ব্যবসায়ীদের দাবি, বন্যা ও ঈদুল আজহার কারণে শ্রমিকরা ছুটিতে থাকায় প্রায় ২০ দিন চাল উৎপাদন বন্ধ ছিল। ফলে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী চাল না থাকায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
রংপুরের বৃহৎ চালের বাজার মাহিগঞ্জের কয়েকটি আড়ত ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি চিকন চাল পাইকারী ৫০ টাকা , মাঝারি মানের চাল ৪৬ টাকা ও মোটা (হাইব্রিড) চাল ৩৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা দোকানে চিকন চাল প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, মাঝারি মানের চাল ৫০ টাকা ও মোটা (হাইব্রিড) চাল ৩৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহ খানেকের ব্যবধানে প্রতিকেজি চালে গড়ে প্রায় ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানায় ব্যবসায়ীরা। চালের দাম আরও বাড়তে পারে জানিয়ে চাল ব্যবসায়ী জোবাইদুল ইসলাম বলেন, বাজারে ধানের সংকট। সরকারের ভান্ডারেও তেমন মজুত নেই। অটোমিলগুলো তেমন ধান পাচ্ছে না। প্রতিমণ ধান ১২’শ ৫০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে চালের দাম আরও বাড়বে।
চাল ব্যবসায়ী মাহতাব হোসেন চৌধুরী বলেন, বাজারে দেশি চাল তেমন নেই। ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে আমদানিকরা চালের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ভারতে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীরাও বেশি দামে চাল বিক্রি করছে। সেখানে চালের দাম কমলে বাংলাদেশের বাজারেও দাম কমবে।
চালের বাজারে চলমান অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ীরা লোকসান গুনছেন বলে দাবি করে তিনি আরও বলেন, আগে প্রতিদিন গড়ে ৫শ’ বস্তা চাল বিক্রি হত। এখন ৫০ বস্তাও বিক্রি হচ্ছে না। এতে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে ভিন্ন অভিযোগ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বরুণ কুন্ডুর। তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও মাহিগঞ্জ থেকে বিভিন্ন জেলায় চাল পাঠানো হতো। তখন তেমন সংকট হত না। কিন্তু বর্তমান সময়ে বাইরের গ্রাহক তেমন আসে না। তারপরেও এখানে চালের সংকট তৈরি হচ্ছে। তার দাবি, কিছু কিছু ব্যবসায়ী অধিক পরিমান চাল মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন। ফলে চালের বাজারে দাম বেড়েই চলছে।
চালের দামে নাকাল নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। এত অধিক দামে চাল কিনে তিন বেলা খাওয়া দুঃসহ এবং দু:সাধ্য হয়ে পড়েছে তাদের জন্য।
মাহিগঞ্জ বাজারে চাল কিনতে এসেছিলেন রিক্সা চালক মাজেদ। তিনি বললেন, প্রতিদিন যে আয় হয় তার বেশিরভাগই চাল কিনতেই চলে যায়। বাকি টাকায় প্রয়োজনীয় অন্যান্য সওদা পাতি কেনা সম্ভব হয় না।
১৫নং ওয়ার্ডের অটোরিক্সা চালক রনি বললেন, প্রতিদিন চালের দাম বাড়ছে। সামান্য যে আয় করি তা চাল কিনতেই চলে যায়। এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে। চালের বাজারে দামের উর্দ্ধগতির কারণে ছেলে মেয়েদের পড়ালেখার খরচ চালাতে পারছি না।
শহরের ১৫নং ওয়ার্ডের রং-শ্রমিক দুলু মিয়া বলেন, যা আয় করি তা চাল কিনতেই শেষ। কোনো সঞ্চয় থাকে না। কাজ করে কোনোমতে জীবন পার করছি। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের কোনো উন্নয়ন হবে না। আমরা গরীবরা গরীবই থাকব।
চালের দাম বৃদ্ধিও বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, বন্যার কারণে সঠিক সময়ে চাতাল মালিকরা চাল প্রস্তুত ও উৎপাদন করতে পারেননি। এজন্য সাময়িকভাবে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কিছুদিনের মধ্যে চালের মূল্য স্বাভাবিক হবে।
চাহিদার চেয়েও বেশি চাল উৎপাদনের পরেও রংপুরে চালের বাজারে দামের উর্দ্ধগতির কারণ জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, চালের মূল্য কিছুটা বেড়েছে। তবে বাজার পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করে থাকলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। চালের দাম কমাতে এরই মধ্যে ওএমএস চালু করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়:১২৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
এসআরআর/ জেএম