এ সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ১৫টি ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।

** কলার মোচা খেয়ে দিন কাটছে গর্ভবতী মায়েদের 
**সীমান্তের ওপারে নবজাতক হোসেনের ঘর

বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
আরআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।