বালুখালী বাজার থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পাহাড় ও সমতল ভূমির সমন্বয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে প্রায় অর্ধলক্ষ বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে এই ক্যাম্পে।
তাদের একজন অপ্রাপ্ত বয়স্ক গর্ভবতী নারী আনোয়ারা। ৬ মাসের গর্ভবতীর এ নারী প্রথম সন্তান জন্মের অপেক্ষায়। মিয়ানমারের মংডু জেলার লংদুন গ্রাম থেকে আত্মীয়-স্বজন হারিয়ে স্বামীর হাত ধরে বাংলাদেশে এসেছেন।
রাখাইনের এই গ্রামে তাদের স্বচ্ছল সংসার ছিলো। মুদির ব্যবসায়ী স্বামীর মো. ফারুক। ৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় আর্মিরা তাদের গ্রাম ঘিরে ফেলে। কাউকে গ্রাম থেকে বের হতে দেয় না। পরের দিন সকালে পুরো গ্রামে আগুন দেয়। কোনো রকমে স্বামী ও দেবরদের হাত ধরে পালিয়ে আসে আনোয়ারা। তবে চোখের সামনে জ্বলতে দেখে মাসহ দশ ভাইবোনকে।
মিয়ানমারের শিলখালি সীমান্ত হয়ে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে অানোয়ারা।
এর মধ্যে পথে তার পেটে পেইনও ওঠে। এখনো চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ মেলেনি।
অানোয়ারার স্বামী ফারুক বলেন,পরিবারের প্রথম সন্তান কিন্তু জীবনে শান্তি পেলাম না। আগুনে বাবা-মা শ্বশুর-শাশুড়িসহ অনেক অাত্মীয় মারা যায়। এক কাপড়ে পালিয়ে আসি। বউয়ের চিকিৎসা হচ্ছে না।
পরিবারের ১১ সদস্যকে হারিয়ে দিশেহারা অানোয়ারা বলছিলেন, ১২ ভাই-বোনের মধ্যে আমি বেঁচে আছি। এক ভাই ম্যালেটারিতে যোগ দিয়েছে। বাকী সব পুড়ে মরেছে। এমন দু:খ-কষ্টের জীবনে সন্তান নিয়ে অন্ধকার দেখছি।
অানোয়ারার চার ঘর পরে ৮ মাসের গর্ভবতী নারী মিনারার বাস।
পরিবারে সন্তান আসবে, খুশি থাকবে মায়ের মন। এই স্বাভাবিকতায় অনুভূতিহীন এই নারীর। ঘর না থাকায় প্রতিবেশীর ঘরে অাশ্রয় নিয়েছে মিনারা। তার আরো চার সন্তান। সবার বড়টার বয়স নয় বছর। ঈদের আগের দিন রাখাইনের লংদুন গ্রাম থেকে আর্মিরা তার স্বামীকে নিয়ে যায়। অন্যদের সঙ্গে বাংলাদেশে পাড়ি দেয়।
ঘরে জোয়ান পুরুষ না থাকায় কাদামাখা পাহাড়ি রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে ত্রাণের জন্য তাকেই চলাচল করতে হচ্ছে। পথ চলতে একটু এদিক-ওদিক হলেই যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
মিনারা বলছিলেন, চার সন্তান নিয়ে বিপদে পড়েছি। পেটেরটার কারণে নড়াচড়াও করতে পারছি না। বাংলাদেশের দয়ার উপর বাঁইচ্যা আছি। এভাবে কত দিন থাকব। কোলের এক বছরের বাচ্চাটার পাঁচ দিন ধরে জ্বর। আল্লাহর রহমত ছাড়া কোনো গতি নাই।
মিনারার আশ্রিতা সোহেরা খাতুনও ৬ মাসের গর্ভবতী। তার রয়েছে আরও পাঁচ সন্তান।
গর্ভবতী এ নারী সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় পায়ে ব্যথা পেয়েছেন।
সোহেরা খাতুনের স্বামী সলিম মংডুর লংদুন গ্রামে ওষুধ বিক্রি করতেন। দো-তালা ঘর ছিলো তাদের। স্বচ্ছল জীবনের কিছু আর বাকি নেই তাদের। বালুখালি ক্যাম্পের ত্রিপল টাঙানো তাঁবুর নিচে ষষ্ঠ সন্তানে অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা এরইমধ্যে ১০ লাখ ছাড়িয়েছে।
কক্সবাজার উপজেলা সদরের তথ্যমতে, এর মধ্যেই ৭০ হাজার গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
এমসি/জেডএম