ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘আমি বাঙালি না, বার্মিজ’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
‘আমি বাঙালি না, বার্মিজ’ রোহিঙ্গা শরণার্থী ফয়জুল্লাহ। ছবি: সোহেল সরওয়ার

শাহপরীর দ্বীপ, মাঝের পাড়া, টেকনাফ: ‘সরকার যাই বলুক, আমি বাঙালি না, বার্মিজ।’ -এ দাবি তুলে একটি পরিচয়পত্র বের করে ধরেন মিয়ানমারের মংডু থেকে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থী ফয়জুল্লাহ।

বৈরি আবহাওয়ায় কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে দেখানো হয়েছে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত। বাড়ছে নাফ নদীর পানি।

শাহপরীর দ্বীপরে রাস্তায়ও পানি। ইট বিছানো রাস্তা ভেঙে গেছে খানিকটা। উত্তাল নাফ নদী পেরিয়ে মাছ ধরার নৌকায় করে পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে পালিয়ে এসেছেন ফয়জুল্লাহ।

রোহিঙ্গা শরণার্থী।  ছবি: সোহেল সরওয়ারমিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের নিজেদের নাগরিক মানছে না। কিন্তু দেশটির সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র দেখিতে ফয়জুল্লাহসহ অনেক নাগরিকই নিজেদের দাবি করছেন মিয়ানমারের নাগরিক।

আজ থেকে ছয় বছর আগে নূর বেগমকে যখন বিয়ে করেন তখন ওই পরিচয়পত্র দেওয়া হয় ফয়জুল্লাহকে। সেই পরিচয়পত্রে তাকে নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা না হলেও তিনি যে মিয়ানমারের বাসিন্দা তার প্রমাণ তুলে ধরেন ফয়জুল্লাহ। তিনি জানান, ওই পরিচয়পত্র দেখিয়েই সব ধরনের সরকারি কাজ করতেন  তিনি।

রোহিঙ্গা শরণার্থী।  ছবি: সোহেল সরওয়ারতিন বাচ্চা আর স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ৩০ হাজার টাকা নৌকা ভাড়া দিয়ে পালিয়ে এসেছেন কেন জানতে চাইলে বলেন, আমি মংডুতে থাকতাম। আমার জন্মই ওখানে। আমার ভাই আর বোনকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ধরে নিয়ে  হত্যা করেছে। আমরা রোহিঙ্গা হলেও মিয়ানমারেরই নাগরিক, এটা বলেছিলো আমার ভাই। তাই গুলি করেছিলো সেনারা। বুকটা ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলো আমার ভাইয়ের।

শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গাদের ঘরে প্রবেশ করে যাদের পরিচয়পত্র  ছিলো সব পুড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। কিন্তু ভাগ্যক্রমে ফয়জুল্লাহর পরিচয় পত্রটি খুঁজে পায়নি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

তবে সুযোগ পেলে ফয়জুল্লাহ ফিরে যেতে চান মিয়ানমারেই। বাপ-দাদার ভিটা জমি সবই ওখানে রয়েছে। সহিংসতার কারণে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে ফয়জুল্লাহকে। সহায় সম্বলহীন হয়ে পরিবারের সদস্যদের মুখে ভাত তুলে দিতে পারবে কিনা সেই অনিশ্চয়তায় এখন দিন কাটছে ফয়জুল্লাহর। তাই সহিংসতা বন্ধ হলে সুযোগ পেলে প্রমাণসহ মিয়ানমারেই ফিরতে চান তিনি।

রোহিঙ্গা শরণার্থী।  ছবি: সোহেল সরওয়ারবাংলানিউজকে বলেন, আমার জমি আছে ওখানে। কৃষি কাজ করে চলতে পারতাম। কিন্তু এখানে না আছে ঘর, না আছে কোনো সম্পদ। কিভাবে চলবো। আমার পরিচয়পত্র আছে। বার্মা সরকার সুযোগ দিলে আমি ফিরে যাবো।

মঙ্গলবার সকালে বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও অসংখ্য রোহিঙ্গা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নাফ নদী পেরিয়ে প্রবেশ করছেন বাংলাদেশে। তার আগে সোমবার দিবাগত রাতে রোহিঙ্গাবাহী একটি নৌকা ডুবে ৭ জন নিখোঁজ হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
ইউএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।