ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে ট্রাম্প

মহিউদ্দিন মাহমুদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

নিউইর্য়ক, যুক্তরাষ্ট্র থেকে: রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সকালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে জাতিসংঘ সংস্কার বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কুশল বিনিময়কালে ট্রাম্প এ কথা জানান।

পরে হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

শহীদুল হক জানান, ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বলেছেন, মিয়ানমারের ইস্যুতে আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। এটা কিভাবে সমাধান করা যায় আমরা দেখবো।

দুই নেতার কুশল বিনিময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিষয়টি উঠে আসে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানতে চান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ভালো করছে। তাতে তিনি (ট্রাম্প) সন্তোষ প্রকাশ করেন। জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে ১৯৩ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান নিউইয়র্ক শহরে রয়েছেন। অধিবেশনের ফাঁকে ‘জাতিসংঘ সংস্কার: ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
 
সভায় ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে জাতিসংঘ তার পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না।
 
তিনি মানুষের জন্য আরও বেশি বিনিয়োগ এবং আমলাতন্ত্রের জন্য কম বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
 
আরও বেশি সক্ষমতা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা আনতে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতিয়েরেসের ঘোষণা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সভাটি শেষ হয়। ১২৮টি দেশ এ ঘোষণায় সই করে বলে জানায় জাতিসংঘ।
 
জাতিসংঘ মহাসচিবকে ট্রাম্প বলেন, আমরা আপনার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করি। পুরো পদ্ধতিটাকে দেখা এবং উপায় খুঁজে বের করার মাধ্যমে উন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা, শান্তি ও নিরাপত্তায় আরও ভালো কিছু করতে পারে জাতিসংঘ।
 
জাতিসংঘ সংস্কার বিষয়ক সভায় অতিথিদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
তিনি বলেন, আমরা এমন একটা জাতিসংঘ চাই, যাতে পুরো বিশ্বের মানুষের আস্থা থাকবে। আমলাতন্ত্রকে ছুড়ে ফেলতে হবে, সেকেলে পদ্ধতিগুলোকে পরিবর্তন করতে হবে এবং জাতিসংঘের মূল মিশনকে সামনে এগিয়ে নিতে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
 
সোমবারের কর্মসূচি হিসেবে বিকেল ৩টায় জাতিসংঘ সদরদপ্তরে প্রধানমন্ত্রী ‘যৌন নিপীড়ন ও প্রতিরোধ বিষয়ক’ একটি শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন।
 
বিকেল ৪টায় জাতিসংঘ সদরদপ্তরের দ্বিপাক্ষিক বুথে শেখ হাসিনা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন।
 
বিকেল ৫টার দিকে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বসবেন জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডির সঙ্গে।
 
পৌনে ৬টার দিকে ‘ভালো কাজ ও অংশগ্রহণমূলক প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ভূমিকা’ বিষয়ক একটি উচ্চ পর্যায়ের ফলোআপ বৈঠকে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা।
 
রাত ৮টায় হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে রয়টার্সের জাতিসংঘ ব্যুরো চিফ মিশেল নিকোলসকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
 
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি ভবনের নর্থ ডেলিগেটস লাউঞ্জে অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব গুতিয়েরেস আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
 
বিকেল ৩টায় জাতিসংঘ সদরদপ্তরের কনফারেন্স রুম-৪ এ তিনি অংশ নেবেন ‘নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে কেউ পিছিয়ে পড়বে না’ বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের সর্বোচ্চ পরিষদের শীর্ষ পর্যায়ের গোলটেবিল আলোচনায়।
 
বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রধানমন্ত্রী ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতির সভাপতিত্বে পরিবেশের জন্য বৈশ্বিক চুক্তি বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন।
 
একইদিন ‘রোহিঙ্গাদের ওপরে মিয়ানমার সরকারের সহিংসতা, নিপীড়ন এবং এর ফলশ্রুতিতে প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা’র বিষয়ে ওআইসির যোগাযোগ গ্রুপের সভায় অংশ নেবেন শেখ হাসিনা।
 
