ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সীমান্তের ওপারে নবজাতক হোসেনের ঘর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
সীমান্তের ওপারে নবজাতক হোসেনের ঘর শাহ হোসেন-ছবি-ঊর্মি মাহবুব

কুতুপালং থেকে: পরিবারে নবজাতকের আগমন অতি কাক্ষিত, অতি আনন্দের। কিন্তু পরিস্থিতি-পরিবেশ অনেক সময় সবই যেন লণ্ডভণ্ড করে দেয়। হারিয়ে যায় নবজাত আগমনের আনন্দ। 

যখন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ হারাচ্ছেন, যখন লাখো লাখো রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে ছুটছেন তখন নবজাতকের আগমনকে স্বাগত জানানোর আনন্দ হয়ে যায় ফিঁকে। যেমনটা হয়েছে নব জাতক শাহ হোসেনের বেলায়।


 
মিয়ানমারের দুম্বাই গ্রামে জন্নতুল্লাহর ছিলো নিজের বাড়ি। ছিলো কৃষি জমি। সাইকেল ভাড়া দিতেন। স্ত্রী হাবিবা, বড় মেয়ে আরেফা আর মা ফাতেমা খাতুনকে নিয়ে ছিলো সুখের সংসার। কিন্তু মিয়ানমারে চলমান সহিংসতায় গর্ভবতী হাবিবাকে হাঁটতে হয়েছে টানা ৮ দিন। ৩০ কেজি চালের বস্তা কাঁধে নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন জন্নতুল্লাহ।
 
১৫ দিন আগেই কুতুপালং ক্যাম্পে পৌঁছান জন্নতুল্লাহর পরিবার। এরই মধ্যে প্রসব যন্ত্রনায় কাতর হয়ে পড়েন হাবিবা। আশপাশের পরিবারের সহায়তায় পৃথিবীর আলো দেখে ফুটফুটে একটি ছেলে সন্তান। নাম দেওয়া হয় শাহ হোসেন। এ পর্যন্তই যেন শেষ।

মায়ের কোলে শাহ হোসেন-ছবি-ঊর্মি মাহবুব
শাহ হোসেন জন্ম নেওয়ার পরই আশপাশের লোকজন ফিরে যায় যার যার কাজে। কেউবা ব্যস্ত ঘর তোলায়, কেউবা আবার ত্রাণ সংগ্রহের কাজে। বাবা জন্নতুল্লাহও ছুটেন ত্রাণ সংগ্রহের জন্য।
 
১৪ দিন বয়স শাহ হোসেনের। কিন্তু এখন নতুন বিপাকে পড়েছেন শাহ হোসেনের বাবা-মা। শাহ হোসেনের বাবা-মার আছে মিয়ারমারের পরিচয়পত্র। তারা বার্মিজ। কিন্তু শাহ হোসেনের জন্ম বাংলাদেশে। এখন শাহ হোসেনের নাগরিকত্ব কি হবে তাই নিয়ে যেন চিন্তার শেষ নেই দাদী ফাতেমা খাতুনের।
 
ফাতেমা খাতুন বলেন, আমার হোসেনের তো মিয়ানমারের কোনো কাগজপত্র নাই। তার জন্ম হয়েছে আমরা বাংলাদেশে আসার পর। আবার আমরা বাংলাদেশিও না। তাহলে হোসেন কোন দেশের মানুষ হবে। তবে আমাদের নিরাপত্তা দিলে অবশ্যই আমরা ফিরে যাবো দুম্বাইতে। তখন শাহ হোসেনের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে কাগজপত্র চাইলে আমরা কি বলবো?
 
নানা চিন্তায় মেঘ জমাট বেঁধেছে মা হাবিবার কপালেও। বাবা জন্নতুল্লাহ বলেন, শাহ হোসেন আমার ছেলে। আমি যে মিয়ানমারের নাগরিক তার পরিচয়পত্র আছে। আর আমার ছেলে আমার হিসেবেই যাবে সেই দেশে। সীমান্তের ওপারে দুম্বাই গ্রামে আমার ছেলের ঘর।

শাহ হোসেনের বাবা-মার পরিচয়পত্র-ছবি-ঊর্মি মাহবুব
মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাইলেও কোথায় যেন ভয় শাহ হোসেনের দাদী ফাতেমা বেগমের। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসার পথে দেশটির বেশ কয়েকটি গ্রামে একসঙ্গে অসংখ্য মানুষের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিতে দেখেছেন তিনি। মিয়ানমারের তুলাতলি, হোয়াইনক্যং গ্রামে অসংখ্য মানুষের গলাকাটা ও পোড়া লাশ পড়ে থাকতেও দেখেছেন।
 
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, প্রতিদিনই কোনো না কোনো ক্যাম্পে নবজাতকের আগমনের খবর পাওয়া যায়। কিন্তু সেই আনন্দ বিলীন হয়ে যায় সহিংসার বিষণ্নতায়।  

বিভিন্ন সংস্থার জরিপে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক সহিংসতায় বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় সোয়া ৪ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। তবে এ সংখ্যা এখন প্রায় দ্বিগুণে দাঁড়িয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
ইউএম/আরআর
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।