রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ বিষয়ে বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হেসেন চৌধুরী মায়ার সঙ্গে মতবিনিময় শেষে এ কথা জানান বার্নিকাট।
মিয়ানমারে বর্বর অত্যাচারে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রশংসাও করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
বার্নিকাট বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা দাঁড়াবে ৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের জন্য সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে তারা। এছাড়া আশা করা হচ্ছে সহযোগিতা সংস্থা ইউএস এইডের মাধ্যমে ৪৫ মিলিয়ন ডলারেরও খাদ্য সহায়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র।
তিনি বলেন, আমরা মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান করছি, তারা যেন রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ঢুকতে দেয় এবং শান্তিতে বসবাস করতে পারে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যেন সেখানে কাজ করতে পারে, সে অনুমতি দিতে হবে।
মিয়ানমারে গণহত্যা হচ্ছে কিনা- এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেখানে একটি ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। যে নামেই ডাকা হোক না কেন, এটির অবিলম্বে সমাধান হওয়া দরকার।
একদিন আগে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি একটি তদন্তের কথা উল্লেখ করেছেন- সে বিষয়ে জানতে চাইলে বার্নিকাট বলেন, আমরাও দেখেছি। আমি সম্প্রতি রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর করেছি এবং যে কোনো ধরনের নতুন তদন্ত কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনের বাড়তি তদন্ত হবে। অং সান সু চি নিজেই বলেছেন, তিনি কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন স্বীকার করেন। আমি আশা করি তিনি তার প্রতিশ্রুতি রাখবেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি বলতে চাই, সু চি শুধু নিজেকে এই প্রশ্ন করতে পারেন, এতো লোকজন বৃষ্টি-বাদলের সময়ে নিজে থেকে কেন নিজ দেশ ছেড়ে এলো। এটি প্রমাণ করে যে বিপজ্জনক কারণ ছাড়া এভাবে দেশ ত্যাগ করতে পারে না কেউ।
যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই উদ্বিগ্ন। হোয়াইট হাউজ, কংগ্রেসের সদস্যরা বিবৃতি দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন কথা বলেছেন সু চির সঙ্গে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কেউ ভালো থাকতে পারে না।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং সহায়তায় শেখ হাসিনা সরকারের প্রশংসা করে মর্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, কঠিন মানবিক সঙ্কটে বাংলাদেশের উদারতা এবং বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য পৌঁছে দিতে চলমান প্রচেষ্টার জন্য ঢাকাকে আমরা অভিনন্দন জানাই।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মায়া বলেন, মিয়ানমার থেকে গত ২০-২৫ দিনে প্রায় সাড়ে চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাকা-খাওয়াসহ সব রকমের ব্যবস্থা করেছেন তাদের জন্য। এজন্য মার্কিন রাষ্ট্রদূত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তারা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।
রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের দেশে ফিরে যেতে আন্তর্জাতিকসহ সব রকমের চাপ সৃষ্টি করতে বলেছি। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আশ্বস্ত করেছেন, তারা এই বিষয়ে আমাদের পাশে থাকবেন, সাহায্য সহযোগিতা করবেন। রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য যতো প্রকার সহযোগিতা দরকার, তারা করবেন বলে কথা হয়েছে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থানা মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
এমআইএইচ/এইচএ/