ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য চান নেতারা

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য চান নেতারা টেকনাফ সীমান্তে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল। ছবি: দীপু মালাকার

ঢাকা: রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাদের মতে, এই সংকটকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের ঝুঁকি এড়ানো জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমেই সম্ভব।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের নেতারা মনে করেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকার যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে সকল রাজনৈতিক দলের উচিত সেটাকে সমর্থন করা। এই ইস্যুতে একটা জাতীয় ঐক্য থাকলে কোনো অপশক্তি সহজে কোনো সুযোগ নিতে পারবে না।

তবে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিএনপি যুক্ত হতে পারবে না বলে তারা মনে করেন। ইতোমধ্যে বিএনপি যে সব বক্তব্য দিয়েছে তা জাতীয় ঐক্যমতের বিরোধী বলে তারা মনে করেন।

ক্ষমতাসীন জোটের বাইরের কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের নেতারাও জাতীয় ঐক্য দরকার বলে মনে করছেন। তাদের মতে, এই সমস্যা সমাধানে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল ও শক্তিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এজন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করতে সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

এসব রাজনৈতিক দলের নেতারা জানান, মিয়ানমারের নির্যাতন ও গণহত্যার ঘটনায় ইতোমধ্যে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সেখানে সেনাবাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন ও গণহত্যা অব্যাহত আছে। এই অবস্থায় আরও ৫ লাখের উপরে বাংলাদেশে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের ওপর বিভিন্নভাবে রোহিঙ্গা সংকটের মারাত্মক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে দেশের অর্থনীতির ওপরও। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যাকে মূলধন করে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী শক্তির পাঁয়তারাও রয়েছে। তাদের অশুভ তৎপরতা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে বলে জানান নেতারা।  টেকনাফ সীমান্তে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল।  ছবি: দীপু মালাকারতারা আরও জানান, ইতোমধ্যে সম্প্রদায়িক অপশক্তি বিভিন্ন ধরনের উস্কানি ও প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে। যা ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা জরুরি।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বাংলানিউজকে বলেন, এই সংকটে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটা ইতিবাচক। সংকট মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্য দরকার। রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবব্ধ থাকলে এর একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশের মানুষের মধ্যে ঐক্যবব্ধতার কারণে ভারত তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে। চীনও পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু সেই ঐক্যে বিএনপি আসতে পারবে না। কারণ তারা বলছে সরকার রিলিফ পাওয়ার আশায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। এ বক্তব্য জাতীয় ঐক্যে বা এই সংকট নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় জাতীয় শক্তিকে কাজে লাগাতে রাজনৈতিক মত পার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে সকল শক্তিকে একত্রিত করা উচিত। সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা উচিত। সরকারের এ উদ্যোগ নেওয়া উচিত। তবে সেটা অবশ্যই হতে হবে অসাম্প্রদায়িক শক্তির ঐক্য। কারণ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী যারা এই হত্যা নির্যাতন চালাচ্ছে তারা এবং সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী একই ধরনের।

১৪ দলের শরিক জাসদের একাংশের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমি মনে করি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেটাকে দলমত নির্বিশেষে সবাকেই সমর্থন করা উচিত। রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের কোনো সমস্যা যাতে তৈরি না হয় সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকা দরকার।  

১৪ দলের বাইরের গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এটা নিয়ে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবব্ধ থাকলে জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে এর একটা প্রভাব পড়বে। এটাকে কেন্দ্র করে যে কোনো অপশক্তি যে কোনো সুযোগ নিতে পারে। তাই ঐক্যবব্ধ থাকার বিকল্প নেই।

ক্ষমতাসীন জোটের শরিক জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় রাজনৈতিক দলগুলোকে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা উচিত। এই সংকটকে কেন্দ্র করে অন্য শক্তি কোনো ধরনের সুযোগ যাতে নিতে না পারে সে জন্য সরকারের উচিত এই ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবব্ধ রাখার চেষ্টা করা।

বাংলাদেশ সময়: ০১১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭ 
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।