ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বিআরটিসির নতুন চেয়ারম্যানের ‘ডেটলাইন ডিসেম্বর’

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
বিআরটিসির নতুন চেয়ারম্যানের ‘ডেটলাইন ডিসেম্বর’ বিআরটিসির নতুন চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া

ঢাকা: যোগদানের মাস পেরোয়নি,  এরই মধ্যে ২৬টি ডিপোর ২০টি ঘুরে এসেছেন। চিহ্নিত করেছেন সমস্যা। কেন লাভে নেই বিআরটিসি? আর আয় হলে সে টাকা যাচ্ছে কোথায়? এমনসব সমস্যা বুঝে এখন তিনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন। মূল সমস্যা যে ‘তদারকির অভাব’-এটা এরই মধ্যে সনাক্ত করেছেন।

মানুষের হাত আর চোখকে পুরোপুরি আর বিশ্বাস করছেন না। যন্ত্রের দিকে ধাবিত হয়েছেন।

এখন থেকে বিআরটিসি আয়-ব্যয়ের হিসেব হবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। ডিপোগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসেব নখদর্পণে রাখতেই ডিজিটাল ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছেন তিনি। আরআইপি ক্যামেরায় নিজের অফিসকক্ষ থেকে সব ডিপো চোখে চোখে রাখবেন। একই সঙ্গে গাড়ির যত্ন আর মেরামতও থাকবে নজরদারির মধ্যে। সব মিলিযে শৃঙ্খলা ফেরাতে তার ডেটলাইন আগামী ‘ডিসেম্বর’।

বিআরটিসিকে এভাবে গুছিয়ে নিতে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন দুদকের সাবেক মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া। তিনি বিআরটিসির নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান। বিআরটিসির কোটি কোটি টাকা মেরে যারা বসে আছেন তাদের জন্য তিনি এখন আতংক। সেই টাকা উদ্ধারের চেষ্টাও চলছে।

সম্প্রতি বাংলানিউজের সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব আশাজাগানিয়া তথ্য জানিয়েছেন বিআরটিসির নতুন চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া।

এখন থেকে বিআরটিসির আয়ব্যয় যাই হোক, সঙ্গে সঙ্গে তা দেখতে নিজ টেবিলে রাখা ল্যাপটপে চোখ রাখবেন তিনি। ডিপোগুলোতে কোনো যন্ত্র কিনলে সেটি উর্ধ্বতনদের দেখাতে হবে ওয়েব ক্যামে। কোন দেশ থেকে কত টাকার যন্ত্রাংশ কেনা হয়েছে, সেটিও প্রদর্শন করতে হবে।

এমন সব উদ্যোগে বিআরটিসির চেহারা বদলে দেবেন বলেই প্রবল আশাবাদ তার। এজন্য ডেটলাইন ডিসেম্বর ঠিক করেছেন চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ডিসেম্বরের পরে আর কোনো হিসেব পিছিয়ে থাকবে না। হালনাগদ হবে সবকিছু। কোনো বকেয়া থাকবে না। বেতনহীন থাকবেন না বিআরটিসির কোনো কর্মচারী।

২১ আগস্ট তিনি যোগ দিয়েছেন বিআরটিসিতে। যোগদানের মাস পেরোনোর আগেই ২০টি বাস ডিপো পরিদর্শন করেছেন। আরও ৬টি ডিপো ঘুরে আসবেন শিগরিই।

তার ভাষায়, ‘আগে যে সমস্যা ছিলো সেটি হলো, তদারকির অভাব। এখন থেকে বিআরটিসির ডিপোগুলোর আয় অনলাইন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে। যেদিনের আয় তার পরের দিন ১১টার মধ্যে চেয়ারম্যানের অ্যাকাউন্টে আসবে। এরই মধ্যে সব ডিপোর অনলাইন অ্যাকাউন্ট খুলেছি। আমার টেবিলের ল্যাপটপ থেকে মনিটরিং করছি কে কতো টাকা জমা দিচ্ছেন। ’

‘প্রতিদিন ২৬টি ডিপোতে যে জ্বালানিসহ আনুষঙ্গিক খরচ তা বাদে সব টাকা চেয়ারম্যানের অ্যাকাউন্টে জমা (ডিপোজিট) করতে হবে। ’

তিনি কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘গাড়ির মেরামত খাতে টাকা ব্যয়ের ভাউচার হয়, কিন্তু  মেরামত সঠিকভাবে হয় না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য এখন থেকে কোনো পার্টস গাড়িতে লাগালে তা ওয়েবক্যামে উর্ধ্বতনদের দেখাতে হবে।

এ সংক্রান্ত যে কমিটি আছে তারা এটি মনিটরিং করবে। সেখানে সারাবছর ধরে সিবিএর একজন নেতা সদস্য থাকেন। আমি এখন থেকে বলেছি, সারাবছর একজনের থাকার কোনো সুযোগ আর থাকবে না। প্রতিমাসে একজন করে ১২ মাসে ১২ জন থাকবেন।

বিআরটিসি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘বিআরটিসির কোটি কোটি টাকা পাওনা। চালকদের কাছে বিআরটিসি পায় ১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু একজন চালকের কাছে পাওনা ৫৬ লাখ টাকা। আরেকজনের কাছে ২৮ লাখ টাকা। ’
‘বিআরটিসির সম্পত্তি যারা লিজ নিয়েছেন তাদের কাছে পাওনা ২ কোটি টাকা। স্থাপনার ওপর যাদের ব্যবসা আছে তাদের কাছে পাওনা ৫ কোটি টাকা। ডিপো ম্যানেজারদের কাছে পাওনা ২০ কোটি টাকা। ’

এই ৩৭ কোটি টাকা পাওনা উদ্ধারে এখন তৎপর চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া।

সব মিলিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে বিআরটিসিকে শৃঙ্খলার মধ্যে, ডিজিট্যালাইড শৃঙ্খলার মধ্যে এনে, নিবিড় তদারকির মধ্যে এনে খোল নলচে পাল্টে দিতে চান নতুন চেয়ারম্যান। আর এক্ষেত্রে শুধু নিজের মধ্যে শুধু  নয়, গোটা প্রতিষ্ঠানের সব স্তরের সবার মধ্যে পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছেন তিনি।  

শিগগিরই এই সেক্টরে সঠিক জায়গায় অযোগ্যদের সরিয়ে সঠিক ব্যক্তিকে বসানো হবে (রিপ্লেস করা হবে) বলেই জানালেন বিআরটিসির উদ্যমী নতুন চেয়ারম্যান।

বাংলাদেশ সময়:০৮১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
এসএ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad