ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

সম্পত্তি ও পরকীয়ায় বাধা দেওয়াই কাল হলো ইভার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
সম্পত্তি ও পরকীয়ায় বাধা দেওয়াই কাল হলো ইভার

ঢাকা: স্বামীর পরকীয়ায় বাধা দেওয়াটাই মিরপুরের তাসলিমা সুলতানা ইভার (৪০) জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ইভার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওযার লিপ্সা। কিন্তু স্বামী মনিরুজ্জামান ওরফে হোয়াইট বাবু নানা কুট-কৌশল করেও সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে ব্যর্থ হন।

নিজের পথ পরিষ্কার করতে এবং স্বার্থ হাসিল করতে ফন্দি আটতে থাকেন বাবু। এক পর্যায়ে ইভাকে দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

আর সে সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন করেন গত ১৭ সেপ্টেম্বর। স্ত্রী ইভাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন বাবু।  

গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ ও মামলার প্রাথমিক তদন্তে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ইভার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার লিপ্সা ও বাবুর পরকীয়ায় বাধা দেওয়ায় ইভাকে খুন করেন বাবু। ইভার পরিবারের সদস্য ও অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলে আমরা এসব বিষয় পেয়েছি।  

গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুরের (পূর্ব মণিপুর) ১১৬৮ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলা থেকে ইভার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে উঠে আসে, ইভার মুখে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। এরপর ওইদিন রাতেই বাবুকে আটক করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় নিহত ইভার বড় ভাই আলী আশফাক বাদী হয়ে বাবু, তারা মা হামিদা আক্তার এবং তার বোন সীমাকে আসামি করে মিরপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।
 
বাবুর সঙ্গে ২০০৯ সালে ইভার বিয়ে হয়। দীর্ঘ ৮ বছরের সংসার জীবনে ইমরান (৭) ও ইফান (৪) নামে তাদের দুটি ছেলে সন্তান আছে।

ইভা ছিলেন গৃহিনী। বাবু একটি গার্মেন্টেস এ মার্চেন্ডাইজার হিসেবে চাকরি করতেন। বিযের তিন বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

ইভার পরিবারের লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরকীয়া নিয়ে প্রতিবাদ করায় ইভার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন বাবু। এমনকি ছুরি দেখিয়ে হত্যার হুমকিও দিত। এসব কারণে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন ইভা। শুধু তাই নয়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম নিয়ে বিভিন্ন সময় শ্বশুর বাড়ির লোকজনদেরও ভয়-ভীতি দেখাতেন বাবু।

ইভার বড় ভাই আলী আশফাক বাংলানিউজকে বলেন, দুই সন্তান থাকার পরেও পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বাবু। আর এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় ইভাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন বাবু। এছাড়া ইভার সম্পত্তির ওপর তার অনেক লোভ ছিল।

তিনি বলেন, আমাদের ৫ ভাইবোনের মধ্যে ইভা ছিলো সবার ছোট। ইভাসহ আমাদের তিন বোনকে বাবার রেখে যাওয়া মিরপুরের পূর্ব মণিপুরের ৫৬৪ নম্বর খালি প্লটটি দেওয়া হয়। সেখানে তারা দালান তোলার জন্য একমত হলে নানাভাবে ওই প্লটটি (জমি) বাবু একাই হাতিয়ে নেওয়ার ফন্দি করতে থাকেন। সম্পত্তির জন্যও ইভার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাতেন।

এ বিষয়ে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার পর বাবুকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। নিহতের পরিবারের দায়ের করা মামলায় দুই দিনের রিমান্ডে এনে বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মুখ খুলেছেন তিনি। তবে ইভা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল বলে দাবি করেছেন বাবু।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
এসজেএ/ইইউডি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।