ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কলার মোচা খেয়ে দিন কাটছে গর্ভবতী মায়েদের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
কলার মোচা খেয়ে দিন কাটছে গর্ভবতী মায়েদের গর্ভবর্তী মায়েরা- ছবি: ঊর্মি মাহবুব

কুতুপালং থেকে: গর্ভবতী মা’দের বরাবরই সবাই নেন বিশেষ খেয়াল। বিশেষ খাবার, বিশেষ সেবা দিতে ব্যস্ত থাকেন গর্ভবতী মা’য়েদের পরিবার। কিন্তু কুতুপালংরোহিঙ্গা ক্যাম্পে কলার মোচা খেয়ে দিন কাটছে গর্ভবতী মায়েদের।  

আর এ  রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রয়েছেন ১০ হাজারের বেশি গর্ববতী মা। বৃষ্টি, শ্যাত শ্যাতে পরিবেশে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই।

বিপাকে পড়েছেন গর্ভবতী মায়েরা।  

কেমন কাটছে এসব গর্ভবতী মা’দের দিন। মাথার ওপর ছাদ নেই, পেটে খাবার নেই। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রতি মুহুর্তে নানা রোগের জীবানুতো রয়েছেই। আর পুষ্টিকর খাদ্য না পাওয়ার ফলে দুর্বল হয়ে পড়ছেন গর্ভবতী মায়েরা। পাচ্ছেন না তেমন কোনো চিকিৎসা সেবা। ত্রাণের খাবার বলতে আসছে কিছু চাল। তাও সবাই পাচ্ছেন  না। যারা পাচ্ছেন তারা বেশিরভাগই কলার মোচা সিদ্ধ করে তা খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন।
 
নূর বেগম তাদের মধ্যে একজন। কোলে দুই বছরের ছেলে মাহমুদ হাসান। স্বামী মোহাম্মদ রফিক অসুস্থ। মিয়ানমারের কুইন্নাপাড়া থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছেন কুতুপালং এর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। ১০ দিন আগে কুতুপালং ক্যাম্পে ঘর তুলেন নূর বেগম। আশেপাশের জঙ্গল ও এলাকা থেকে কলার মোচা নিয়ে এসে ভাতের সঙ্গে সিদ্ধ করে এক বেলা খাচ্ছেন। গত ১০ দিন ধরে কলার মোচাই তার খাবার বলে জানান নূর বেগম।

গর্ভবর্তী মায়েরা- ছবি: ঊর্মি মাহবুব
একই অবস্থা বুডিচং থেকে আসা রহিমার। দিন মজুর স্বামীকে নিয়ে জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছেন কুতুপালং ক্যাম্পে। ৮ মাসের গর্ভবতী রহিমা বলেন, এক বছর হয়েছে আমার বিয়ের। আমার স্বামী কবির দিন মুজুর ছিলেন। দিনে কম বেশি আয় করে ভালই ছিলাম। কিন্তু গ্রামের মগরা মানুষ মারা শুরু করলো। তাই এখানে পালিয়ে আসছি। কিন্তু পেটে বাচ্চা নিয়া ৪ দিন হেঁটেছি। কিছুতো সঙ্গে নিয়ে আসতে পারিনি। কখনো লবন দিয়ে ভাত খাচ্ছি কখনো আশেপাশের কলার কাছ থেকে মোচা কেটে আনছে স্বামী। কখনো রাস্তার পাশে থাকা শাক। কিন্তু সব জায়গায় ঘর তোলা হইছে। তেমন কোনো শাকও নেই। সেই হেঁটে রাস্তার ওপারে গ্রামে গিয়ে চেয়ে কলার মোচা নিয়ে আসে মাঝে মধ্যে। জানি না সামনে কপালে কি আছে।
 
শুধু তাই নয় কক্সবাজারের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করা হয়েছে অনেক গর্ভবতীকে মাকে। পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন এসব গর্ভবতী মায়েরা। তবে শিশু জন্মের পর তার মুখে কিভাবে খাবার তুলে দিবেন তা নিয়ে চিন্তিত গর্ভবতী মায়েরা। তাদের কষ্ট কি কোনো দিন শেষ হবে এমনই প্রশ্ন করেন মিয়ানমারের বাদেনা গ্রাম থেকে আসা সানজিদা।
 
তিনি বলেন, আমি যেমনই থাকি পেটে যে আছে সে আসবে আর দুই মাস পরে। তখন তার মুখে খাবার দিতে পারবো তো!
 
জাতিসংঘের তথ্য মতে, মিয়ানমারের চলমান সহিংসতায় বাংলাদেশে প্রায় ৪ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয়দের তথ্য মতে শুধু কুতুপালং ক্যাম্পে বর্তমানে লক্ষাধিক শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন।  এর মধ্যে প্রায় ১০ হাজার গর্ভবতী মা রয়েছেন।

**সীমান্তের ওপারে নবজাতক হোসেনের ঘর
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
ইউএম/বিএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।