ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাভারে ছিনতাইয়ের নেপথ্যে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা!

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
সাভারে ছিনতাইয়ের নেপথ্যে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা! ওসি মহসীনুল কাদির

ঢাকা: সাভারে যত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে তার নেপথ্যে রয়েছেন এক শ্রেণির অসাধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী। নিজেদের নিয়োগ করা লোক দিয়ে তারা একের পর এক ছিনতাই করাচ্ছেন। ছিনতাই কাজে ব্যবহার করছেন মাদকসেবীদের। এদের অধিকাংশই আবার হেরোইনসেবী!

অবাক করার মতো এসব ‘তথ্য বোমা’ ফাটিয়েছেন সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসীনুল কাদির। ছিনতাইয়ের ঘটনায় ইতোমধ্যে সাতজন নামকরা স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে, অন্যরাও নজরদারিতে রয়েছে বলেও জানান তিনি।

চলতি বছরের ২৪ জুন আশুলিয়া থানা থেকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে সাভার মডেল থানার দায়িত্বভার বুঝে নেন ওসি মহসীনুল কাদির।

সাভার অঞ্চলের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বাংলানিউজের সাথে আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “যদি চ্যালেঞ্জের কথা বলেন তাহলে বলবো আইন শৃঙ্খলা-রক্ষায় আশুলিয়ার চাইতে সাভারে চাপ তুলনামূলক কম। তবে এখানে অপরাধের মাত্রা হিসেবে মাথা ব্যথার কারণ ছিনতাই। আমি যোগদানের পর দেখলাম, এখানে মূল সমস্যাটাই ছিনতাই। ঘর থেকে বের হতে ছিনতাই। শপিং থেকে বের হতে গিয়ে ছিনতাই। ছিনতাই যেন এখানে একটি ব্যাধি। এর নেপথ্যের কারণ মাদক। ”

“ওত পেতে থাকলাম, যে করেই হোক ছিনতাইকারী চক্রকে ধরতে হবে। একজন দু’জন করে ধরা পড়লো। আমরা ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করলাম। আটককৃতদের ৮ জনই স্বর্ণ ব্যবসায়ি। তদন্তের গভীরে গিয়ে দেখলাম, ছিনতাইয়ের নেপথ্যে রয়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা”, যোগ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।  

১৯৯২ সালে পুলিশ বিভাগে যোগ দেন মহসীনুল কাদির। গীতিকার, সুরকার হিসেবেও ইতোমধ্যে ভিন্ন পরিচয় গড়েছেন তিনি। সুযোগ পেলে গান গেয়ে মঞ্চ মাতান।  

গীতিকার, সুরকার বা গায়ক; এতসব পরিচয়ের সঙ্গে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের পেছনে দৌড়ান কী কৌশলে? প্রশ্নে মৃদু হেসে বিনয়ী কণ্ঠেই বলেন, “ওসব আর লিখতে যাবেন না। ওগুলো না লেখাই ভালো। আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও কিন্তু সক্রিয়। সেখানে আমার পেশাগত কোনো পরিচয় নেই। আমি ব্যক্তি মহসীন। তবে বাহিনীতে আমার পরিচয় পেশাদারিত্বের। আমার ওপর আমার বাহিনী আস্থা রাখে আমার কাজে। ”

“এবার আসি ছিনতাই প্রসঙ্গে। চক্রটির পেছনে অনুসন্ধান শুরু করলাম। তদন্তের মাঝ পথেই আসতে থাকলো গা শিউরে ওঠা নানা ধরনের তথ্য। ছিনতাইয়ের জন্যে খুন-জখম, যার নেপথ্যে আবার কিনা প্রতিষ্ঠিত এক শ্রেণির স্বর্ণ ব্যবসায়ী!”

“শুরুতেই বুঝতে পারছিলাম এর জন্যে চাপে পড়তে হবে। প্রকৃত অর্থেই আসতে থাকলো নানা ধরনের চাপ। এমনকি প্রলোভনসহ নানা ধরনের হুমকি। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের আটক করা যাবে না- এমন বাহানা নিয়েও আসলেন অনেকে। ”

“তদন্তের গোড়াতেই বিষয়টি ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ মিজান শাফিউর রহমান স্যারকে জানালাম। স্যার আশ্বস্ত করে বললেন, এগিয়ে যেতে। চাপ যা আসে তা মোকাবেলা করার মতো সাহস ও সহযোগিতা দুটোই দিলেন।
আমি নাছোড়বান্দা। পেশাদার ছিনতাইকারীদের প্রথমে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি প্রদানের পর পরই নেমে গেলাম অভিযানে। ”

“যাদের গ্রেপ্তার করেছি, তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে তাদের নাম প্রকাশ করছি না। কারণ কেঁচো খুড়তে কেউটেও বের হয়ে আসতে পারে। একজন ছিনতাইকারীকে ধরে রিমান্ডে এনে ধীরে ধীরে তার গভীরে গিয়ে আমরা জানতে পারি সমাজের মুখোশধারীদের রূপ। ”

মহসীনুল কাদির বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে একাধিক স্বর্ণ ব্যবসায়ী আমাকে বলেছেন ব্যবসায় মন্দা। তার ওপর যারা বন্ধকি কারবার করেন সেটাও মন্দা। লোভের ফাঁদে পড়েই তারা পা রেখেছেন ছিনতাইয়ের মতো ঘৃণিত অপরাধের জগতে। ”

“মাত্র ২ থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে যদি এক ভরি স্বর্ণালংকার পাওয়া যায় তো মন্দ কী! এমন লোভ থেকেই তারা এ পথে এসেছেন বলে কেউ কেউ স্বীকার করেছেন। মজার কথা মাদকসেবীদের ছিনতাই করাতে শখের বসেও খোদ দু’একজন ব্যবসায়ীও সরাসরি ছিনতাইয়ের সাথে যুক্ত হয়েছেন। ছিনতাইয়ের পর স্বর্ণালংকার গলিয়ে তা আবার বিক্রি করেছেন। লাভের ওপর লাভ!”

এই অপরাধের শেকড় কি উৎপাটন করা হবে সহসাই? প্রশ্নের উত্তরে মহসীনুল কাদির বলেন, “কাজটা খুবই জটিল। এখন কিন্তু ছিনতা‌ইয়ের ঘটনা আর আগের মতো নেই। আমরা চেষ্টা করছি। আমিনবাজার, ভাকুর্তা, রানা প্লাজার পেছনে, এমনকি সাভার ডিবি অফিসের পাশেও রয়েছে হেরোইনের আস্তানা। এসব গুঁড়িয়ে দিতে হবে। আমরা দিচ্ছিও। আশা করছি হেরোইন উৎখাত করতে পারলে ছিনতাইয়ের ঘটনাও নিয়ন্ত্রণে আসবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
জেডআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।