৩২ বছরের যুবক নূরে আলমের পায়েও গুলি করেছিল সেনারাই। সে ক্ষতচিহ্নই এখনো শুকোয়নি।
মিয়ানমারে চলমান সহিংসতার শুরুতেই পায়ে গুলি লাগে নূর আলমের। বড় ভাই মতিউর রহমান তাকে দেশের সীমানা পার করিয়ে ফিরে যান গ্রামে। পরিবেশ শান্ত হলে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন নূর আলমকে- এমনটাই কথা দিয়ে গিয়েছিলেন বড় ভাই। সে কথা রাখতেই পারেননি মিয়ানমারের আতিতপাড়া গ্রামের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান। বৃহৎ পরিবারের অন্য ৪৩ জনের সঙ্গে নিজেও নিহত হওয়ায় আর কোনোদিন বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে আসতে পারবেন না সম্ভ্রান্ত বংশের এই মানুষটি।
নূরে আলম জানান, সেনাদের নিষ্ঠুরতম নৃশংসতার শিকার তার বড় ভাই মতিউর রহমান সাত বছর ছিলেন আতিতপাড়ার চেয়ারম্যান। তার আরও ৮ ভাই ও সাত বোন ছিলেন, প্রত্যেকের বিয়েও হয়েছিলো। বড় ভাই নিহত আতিতপাড়া চেয়ারম্যানের ছিলো আট সন্তান। সব মিলিয়ে ভাই-বোনদের সন্তান ছিলো ২৯ জন। মোট ৫১ জনের পরিবার। এখন বেঁচে আছেন শুধু দুই ভাই, তাদের স্ত্রী, দুই সন্তান ও এক বোন।
গত সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আতিতপাড়া থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গুলি করে তার পরিবারের ওই ৪৪ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে জানতে পেরেছেন নূরে আলম।
শরণার্থীরা তাকে জানিয়েছেন, নূরে আলমের তিন বছরের ছেলেকে প্রথমে আঁছাড় মেরে হত্যা করে সেনা সদস্যরা। পরে ৮ ভাই-ভাবি, তিন বোন-দুলাভাইসহ আরও ৪৪ জন সদস্যকে লাইনে দাড় করায়। এরপর এক এক করে সেনাবাহিনীর গুলি ভেদ করে নূরে আলমের পরিবারের সদস্যদের বুক।
সেনা সদস্যরা চলে যাওয়ার পর প্রতিবেশিরা এসে দেখতে পান, বোন দিলারা ছাড়া সবাই মারা গেছেন। প্রতিবেশিদের সহায়তায় কক্সবাজারে এসে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন দিলারা।
পরিবারের প্রায় সবাইকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন নূরে আলম। শরণার্থী ক্যাম্পে খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।
নূরে আলমের প্রতিবেশি তাহের বাংলানিউজকে বলেন, ‘একজন মানুষের পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হলে সে কি আর বাঁচতে পারে। নূরে আলমতো এখন বেচে আছে। তিন বছরের বাচ্চা ছেলেটারেও নাকি রেহাই দেয়নি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী’।
নূরে আলম বলেন, ‘যখন শুনলাম, আমার ছেলেটাকেও মেরে ফেলেছে, মনে হলো- আকাশটা যেন ভেঙে পড়েছে। কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। সেতো শিশু, রোহিঙ্গা, আলেকিন, আরসা- এসব কিছু বুঝতো না। তাকে কেন হত্যা করা হলো?’
‘আতিতপাড়ায় আমাদের পরিবারই ছিলো সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত পরিবার। তাদেরই এ অবস্থা করা হয়েছে। তাহলে অন্যদের কি অবস্থা হয়েছে?’
নূরে আলমের মতোই অসংখ্য রোহিঙ্গা শরণার্থীর পরিবারের প্রায় সবাই নিহত হয়েছেন চলমান সহিংসতায়। তারপরও জীবন থেমে থাকেনি, ঘুরে দাড়াতে ক্যাম্পগুলোতে জীবনযুদ্ধ করছেন তারা।
স্থানীয়রা জানান, শুধু কুতুপালং ক্যাম্পেই আশ্রয় নিয়েছেন কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
ইউএম/এএসআর