ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রোহিঙ্গা নিধন বন্ধে মুসলিম দেশগুলোকে এক হওয়ার আহ্বান

মহিউদ্দিন মাহমুদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
রোহিঙ্গা নিধন বন্ধে মুসলিম দেশগুলোকে এক হওয়ার আহ্বান

নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র থেকে: মিয়ানমারে জাতিগত নিধন চলছে অভিযোগ এনে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ওআইসিভুক্ত (অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন) দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

রোহিঙ্গাদের জন্য সেফ জোন করা ও দ্রুত কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নসহ এ সঙ্কট সমাধানে ৬টি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী।

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে সংস্থাটির ৭২তম সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের সহিংসতায় প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার বিষয়ে ওআইসির যোগাযোগ গ্রুপের সভায় শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ওআইসির মহাসচিব ইউসুফ আল-ওথাইমিন, জাতিসংঘের মানবাধিকার সমন্বয়কারী বিষয়ক প্রধান মার্ক লোকক প্রমুখ।

মিয়ানমারে জাতিগত নিধন চলছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে মিয়ানমারে আমাদের মুসলিম ভাই-বোনেরা জাতিগত নিধনের সম্মুখীন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেখানকার সামরিক বাহিনীর অভিযান ব্যাপক ধ্বংস চালাচ্ছে।  

ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খুব বেশি দেরি হওয়ার আগেই রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এজন্য ওআইসির নেওয়া যে কোনো উদ্যোগ ও পরিকল্পনার সঙ্গে বাংলাদেশ রয়েছে।  

তিনি বলেন, শিগগির রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সব ধরনের বর্বরতা বন্ধ করতে হবে। বলপূর্বক বিতাড়িত এসব মুসলিমকে নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত নিতে হবে।

নিরীহ নাগরিকদের বিশেষ করে নারী, শিশু ও বয়স্কদের রক্ষায় মিয়ানমারের ভেতরে একটি সেফ জোন করা এবং দ্রুত কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আমরা এ জাতিগত নিধনের সমাপ্তি দেখতে চাই। এ সঙ্কটের মূল মিয়ানমার ও এর সমাধান মিয়ানমারেই খুঁজে বের করতে হবে।

ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সব ধরনের বর্বরতা শিগগির বন্ধ করা, মিয়ানমারের নিরীহ নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য দেশটির ভেতরে একটা সেফ জোন করা, বলপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গা মুসলিমদের তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে ফিরিয়ে নেওয়া, দ্রুত ও শর্তহীনভাবে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা, রোহিঙ্গাদের বাঙালি পরিচয় দিতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রপাগান্ডা বন্ধ করা এবং মুসলিম ভ্রাতৃপ্রতিম দেশগুলোর উচিত যতোদিন মিয়ানমান নাগরিক রোহিঙ্গারা দেশটিতে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত ততোদিন বাংলাদেশকে জরুরি মানবিক সহযোগিতা দেওয়া।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আসা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার বেশি রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ২৫ আগস্টের পর থেকে ৪ লাখের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী নদী ও সীমান্ত পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, যাদের ৬০ শতাংশই শিশু। এটা একটা অসহনীয় মানবিক বিপর্যয়।  

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি সেখানে গিয়েছি এবং তাদের কষ্টের কথা শুনেছি, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের।  সবাইকে বাংলাদেশে যাওয়া এবং শরণার্থীদের কাছে মিয়ানমারের বর্বরতার কথা শোনার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশ ৪ লাখের মতো রোহিঙ্গ শরণার্থী আশ্রয় দিয়ে আসছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৮ লাখের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আছে। স্থান ও সম্পদের স্বল্পতা স্বত্ত্বেও আমরা তাদের আশ্রয়, খাদ্যসহ জরুরি অন্যান্য সেবা দিয়ে আসছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের দাবি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অবৈধ অভিবাসী। অথচ সব ঐতিহাসিক রেকর্ড প্রমাণ করে রোহিঙ্গারা শতাব্দীর পর শতাব্দী রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে আসছে। তারা সে দেশেরই নাগরিক।

তিনি বলেন, মিয়ানমার পরিকল্পিত ও সংগঠিত প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের তাদের মাতৃভূমি থেকে বলপূর্বক বিতারিত করছে। প্রথমে তারা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের জাতিগোষ্ঠী স্বীকৃতি থেকে বাদ দেয়। তারপর ১৯৮২ সালে তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।  

‘পরে তাদের নিজ দেশে আইডিপি ক্যাম্পে পাঠানো হয়। (ইন্টারন্যালি ডিসপ্লেসড পার্সন (আইডিপি) মানে ওই সব ব্যক্তি যাদের বলপূর্বক নিজের ভিটে মাটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়, তারা নিজ দেশে ঘরবাড়ি  হারানো উদ্বাস্তু। )’ 

রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে পাঠাতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে ফেরাতে আমরা অব্যাহতভাবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু মিয়ানমার তাতে সাড়া দিচ্ছে না। আপনারা মিডিয়ায় দেখে থাকবেন- মিয়ানমার তাদের সীমান্তে মাইন পুঁতে দিয়েছে যাতে রোহিঙ্গারা তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে না পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭/আপডেট: ১২০৭ ঘণ্টা
এমইউএম/জেডএস/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।