ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ছেলেদের কন্ঠেও সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিয়ের গান! 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
ছেলেদের কন্ঠেও সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিয়ের গান!  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মৌলভীবাজার: সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিয়ের গান বিলুপ্ত হতে চললেও এখনো সে গানকে ধরে রেখেছেন মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের ময়ুর মিয়া ও তার দল। মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ে।

ময়ুর মিয়া ও তার ২০ সদস্যের একটি দল বিয়ে বাড়িতে মেয়েদের চেয়েও সুন্দর করে সঙ্গীতসাধক রাধা রমণ-রচিত বিয়ের গান ছাড়াও তার নিজের রচিত গান গেয়ে বিয়ে বাড়ির দর্শক ও আত্মীয় স্বজনকে মাতোয়ারা করে রাখেন। সবাই মুগ্ধ হয়ে তাদের দলের গান শুনে ও গানের সাথে উদ্দাম নাচনভঙ্গি দেখে নিজেদের চক্ষুকর্ণকে ধন্য করেছেন।

 

আগেকার দিনে সিলেটে বিয়ের গানের জমাটি আসর ছাড়া বিয়েবাড়ি ছিল যেন অসম্পূর্ণ। বিয়ের গান গাওয়ার জন্য বাড়িবাড়ি গিয়ে গানপটু মেয়েদের রীতিমতো দাওয়াত দিয়ে আদর যত্ন করে বিয়েবাড়িতে এনে জড়ো করা হতো।  

যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যান্ডের গান ও চটকদার বিজাতীয় হিন্দিগানের দৌরাত্ম্যে এসব হারিয়ে গেছে। এক সময় বাড়িতে কলের গানও বাজতো। সেসব এখন কেবলই অতীতের ফেলে আসা  স্বপ্ন। আগের মতো কদর নেই বলে গানপটু মেয়েরাও এখন আর তেমন করে বিয়ের গানে অংশ নিতে চান না। তবে এখনো গ্রামাঞ্চলে, প্রত্যন্ত অজ-পাড়াগাঁয় বিয়ের গানের কিছু প্রচলন আজো রয়ে গেছে শিবরাত্রির সলতের মতো।  

সিলেটের আঞ্চলিক বিয়ের গান বিয়েবাড়িতে মুগ্ধতার আলাদা একটি আবহ সৃষ্টি করে। বিয়েবাড়িতে ছেলে গায়কদের দলটিকে দাওয়াত করে নিয়ে এসেছেন আহাদ। বাড়িতে ছেলে-মেয়ে-বুড়ো-বুড়ো সবাই এক কাতারে বসে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছে তাদের গাওয়া বিয়ের গান। সবাই বলাবলি করছিলেন, মনে হচ্ছে যেন দূর অতীতে ফিরে গেছেন তারা।

ময়ুরের বিয়ের গানের দলে আছেন ছাতির, দুলাল, হারুন, তোফায়েল, শাহজাহান, আকরম, ইকরাজ ও সুমনসহ ২০ জন।

দলনেতা ময়ুর মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, তার বন্ধু হারুন মিয়ার ভাই দুরুদ মিয়ার বিয়েতে নারী গায়ক না পেয়ে তারা নিজেরাই গান পরিবেশন করেছিলেন। সেই থেকে শুরু। এরপর থেকে বিয়ের অনুষ্ঠান হলেই তারা ছুটে যান গান গাইতে।  

এক প্রকার বিনা পারিশ্রমিকেই তারা বিয়ের গান গেয়ে থাকেন। স্রেফ মানুষকে আনন্দ দিতে আর নিজের মনের খোরাক মেটাতে। তিনি বলেন, কোনও পারিশ্রমিক নেন না। দাবিও করেন না। তবে ‘গানবন্দনা’ বা গান গাওয়ার জন্য খুশি হয়ে কেউ কিছু দিলে সেটা তারা গ্রহণ করেন।  

তিনি জানালেন, প্রথমে তিনি বাউল গান করতেন। এখন সিলেটের ঐতিহ্যবাহী রাধা রমণের বিয়ের গানকে ধরে রাখতে বিভিন্ন অডিও ক্যাসেটে বিভিন্ন শিল্পী যেমন লিলা পাগলী, স্বপ্না রানীর গান শুনে শুনে গানগুলো মুখস্থ করেছেন। তার নিজের ‘বান্ধানো’ (নিজের লেখা) কিছু বিয়ের গানও গেয়ে থাকেন তিনি।

আয়োজক আহাদ বাংলানিউজকে জানালেন, চাচাত ভাইয়ের বিয়েতে মজা করার জন্যই বিয়ের গানের দলকে তিনি নিয়ে এসেছেন।

ষাট বছর বয়স্ক হাছনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, তাদের সময়ে বাড়িতে বাড়িতে খুব ঘটা করে বিয়ের গানের আসর বসানো হতো। এখন এসব আর হয় না। বিয়ের গান শুনে খুবই ভাল লাগছে।

স্কুল পড়ুয়া শাবানা বেগম বাংলানিউজকে বলে, এর আগে এরকম গান সে খুব একটা শোনেনি। এখন বিয়ের গান শুনে আর নাচ দেখে খুব মজাই লাগছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
এমএএইচ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