ফলে ইলিশে কর্মব্যস্ত সময় কাটছে এসব স্থানের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের। পাশাপাশি ইলিশের আমদানি বুঝে দর ওঠানামার মধ্য দিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বসচায় চলছে বেচা-বিক্রি।
আর স্থানীয় পাইকাররা মোকাম থেকে নিলামে ইলিশের চালান কিনে বাছাই করে ঢাকাসহ সারাদেশে সরবরাহ করছেন।
এদিকে মৌসুম শুরুর পর বর্তমানে দাম অনেকটা কমে আসলেও আগামী কয়েক দিনে ইলিশের আমদানি বাড়লে দাম আরো কমবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
বরিশাল নগরের পোর্ট রোডের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার মো. ফরিদউদ্দিন জানান, ২০ দিন আগেও বরিশালের মোকামে ইলিশের আমদানি অনেকটাই হতাশাজনক ছিলো। সে সময় প্রতিদিন ৫ থেকে ৭শ’ মণ ইলিশ আমদামি হলেও এখন তা হাজার মণ ছাড়িয়েছে।
তবে বরিশালের অনেক ব্যবসায়ীর মতে, গত বছরের তুলনায় এ বছর দেরিতে মাছ আমদানি হয়েছে, তেমনি পরিমাণও ছিলো কম। ফলে লোকসানের শঙ্কাও রয়েছে তাদের।
যদিও এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, বরিশালে মিঠা পানির মাছ কম ধরা পড়ায় মোকামে মাছের আমদানি কম হয়েছে। কিন্তু সাগরে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় সারাদেশে ইলিশের আমদানিই সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।
আর সাগর-নদীর ইলিশে তফাৎ নিয়ে আড়তদার আবদুল হালিম সিকদার বলেন, নদী ও সাগরের ইলিশের স্বাদ আলাদা, নদীর ইলিশ স্বাদে-গুণে অনন্য। আর সাগরের ইলিশ একটু লবণাক্ত ও তৈলযুক্ত। এ কারণে নদীর ইলিশের চাহিদা এবং দরও বেশি।
দরের বিষয়ে পোর্ট রোডের পাইকারি ইলিশ ব্যবসায়ী মানব জানান, বর্তমানে বরিশালে ইলিশের পাইকার বাজারে এলসি সাইজের ৬শ’ থেকে ৮শ’ গ্রাম ওজনের মাছের দর চলছে ৩১ থেকে ৩২ হাজার টাকা মণ, কেজির মাছ মণ প্রতি ৪২ থেকে ৪৪ হাজার, দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৬ হাজার টাকা, ভ্যালকা ৪০০ থেকে ৫৫০ গ্রাম ওজনের মণ প্রতি দাম চলছে ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা ও জাটকা মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা দরে। যা মৌসুমের শুরুর থেকে অনেকটাই কম।
বরিশালের ইলিশ মাছের পাইকারি ব্যবসায়ী ও বরিশাল মৎস্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল বলেন, এবারের মৌসুমজুড়েই ইলিশের বাজার ওঠানামার মধ্যে রয়েছে। বেশি একটা চাপ না থাকলেও কর্মব্যস্ততা রয়েছে মোকামগুলোতে। কারণ বরিশালে নদীর মাছ আমদানি না হলেও ফিশিং বোট থেকে মাছ আসছে। তবে গত বছর ইলিশের জন্য অনেক বরফ জেলার বাহিরে থেকে আনতে হয়েছে। কিন্তু আমদানির কারণে এ বছর তার প্রয়োজন হয়নি বললেই চলে।
তিনি বলেন, অক্টোবরের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে শীত মৌসুমে যদি মাছ ধরা না পড়ে তাহলে কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হতে পারে ব্যবসায়ীদের।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে আগস্ট-অক্টোবর এ তিন মাস ইলিশের মৌসুম বলা চলে। যদিও এসময়েই প্রজনন মৌসুম থাকে ইলিশের। তবে গত বছর আগস্টের মাঝামাঝি অর্থাৎ মৌসুমের শুরুর দিকে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও এবার জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ে ৬ সেপ্টেম্বর থেকে।
বরিশাল জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, প্রাকৃতিক কারণে এবারে মৌসুম দেরিতে শুরু হওয়ায় বরিশালে মিঠা পানির ইলিশ কম মিললেও সাগরে ইলিশ ধরা পড়ছে প্রচুর পরিমাণে। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলের মিঠা পানির মাছ সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা অনেক।
তিনি বলেন, বরিশালের মোকামে নদীর মাছ না পাওয়া গেলেও ভোলা-চাঁদপুরে তা পাওয়া যাচ্ছে। তবে সবকিছু ঠিক থাকলে এবারেও ইলিশের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
এমএস/জেডএস