ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন তথ্য মন্ত্রণালয়ে মতবিনিময়কালে তথ্যমন্ত্রী

ঢাকা: ত্রিমুখী উদ্যোগে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।

তিনি বলেছেন, কূটনৈতিক তৎপরতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শান্তির উদ্যোগ এবং গণমাধ্যমের বলিষ্ঠ ভূমিকার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে। দ্বিপক্ষীয় কোনো সমাধান নয়; বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং আন্তর্জাতিক এই ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থাপনায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।

বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের উদ্যোগ সম্পর্কে অ্যাসোসিয়েশন অব লিভশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। তিন-চার লাখ লোক হঠাৎ করে ঢুকে পড়েছে, এটা শুধু দেশের সমস্যা না বিশ্বের চ্যালেঞ্জ।

রোহিঙ্গাদের বিষয়ে দুটো কারণে আন্তর্জাতিক মহলের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এটা কূটনৈতিক এবং গণমাধ্যমের ভূমিকা। গণমাধ্যম প্রথম দিন থেকে যে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছে তাতে আন্তর্জাতিক বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এখন বাংলাদেশ একা নয়, আন্তর্জাতিক মহল পাশে রয়েছে। গণমাধ্যমের এই ভূমিকা ধারাবাহিক রাখতে হবে।

সরকার ও গণমাধ্যম উদ্বাস্তু মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর সমাধান কোনোভাবে সাময়িক নয়। যতোক্ষণ সমস্যার সমাধান না হয় ততোক্ষণ কূটনৈতিক তৎপরতা, শেখ হাসিনার শান্তির উদ্যোগ এবং গণমাধ্যমের বলিষ্ঠ ভূমিকা সমান্তরালে চালাতে হবে।

হাসানুল হক ইনু আরও বলেন, প্রত্যেক রোহিঙ্গা ফেরত যাবে কোনো শর্ত মানি না। তাদের স্থায়ী সমাধান কী- ফেরতও যাবে, নাগিরিকত্বও দিতে হবে। ফেরতও যাবে মর্যাদাও দিতে হবে, ফেরতও যাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। উদ্বাস্তু হয়ে এসেছে একটা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং পুর্নবাসন করতে হবে। পুর্নবাসনের টাকাটা তাদের সরকারকে দিতে হবে।

রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়া, নাগরিকত্ব দেওয়া, ক্ষতিপূরণ দেওয়া, পুর্নাবসন করা প্রচার গণমাধ্যমে করতে হবে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গণনির্যাতন এবং গণহত্যা সংগঠিত হয়েছ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দোষীদের বিচারও করতে হবে। বিচার করলেই প্রতিকার হবে। আর কোনো দিন রোহিঙ্গাদের ওপরে হাত লাগাবে না।

অং সান সু চির ভাষণের বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এটা সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য না। যদিও অং সান সু চি ঘটনা ঘটার পরে তার বক্তব্যে মিয়ানমারের নাগরিকরা বাংলাদেশে ঢুকেছে এটা স্বীকার করে নিয়েছেন। এইটা একটা বিশাল অগ্রগতি। তার মানে যে কূটনৈতিক তৎপরতা, গণমাধ্যমের ভূমিকা এবং শেখ হসিনার শান্তির উদ্যোগের কারণে সু চি যাচাই-বাছাই করে নেওয়ার কথা বলেছেন। এই জায়গাটাকে প্রাথমিক একটা অর্জন হয়েছে বলে মনে করি।

ইনু বলেন, মিয়ানমার সরকার এবং সু চি রোহিঙ্গা সংকটকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে রাখতে চাচ্ছেন। এটা কিন্তু বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক না। উদ্বাস্তু সমস্যা আমাদের ঘাড়ে এসে পড়েছে এবং এটা এখন আন্তর্জাতিক সমস্যা। যেহেতু আন্তর্জাতিক সমস্যা, সুতরাং দ্বিপক্ষীয় সমাধান নয়। তিনি যাচাই বাছাইয়ের কথা বলেছেন, এই যাচাই বাছাই কে করবে? আমাদের সর্বশেষ যে চুক্তি সে অনুযায়ী প্রত্যাবর্তন সমস্যা ত্রিপক্ষীয়ভাবে করতে হবে। বালাদেশ-মিয়ানমার-জাতিসংঘ অর্থাৎ আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষ। এতে গণমাধ্যমের ধারাবাহিক ভূমিকা থাকবে।

রোহিঙ্গা নিয়ে সামরিক উস্কানি চলছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সামরিক কোনো সমাধান এখানে নাই। যুদ্ধ লাগানো মানে বাংলাদেশের নাগরিক ও ওদের নাগরিকের ক্ষয়ক্ষতি করা। এই আধুনকি বিশ্বে আমি আরেকটা স্বাধীন রাষ্ট্রকে দখল করে রাখতে পারবো না। তাহলে আমি যুদ্ধ করে যদি কিছু এলাকায় ঢুকে রোহিঙ্গাদের আবার বসায়ে দিয়ে আসি আমার সেনাবাহিনী যখন চলে আসবে তখন আবার ওদের বের করে দেবে। যারা এই যুদ্ধের কথা বলছে তার মানে সমগ্র প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে পদানত করে রেঙ্গুন দখল করে বসে থাকতে হবে।

উস্কানি আছে, মিয়ানমারের ভিতরে আছে, আমাদের এখানে আছে। এজন্য মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। সে জন্য বার বার আমরা বলছি কূটনৈতিক তৎপরতা, গণমাধ্যমের ভূমিকা এবং শেখ হাসিনার শান্তির উদ্যোগ, যোগ করেন হাসানুল হক ইনু।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা, অন্তঃসত্বা নারীর ব্যবস্থা, পানির জন্য চারটি প্ল্যান্ট স্থাপন, ১৬ হাজার পায়খানার ব্যবস্থা করেছেন। স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত গণমাধ্যমের নজরদারি রয়েছে বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী।

মতবিনিময়কালে তথ্যসচিব মুর্তজা আহমেদ এবং অ্যাটকোর পক্ষে চারজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।