বিকেল ৬টায় বেকহাম প্যালেসে যুক্তরাজ্য ও মাল্টার প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত কমনওয়েলথ রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানদের অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।  
 
সন্ধ্যায় ৭টায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
 
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ‘পারমাণবিক অস্ত্র নিরোধ চুক্তি’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের ‍চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
 
সাড়ে ৯টার দিকে এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্স্তি কালজুলেইদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি।
 
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও জাতিসংঘের সাউথ সাউথ কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘এসডিজি বাস্তবায়ন, অর্থায়ন ও পর্যবেক্ষণ: দক্ষিণ দক্ষিণ ও ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্ভাবনমূলক কাজ ভাগাভাগি’ শীর্ষক ‍উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।  

তিনি সাড়ে ১১টায় অংশ নেবেন বাংলাদেশ ও কানাডার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘এসডিজির অর্থায়নের নীতিগত রূপরেখা তৈরি:  এসডিজি খাতে বেসরকারি বিনিয়োগের সুবিধা বাড়ানো’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে।
 
দুপুরে অংশ নেবেন বিজনেস কাউন্সিল ফর ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজ ও গোল টেবিল বৈঠকে।
 
বিকেল সাড়ে ৩টায় নেদারল্যান্ডের রানি ম্যাক্সিমার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন প্রধানমন্ত্রী।
 
এরপর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পুনর্গঠন এবং সংস্কারের বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি ইথিওপিয়া আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের (রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান পর্যায়ের) উন্মুক্ত বিতর্কেও অংশ নেবেন তিনি।  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পসন্ধ্যা সাতটায় হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক উইলিয়াম ল্যাসি সুইং।
 
বিকেল সাড়ে ৭টায় গ্র্যান্ড হায়াতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক সদানন্দ ধুমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রীর।
 
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় সফরকালীন আবাসস্থল গ্র্যান্ড হোটেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন আমেরিকার নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস মেশিনস করপোরেশনের চেয়ারম্যান ভার্জিনিয়া ম্যারি রমেটি।
 
সাড়ে ৯টায় কসোভোর প্রেসিডেন্ট হাশিম থাচির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা।
 
১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী চেয়ারম্যান অধ্যাপক ক্লজ স্কব।
 
সাড়ে ১০টার কিছু পরে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে গুতিয়েরেসের উদ্যোগে গঠিত পানিসম্পদ বিষয়ক শীর্ষ পর্যায়ের পরিষদের চতুর্থ বৈঠকে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।
 
সাড়ে ১১টার দিকে নেপালের প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেবা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেবেন।
 
ওইদিনই বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবারের মতো এবারও বাংলায় বক্তব্য দেবেন তিনি।
 
বক্তব্যে শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যু, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, জলবায়ু, দারিদ্র্য, সুশাসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
 
সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জাতিসংঘের মহাসচিব গুতিয়েরেস ও শেখ হাসিনা দ্বিপাাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেবেন।
 
রাত ৮টায় বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে সংবাদ সম্মেলন করবেন প্রধানমন্ত্রী।
 
২৯ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসির ডালেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ারের একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী। মাঝে লন্ডনে যাত্রাবিরতি দিয়ে ২ অক্টোবর ঢাকায় পৌঁছাবেন তিনি।
 
গত শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-১৯১১ ফ্লাইট নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যায়।
 
আবুধাবীতে যাত্রা বিরতি দিয়ে রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেলে সাড়ে ৪টার দিকে ইতিহাদ এয়ারলাইন্সের ইওয়াই-১০১ ফ্লাইটে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭
এমইউএম/এইচএ/

** শান্তিরক্ষীদের যৌন আক্রমণের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’
** জাতিসংঘ সংস্কারে ট্রাম্প আয়োজিত সভায় হাসিনার অংশগ্রহণ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।