ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘হাসিনার লাই বাঁচি থাক্কি’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
‘হাসিনার লাই বাঁচি থাক্কি’ মিয়ানমারের মংডুর জমুইন্না পাড়ার নারী শরণার্থী তসলিম। ছবি: সোহেল সরওয়ার

রাইখ্যং রোহিঙ্গা ক্যাম্প, হোয়াইটক্যং থেকে: ‘ভাইব্বিলাম, মিলিটারির (মিয়ানমার) আতত মরি যাইয়ুম, হাসিনার লাই বাঁচি থাক্কি’। কথাটির শুদ্ধ বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘ভেবেছিলাম, সেনাবাহিনীর (মিয়ানমার) হাতে মারা পড়বো, কিন্তু হাসিনার জন্য বেঁচে আছি’।

কথাগুলো বলছিলেন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইটক্যং রাইখ্যং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নারী শরণার্থী তসলিম। একমাত্র সন্তান সাদিয়াকে নিয়ে নাফ নদী পার হয়ে ১০ দিন আগে পৌঁছেছেন ক্যাম্পে।

মৃত্যুকে খুব সামনে থেকে দেখেছেন মিয়ানমারের মংডুর জমুইন্না পাড়ার তসলিম। দেশটির সেনাবাহিনী তার স্বামী সৈয়দ নূরকে গাছে বেধে হাত-পা কেটে হত্যা করে। বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে ফেলে রাখা হয় তসলিমকেও। তিনি জ্ঞান হারালে মৃত ভেবে চলে যান সেনা সদস্যরা।

মিয়ানমারের মংডুর জমুইন্না পাড়ার নারী শরণার্থী তসলিম।  ছবি: সোহেল সরওয়ার 

জ্ঞান ফেরার পরও বেঁচে থাকার আশা ক্ষীণ ছিল তসলিমের। সে সময় আরো কয়েকজন রোহিঙ্গার কাছে জানতে পারেন, বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়েছে। আহত তসলিম সন্তানকে কখনো কোলে, কখনো মাথায় নিয়ে পার হন সীমান্ত।

ক্যাম্পে কোলে নিয়ে শুয়ে থাকা তসলিম বলেন, ‘মিয়ানমারের আর্মিরা আমার স্বামীকে আমার সামনেই হত্যা করেছে। যদি বাংলাদেশে ঢুকতে না পারতাম, তাহলে আমি আর বাচ্চাও মরে যেতাম। হাসিনার কারণেই আমরা বেঁচে আছি'।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সীমান্ত খুলে তাদের এদেশে আশ্রয় দেওয়ায় লাখ লাখ রোহিঙ্গার প্রাণ বেঁচেছে বলে মনে করছেন সব শরণার্থীই। এর ওপরে রোহিঙ্গাদের দেখতে কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়ে দেওয়া তার বক্তব্য শুনে ঘোর অন্ধকারেও আলোর দিশা দেখতে পাচ্ছেন শরণার্থীরা। প্রধানমন্ত্রী সেখানে জানিয়েছেন, ১৬ কোটি মানুষের মুখের ভাত জোগাড় করতে পারলে ১০ লাখ মানুষের ব্যবস্থাও করা যাবে।
 
রাইখ্যং শরণার্থী ক্যাম্পে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন।  ছবি: সোহেল সারওয়ারমিয়ানমারের বটতলি গ্রাম থেকে আসা আব্দুল্লাহ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি বাংলাদেশে ঢুকতে না দিতেন, তাহলে কতো নির্যাতন সহ্য করে মরতে হতো কে জানে। শুধু ঢুকতেই দেননি, ক্যাম্পে থাকার জায়গা দিয়েছেন, ওষুধ সরবরাহ করছেন, খাদ্যও দিচ্ছেন’।

‘এই মানুষটার কারণেই বেঁচে আছি’- বলেন আব্দুল্লাহ।

রাইখ্যং শরণার্থী ক্যাম্পে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের জন্য ত্রিপল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ঘর। স্বাস্থ্য অধিদফতর দিয়েছে প্রায় ১০০টি স্যানেটারি ল্যাট্রিন। মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে যতোটা সম্ভব চিকিৎসাসেবাও দেওয়া হচ্ছে।

জুবাইয়ের বলেন, ‘হাসিনা আমাদের ঘর দিয়েছেন, নিরাপত্তা দিয়েছেন। এর বেশি কিছুতো আশাই করিনি। তাই তিনি আমাদের রোহিঙ্গাদের দেখতে কুতুপালং ক্যাম্পেও গিয়েছেন শুনে অবাক হয়েছি। ধরতে গেলে আমাদের নতুন জীবন দিয়েছেন শেখ হাসিনা’।  

স্থানীয়রা বলছেন, কক্সবাজারের ১৫টি ক্যাম্পে এখন প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা আছেন। তবে জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবেশ করেছেন ৪ লাখ ১৭ হাজার জন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
ইউএম/এএসআর

‘পুরুষদের করা হয়েছে জবাই, নারীদের ধর্ষণ’

কাঁটাতারের সাথেই বসত!

ছয়মাসের খুরশীদার দায়িত্ব নেবেন কি কেউ!

পেটে ভাত নেই, কাপড় দিয়ে কী হবে!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।