কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্প ঘুরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের দেখা গেল। রোগাক্রান্তদের মধ্যে শিশু, বয়স্কদের সংখ্যা বেশি।
টেকনাফের হোয়াইক্যং রইখ্যং ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন পাঁচ সন্তানের জননী জুবেদা আক্তার। তাঁবু টানিয়ে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে তাদের বসবাস। যেখানে খাওয়া-দাওয়া, সেখানেই মলমূত্র ত্যাগ। পানির অভাবে কয়েক দিন গোসল নেই। চার-পাঁচদিন ধরে পাঁচ সন্তানসহ জুবেদা জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।
জুবেদার মত হাজারো রোহিঙ্গা নরনারী ও শিশু জ্বর, কলেরা, ডায়রিয়া, চর্মরোগ, নিউমোনিয়া, যক্ষা, ম্যালেরিয়াসহ নানা সংক্রামক রোগে আক্রান্ত। সঠিক চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ না পাওয়ায় এসব রোগ দ্রুতই ছড়াচ্ছে।
ব্যাধিতে আক্রান্ত রোহিঙ্গারা শরণার্থী ক্যাম্প বা আশ্রয়স্থলের পাশে মেডিকেল ক্যাম্প পেলে ছুটে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনাকারী ডাক্তার ও সদস্যরা রোগিদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের একটি ক্যাম্পে শিশু, বৃদ্ধের দীর্ঘ লাইন দেখতে পাওয়া গেল। লাইনে দাঁড়ানো রোগীদের অধিকাংশই জ্বর ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।
চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের কপালে হাত দিয়ে দেখা যায়, প্রচণ্ড উত্তাপ শরীরে। রোগে ভুগে চোখ কোটরে ঢুকে গেছে। রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে মায়েরা শিশুদের নিয়ে ছুটে আসছেন মেডিকেল ক্যাম্পে।
রইখ্যং ক্যাম্পে মেডিকেল টিম বসেছে বিজিবির। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। তবে ওষুধপত্র সাপ্লাই দিয়ে কুলাতে পারছেন না তারা।
মেডিকেল টিমের পরিচালক ডা. লে. কর্নেল নুরে আলম বাংলানিউজকে বলেন, শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা বেশির ভাগ কমন কোল্ডে আক্রান্ত। এছাড়া ডায়রিয়া, চর্ম রোগ, যক্ষা রোগী বহু পাওয়া যাচ্ছে। আমরা তাৎক্ষণিক ব্লাড টেস্ট করছি। ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস বি ও সি এর মতো রোগ ধরা পড়লে শহরে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
রোগ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের সংস্পর্শে স্থানীয়রা এলে তাদের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে পড়বে। বিশেষ করে ভলান্টিয়ার হিসেবে যারা কাজ করছেন তাদের মাধ্য রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কক্সবাজার উপজেলা সদর থেকে পাওয়া তথ্য মতে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত চার জন হাম ও ১৬ জন পোলিও রোগী পাওয়া গেছে। এইচআইভি পজেটিভ রোগীও চিহ্নিত করা হয়েছে। স্ক্রিনিং সাসপেক্টেট পেশেন্ট প্রতি ২০ জনের মধ্যে ৮ জন। এরা উখিয়া উপজেলার বালুখালি ও কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পের।
রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যক্ষা, ম্যালেরিয়া, হেপাটাইটিস বি ও সিতে আক্রান্ত। ৭০ হাজার গর্ভবতী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার মেডিকেল অফিসার ডা. জাহিদুল মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, সংক্রামক ব্যাধির মধ্যে আমাদের ভয় হেপাটাইটিস বি ও সি, পোলিও ও হাম নিয়ে। আমরা স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উন্নতি করেছি। সংক্রামক ব্যাধি ছড়ালে পিছিয়ে পড়বো। এজন্য নিজেদের জনগণকে রক্ষা করে রোহিঙ্গাদের সেবা দিতে হবে।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে পোলিও একবারে নির্মূল হয়েছে। কিন্তু শরণার্থীদের মাধ্যমে এসব রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে বাংলাদেশিদের মধ্যেও মহামারি আকারে দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
এমসি/জেডএম
মিয়ানমার আর্মির নির্মমতা এড়াতে উত্তাল নাফ নদী পাড়ি
মানবিকতার খাতিরে বিঘ্নিত শিক্ষা!