ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ছয়মাসের খুরশীদার দায়িত্ব নেবেন কি কেউ!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭
ছয়মাসের খুরশীদার দায়িত্ব নেবেন কি কেউ! ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছয়মাসের খুরশীদা যখন কাঁদে, তখন মুখে খাবার তুলে দিতে পারেন না মা বিবি আশা। ছবি: সোহেল সারওয়ার

কুতুপালং থেকে: ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছয়মাসের খুরশীদা যখন কাঁদে, তখন মুখে খাবার তুলে দিতে পারেন না মা বিবি আশা। অসহায় এই মায়ের তাই কেবলই ঝরে চোখের পানি।

মিয়ানমারের চলমান সহিংসতার শিকার মা বিবি আশা একমাত্র সন্তান এই খুরশীদাকে কোলে করে আটদিন হেঁটে জঙ্গল পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন আরাকান রাজ্যের তুমব্রু গ্রাম থেকে।

জাতিসংঘের হিসেবেই প্রায় ৪ লাখ ১৭ হাজার শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে।

তবে স্থানীয়দের মতে, এ সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

শরণার্থীদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সহিংসতায় এসব শিশুর কারো মা নিহত হয়েছেন, কারো বা বাবা। আবার একেবারেই একা প্রতিবেশি বড়দের কোলে চড়ে বা হাত ধরেও এসেছে হাজারো শিশু।

ছয়মাসের খুরশীদা তেমনই এক অসহায় শিশু, যার বাবা মোহাম্মদ হাকিম গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। স্বামীর মরদেহ জঙ্গলে রেখেই তার মা আশা অন্যদের সঙ্গে শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন কুতুপালং ক্যাম্পে।
 
মা আশা প্রায় অনাহারে আছেন গত ১০ দিন ধরে, বুকে দুধ আসা প্রায় বন্ধ। অন্য কোনো খাবার কেনারও সামর্থ্য নেই তার। খুরশীদাও তাই খাবার না পেয়ে কেবলই কাঁদছে।

অথচ এই খুরশীদার একটু কান্না শুনলেই ব্যকুল হয়ে উঠতেন বাবা মোহাম্মদ হাকিম। মেয়ের জন্মের পর পুরো এলাকায় মিষ্টি বিলিয়েছিলেন তিনি। এসব কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বার বার চোখটা ভিজে ওঠে বিবি আশার।

ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে কুতুপালং ক্যাম্পে ঘর বানানোর সামর্থ্যও নেই বিবি আশার। খোলা আকাশের নিচে রোদে-পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে মেয়েকে বুকে নিয়ে অসহায় দিন কাটছে তার।

বিবি আশা বলেন, ‘আমি না খাইলে বাচ্চা দুধ পাবে কিভাবে? এই ছোট বাচ্চা নিয়ে ধাক্কা ধাক্কি করে সাহায্যের খাবারও আনতে পারি না। বাচ্চা মুখে খাওন পায় না, তাই কান্দে। কি করবো আমি? তার (মোহাম্মদ হাকিম) এতো আদরের মেয়ে! কতো স্বপ্ন ছিলো! এভাবে চলতে থাকলে একদিন হয়তো মরেই যাবে আমার সন্তান। কেউ কি আমার খুরশীদার দায়িত্ব নেবেন?’

কেবলমাত্র সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতেই জনে জনে নানা আকুতি জানানোটাই আজ একমাত্র সম্বল বিবি আশার।  ছবি: সোহেল সারওয়ারআগে যেখানে স্বামীর জন্য দুপুরের খাবার নিয়ে অপেক্ষা করতেন এই নারী, আজ সেখানে রাস্তার পাশে ছয়মাসের সন্তানকে বুকে নিয়ে একটু সাহায্যের আকুতি জানাচ্ছেন। এতো ছোট বাচ্চা নিয়ে দৌড়া-দৌড়িও করতে পারেন না, তাই ত্রাণের গাড়ি এলেও খাবার পান না তিনি।

কেবলমাত্র সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতেই জনে জনে নানা আকুতি জানানোটাই আজ একমাত্র সম্বল বিবি আশার।
 
তিনি জানান, পালিয়ে আসার সময় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর গুলি ঢুকে যায় স্বামী মোহাম্মদ হাকিমের গলায়। ঘটনাস্থলেই জঙ্গলে প্রাণ হারান হাকিম। বাবা আর একমাত্র ভাইও কোথায় আছেন জানেন না তিনি। স্বামীকে হারিয়ে যেখানে শোকে ম্যূহমান থাকার কথা, সেখানে ছয়মাসের মেয়েকে নিয়ে প্রাণপন ছুটতে হয়েছে সীমান্ত পার হতে।

বিবি আশার স্বামী মোহাম্মদ হাকিম কৃষিকাজ করতেন। অবসর সময়ে করতেন দিনমজুরের কাজও। দুই বছর আগে নানা রঙের স্বপ্ন নিয়ে মোহাম্মদ হাকিমকে বিয়ে করেছিলেন বিবি আশা। সবই আজ অতীত।

এমন হাজারো খুরশীদা রয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে। যেসব শিশুর মা-বাবারা বেঁচে এদেশে পালিয়ে এসেছেন, তারাও জানেন না, দিনে অন্তত একবেলা খাবার সন্তানের মুখে তুলে দিতে পারবেন কি-না। আর একেবারে এতিম হয়ে আসা শিশুদের জীবনটাই পড়ে গেছে চরম ঝুঁকির মুখে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭
ইউএম/এএসআর
**
‘পুরুষদের করা হয়েছে জবাই, নারীদের ধর্ষণ’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।