তেমনই একটি পরিবার জোবায়েরদের। মংডুর বলীবাজারের কাছেই ছিল তাদের বাড়ি।
ভয়াবহ দিনটির গল্প বলেন জোবায়েরের বাবা।
' দুপুর গড়িয়ে সবে বিকেল। স্কুল থেকে বুকে বই নিয়ে ক্ষুধায় কাতর জোবায়ের ভাত খাবে বলে দৌড়ে ফিরছিলো। পথে খবর পায় বাড়িতে আর্মিরা আগুন দিয়েছে। ঘরমুখো ছেলে ঘরে না ফিরে বই বুকে উল্টো দৌড় দেয় জনস্রোতের সঙ্গে। পেছন থেকে ধাওয়া করে ঘাতকের বুলেট। তার একটি নৃশংস বুলেট বিদ্ধ হয় জোবায়েরের বুকে।
পালিয়ে আসা জনস্রোতে ছিলো জোবায়েরে বাবা ও দুই ভাই। ভাইয়ের ঘাড়ে করে আহত জোবায়ের টানা তিনদিন হেঁটে সীমান্ত পাড়ি দেয়। টেকনাফ হোয়াইক্যংয়ের রইখ্যং সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ প্রবেশ করে।
পরে বিজিবি ও স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ১৫ দিন চিকিৎসা নিয়ে পাহাড়ের উপর রইখ্যং ক্যাম্পে বাবা ভাইয়ের সঙ্গে আশ্রয় নেয়। হাসপাতাল থেকে ফিরে জোবায়ের জানতে পারে মিয়ানমার আর্মির ছোঁড়া বুলেটে তার মা মারা গেছে।
চারদিন হলো হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে জোবায়ের। বাড়ির ছোট ছেলে, আদরের ছিলো বড়। সারাক্ষণ হইহুল্লোড়ে মাতিয়ে রাখত সবাইকে। আর আবদারের তো সীমা ছিলো না। সেই জোবায়ের একবারে চুপসে গেছে। সারাদিন চুপচাপ বসে থাকে। আর কি যেন ভাবে!
কথা বলতে চাইলে চুপ করে দাঁড়িয়ে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে। দশ বছর বয়সী জোবায়েরের বুকে এখনও বুলেটের ক্ষত শুকায় নি। শরীরের বিভিন্ন স্থানে চামড়া ছিলে যাওয়ার ক্ষত।
জাকির বলছিলেন, ও খুব হাসি খুশি ছিলো। হাসপাতাল থেকে ফিরে চুপ হয়ে গেছে। মা মরার খবর শুনে একটু কেঁদেছে। এরপর আরো চুপ হয়ে গেছে। আর আমি তিন পোলা নিয়ে নি:স্ব হয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছি।
জোবায়েরদের পাশে মংডুর বলীবাজার থেকে এসে বোনের তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছে উরুতে গুলিবিদ্ধ জিয়াউর রহমান। আর্মিরা তার ঘরে আগুন দেয়। পালানোর সময় বর্বর সেনার গুলি লাগে। এরপর ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে জঙ্গলে অাশ্রয় নেয়। মধ্যরাতে সেনারা চলে গেলে অন্যদের সঙ্গে জিয়াউরও বাংলাদেশে চলে আসে। আশ্রয় নেয়।
চিকিৎসার পরও জিয়া এখন আর হাঁটতে পারে না। বয়সে অপরিপক্ব হলেও জিয়া চার সন্তানের জনক। আশ্রয় শিবিরে অক্ষম হয়ে পড়ে রয়েছে।
জিয়াউর বলছিলেন, কিছু করতে যাইতে পারছি না। ত্রাণ আনবো তারও উপায় নাই। ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। কি হবে আমাদের।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
এমসি/জেডএম
শরণার্থীদের সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা