একই সঙ্গে মুসলমানরা কেন রিফিউজি (উদ্বাস্তু/শরণার্থী) হয়ে দেশে দেশে ঘুরে বেডায়, অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি)-এর রোহিঙ্গা বিষয়ক এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এমন প্রশ্নও ছুড়ে দিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাঙালিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারকে আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া আপনাদের নাগরিকদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতেই হবে।
নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের ম্যারিয়ট মারকুইস হোটেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা বিষয়ে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে জাতিসংঘে যাদের সঙ্গেই দেখা হচ্ছে, প্রত্যেকেই কিন্তু এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন।
মঙ্গলবারই জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের সহিংসতা, নিপীড়ন এবং এর ফলে প্রাণভয়ে বাংলাদেশে তাদের পালিয়ে আসার বিষয়ে ওআইসির যোগাযোগ গ্রুপের সভার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশীদের দেওয়া এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে।
এসময় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, মঙ্গলবারই জাতিসংঘে ওআইসির এক বৈঠকে আমি প্রশ্ন রেখেছি, ‘আজকে মুসলমানরা কেন রিফিউজি হয়ে ঘুরে বেড়ায়? আপনারা সকলে কেন এক হন না? কেন সকলে ঐক্যবদ্ধ হন না?’
জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশন অংশগ্রহণ উপলক্ষে নিউইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এবং বিভিন্ন সরকারপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানদের এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সর্বশেষ মঙ্গলবার ওআইসির এক সভায় রোহিঙ্গা নিধন বন্ধে মুসলিম দেশগুলোকে এক হওয়ার আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারে সেইফ জোন ও কফি আনানের সুপারিশ বাস্তবায়নসহ ৬টি প্রস্তাব দিয়েছি।
প্রবাসীদের বাংলাদেশিদের এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর যেন চাপ সৃষ্টি করেছে। মিয়ানমার যেন তাদের নাগরিকদের ফেরত নিয়ে যায় এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করে সেটাই আমরা চাই। ’
রোহিঙ্গা নিধনের বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমারে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, মেয়েদেরকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। সেখানে এমন পরিবেশ-পরিস্থিতি যেখানে সৃষ্টি হয়েছে যে, সেখান থেকে দলে দলে মানুষ এসেছে/আসছে। মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিতে হয়েছে। ’
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার কেবল একাত্তর সালে নিজেদের অবস্থার কথা মনে হয়েছে। আমদেরও তো একদিন এইভাবে হানাদার পাকিস্তানিদের কারণে এ-ঘর থেকে ও-ঘরে, দেশ ছেড়ে অন্যদেশে আশ্রয় খুঁজে বেড়াতে হয়েছিল!’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষও আশ্রয় নিয়েছিল। ভারতে প্রায় এক কোটি শরণার্থী ছিল। আজকে যখন তারা বিপদে পড়েছে, অবশ্যই তাদের জায়গা দিতে হবে। ’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকেই প্রশ্ন করেছে, এত মানুষের খাবার দেবেন কিভাবে? আমি তাদের একটা কথাই বলেছি; ১৬ কোটি মানুষ আমাদের। এই ১৬ কোটি মানুষকে যদি খাবার দিতে পারি তাহলে এই সাত-আট-দশ লাখকে খাবার দিতে পারব না কেন!’
বাংলাদেশের মানুষের উদারতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রয়োজনে তারা একবেলা খাবে। অন্যবেলার খাবার এই আশ্রিত মানুষকে তুলে দেবার মানসিকতা আমার দেশের মানুষের আছে। ’
মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয় দেয়ার কথা কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মিয়ানমারকে তাদের পালিয়ে আসা নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতেই হবে। ’
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
এমইউএম/জেএম