মাথা গোজার ঠাঁই করতে যখন মাত্র ত্রিপল টানিয়ে রাত কাটানো শুরু করেছেন তারা, তখনই বাধ সেধেছে বৃষ্টি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে শরণার্থীদের ঘরে জমে গেছে হাঁটু কাদা, রাস্তায় জমেছে পানি।
রাইখ্যং রোহিঙ্গা ক্যাম্প মূল সড়ক থেকে বেশ খানিকটা ভেতরে। স্থানীয়রা জানান, সড়ক থেকে ক্যাম্পে প্রবেশ করতে হাঁটতে হবে প্রায় আড়াই মাইল মাটির রাস্তা। তবে এখন রাস্তায় কিছুটা ইট বিছানো শুরু করেছে বিজিবি।
বৃষ্টি হলেই ডুবে যাচ্ছে মাটির রাস্তা। এক হাঁটু কাদায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে শরণার্থীদের। বিশেষ করে কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসা করাতে হেঁটে যাওয়া মুশকিল এই পথে।
মিয়ানমারের শিলকালি থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী জোবাইদার জ্বর সকাল থেকে। কিন্তু মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকেই বৃষ্টিতে পাহাড়িপথ হয়ে উঠেছে পিচ্ছিল। আর তাই মেডিকেল ক্যাম্প পর্যন্ত যেতে পারছেন না তিনি।
অন্যদিকে ত্রাণ নিয়ে পিচ্ছিল রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে পা মচকে চিকিৎসা ক্যাম্পে হাজির হতে হয় রুবেলকে। ত্রাণের বস্তায় থাকা বেশিরভাগ চালও মাটিতে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
রুবেল বাংলানিউজকে বলেন, ‘পুরো রাস্তায় কাদা। চালের বস্তা মাথায় নিয়ে আসছিলাম। পা ফেলতেই কাদায় হাঁটু তলিয়ে গেছে। বুঝতেপারিনি। মচকে গেছে। চালও অনেকটাই পড়ে গেছে’।
রাইখ্যং শরণার্থী ক্যাম্পের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে বায়ে বাশের সাঁকো। নিজেদের সুবিধার্থে সাঁকোটি তৈরি করেছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। কিন্তু রাস্তার কাদা সাঁকোতে মেখে সেটিতেও হাঁটা মুশকিল। সতর্ক হয়ে দু’দিকের বাঁশ না ধরে হাঁটলে পা পিছলেযাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বৃষ্টি না কমলে ক্যাম্পগুলোতে যাওয়ার রাস্তা ঠিক করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তাদের মতে, ইট বিছিয়ে রাস্তা বানাতে অন্তত কাদা শুকাতেহবে। কিন্তু প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তায় কাদা বেড়েই চলেছে। তাছাড়া আগে যেখানে মাত্র কয়েক হাজার মানুষ রাস্তাটি ব্যবহার করতেন, এখন সেখানে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ চলছেন এই পথে। আর তাই খানিকটা বৃষ্টিতেই কাদায় তলিয়ে যায় সব কিছু।
বৃষ্টি-কাদায় বিপাকে পড়ছেন বালুখালি ও কুতুপালং ক্যাম্পের শরণার্থীরাও। কুতুপালং ক্যাম্পের এক পাশে সমতল জায়গায় অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের ঘরগুলোতে জমেছে হাঁটু পানি। আর সেই পানিতে না থাকতে পেরে তারা অবস্থান নিচ্ছেন রাস্তায়। আবার কেউবা জমির আইলে বসে পড়েছেন ঘটি-বাটিসহ।
কাদা আর জলাবদ্ধতায় বেশি বিপাকে পড়ছেন বৃদ্ধ ও শিশু শরণার্থীরা। বয়স্করা বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আর জলাবদ্ধতায় সংক্রামক ব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
তবে বৈরি আবহাওয়া ঠিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ দুর্ভোগ কমে আসবে বলে মনে করছেন রাইখ্যং শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রিতরা।
মিয়ানমারে সহিংসতার জেরে গত প্রায় একমাসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। তাদেরকে কক্সবাজারের ১৫টি পৃথক পৃথক ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। এসব শরণার্থীর ৬০ শতাংশই শিশু।
মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীরা জানান, ৫০ এর নিচে বয়স, এমন প্রায় সব রোহিঙ্গা পুরুষকেই হত্যা করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
ইউএম/এএসআর
‘পুরুষদের করা হয়েছে জবাই, নারীদের ধর্ষণ’