দিনের পর দিন এ অবস্থায় চললেও রাজধানীর আগাঁরগাও থেকে তালতলা পর্যন্ত সড়কটির একপাশ সংস্কার করা হচ্ছে না। এতে মিরপুরের বাসিন্দারা ছাড়াও উত্তরা বা আব্দুল্লাহপুরগামী যাত্রীরা অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়ছেন।
মেট্রোরেল নির্মাণের লক্ষ্যে ইউটিলিটি সার্ভিসের সংযোগ সরাতে গত ঈদ-উল-ফিতরের আগে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয় বেগম রোকেয়া সরণির এ অংশটি। উত্তরে মিরপুর-১২ নম্বর থেকে দক্ষিণে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেট পর্যন্ত সড়কটির বিভিন্ন স্থানে কেটে ইউটিলিটি সার্ভিসের লাইনগুলো সরানো হয়।
এরপর থেকেই রাস্তাটিতে চলছে বালু ফেলা, ইটের সুঁড়কি দিয়ে ভরাট এবং তার ওপর পিচ ঢালার কাজ। মাঝে মধ্যে বৃষ্টিতে তাতে ঘটে বিঘ্ন। এভাবে চলছে ঢিমেতালে সংস্কার। শেওড়াপাড়ার অংশও পুরোপুরি মেরামত হয়নি। গর্তের পাশাপাশি শুকনো আবহাওয়ায় ধুলো-বালিতে ভোগান্তি চরমে উঠছে চলাচলকারীদের।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরের পর মিরপুরগামী সড়কটির শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেট থেকেই দেখা যায় যানজট। সড়কের মাঝে গর্ত, ইট বিছানো কিংবা গর্তে জমে থাকা পানিতে আটকে থাকছে যানবাহনগুলো। কোনো কোনো সময় যানবাহন উল্টে যাওয়ারও উপক্রম।
দ্বিতীয় গেট থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কিছুটা স্বস্তি থাকলেও সেখান থেকে সামনের দিকে এগোতে থাকলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে যানবাহনগুলো। আইডিবি ভবন, আবহাওয়া অফিস ও স্পারসোর সামনের অংশটুকুর একেবারেই বেহালদশা।
কোথাও কংক্রিটের ব্লক রাখা হয়েছে, কোথাও বা গর্তের কারণে গাছের ডাল দিয়ে সাবধান করা হয়েছে। খানা-খন্দে ভরা উঁচু-নিচু রাস্তাটিতে ঝুঁকি নিয়ে চলছিলো যানবাহন। এর সঙ্গে তালতলা পর্যন্ত মুখে কাপড় বা হাত দিয়ে ধুলো-বালি ঢাকার চেষ্টা করছিলেন চলাচলকারীরা।
স্পারসো অফিসের কাছে বেহাল সড়কের পাশে গাছের ছায়ায় ফলের ঝাল বিক্রি করছিলেন মিন্টু মিয়া। ক্ষোভ নিয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ রাস্তা পাঁচ বছরেও ঠিক হবে না, লিখে রাখেন’।
রাস্তার পাশে প্রায় প্রতিদিন বেচা-কেনা করার সময় যানবাহনের দুর্গতি দেখে তিনি বলেন, ‘যারা চলে, তারাই বুঝবো কষ্ট। এ রাস্তার মা-বাপ নাই’।
তপ্ত রোদে গাছের নিচে বসেছিলেন মেট্রোরেল নির্মাণের কর্মী বায়েজিদ। তিনি বলেন, রাস্তাটি ঠিক হচ্ছে। তবে কবে সংস্কার কাজ শেষ হবে তা জানা নেই তার।
রাস্তার এ অংশটুকুর কারণে আগারগাঁও মোড়েও যানজট তৈরি হচ্ছে। বেহাল রাস্তার কারণে এ মোড় থেকে উল্টোপথে তালতলা পর্যন্ত সড়কে অলিখিত অনুমতি নিয়ে চলে যানবাহন। আর এতে কোনো কোনো সময় দুর্ঘটনাও ঘটছে বলে জানালেন চালক মিন্টু মিয়া।
হেলে-দুলে মিরপুর যাওয়ার পথে বাসের স্টাফরা জানালেন, সংস্কার না করায় অনেক দিন ধরেই কষ্ট করে চলতে হচ্ছে। দ্রুত সংস্কার করে মুক্তি দেওয়া উচিত।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অধীন রাস্তাটির সংস্কার কবে নাগাদ শেষ হবে তা নিয়েও রয়েছে সংশয়।
ডিএনসিসি’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করেই বলেন, ‘মিরপুরের রাস্তা ভাঙা, জিজ্ঞেস করেন মেট্রোরেল নির্মাণকারীদের কাছে। এ রাস্তার পুরোটাই মেট্রোরেল বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর যেখানে যেখানে কাটিং হয়েছে, সেখানে সংস্কার কাজ চলছে। বৃষ্টি না হলে ১৫-২০ দিনের মধ্যেই সমস্ত রাস্তা ঠিক হয়ে যাবে’।
সংস্কারের অপেক্ষায় থাকতেই সড়কের ডিভাইডার তুলে দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে মাঝখানে মেট্রোরেলের পিলার বসানোর কাজ চলছে। সংস্কার দ্রুত শেষ না করা গেলে পিলার বসানোর কাজ পুরোদমে শুরু হলে আরও যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। মিরপুর-১১ নম্বরে এখন রাস্তার মাঝে পিলার বসানোর কারণে যানজট লেগেই আছে।
এ অবস্থায় দ্রুত সংস্কার এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছেন মিরপুরের বাসিন্দারা।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
এমআইএইচ/এএসআর