ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

না.গঞ্জে রোহিঙ্গা সেজে নাটক!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
না.গঞ্জে রোহিঙ্গা সেজে নাটক! না.গঞ্জে রোহিঙ্গা সেজে নাটক করে যুবক মাহাবুব

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর এলাকা থেকে আটক যে যুবক নিজেকে মায়ানমারের নির্যাতিত ‘রোহিঙ্গা’ দাবি করেছিলো তার প্রকৃত বাড়ি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায়। সে ফতুল্লার কাশিপুর হোসাইনি নগর এলাকার মোক্তার হোসেনের ছেলে। তার নাম মাহাবুব। অথচ সে নিজেকে আবদুল্লাহ পরিচয় দিয়েছে।

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বের) রাতে শহরের খানপুর এলাকা থেকে তাকে উদ্ধারের পর রাতেই ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে পুলিশ প্রহরায় তাকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়।

তবে পথিমধ্যে পুলিশ প্রকৃত ঘটনা টের পেয়ে আবারও তাকে থানায় নিয়ে আসে। তখন বেরিয়ে আসতে থাকে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন শাহ পারভেজ বাংলানিউজকে জানান, তিনজন পুলিশ প্রহরায় মাহাবুবকে কক্সবাজার নেওয়ার পথে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে। তখন জানাজানি হয় তার নাম মাহাবুব। বাড়ি ফতুল্লার কাশিপুরে। পরিবারের লোকজন এসে তাকে শনাক্ত করে।

তিনি জানান, মাহাবুব মানসিক প্রতিবন্ধী। তার বাবা মোক্তার হোসেনের জিম্মায় তাকে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে কাশিরপুর হোসাইনি নগর পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি শাহ-আলম বাংলানিউজকে জানান, হোসাইনি নগর এলাকাতে বসবাস করেন মোক্তার হোসেন। তার এক ভাই আক্তার হোসেন বোবা। আর মাহাবুবও মানসিক প্রতিবন্ধী। এরআগেও কখনো সে নিজেকে ইঞ্জিনিয়ার কখনো ডাক্তারের ছেলে পরিচয় দিতো। কয়েকবার সে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে ছিলো।

যে নাটক করেছিলো মাহাবুব
গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টায় শহরের খানপুর এলাকায় ঘোরাফেরা করার সময় গতিবিধি সন্দেহজনক হওয়ায় পুলিশ তাকে আটক করে। পরে সে মিয়ানমারের থেকে এসেছে বলে পুলিশকে জানায়। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম রয়েছে। ওই রাতেই তাকে শহরের খানপুরের ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ওই সময়ে মাহাবুব নিজেকে ‘আব্দুল্লাহ’ পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘মা, বাবা ও বোনসহ আমরা চারজন ছিলাম। কিছুদিন আগে বৌদ্ধ ও সেনাবাহিনীর লোকজন মা ও বাবাকে কুপিয়ে ও গুলি করে মেরে ফেলেছে। ১২ বছরের ছোট বোনকেও ছাড়েনি। ওকে প্রথম হাত পা কেটে ফেলে। পরে গুলি করে মেরে ফেলে। আমাকে গলায় চাকু দিয়ে আঘাত করে। শরীরে আঘাত করে। ’

কথাগুলো বলতে বলতে সে শরীর বিভিন্ন অংশ দেখায়। তার মধ্যে গলায়, বুকে, পিঠে ও পায়ে বিভিন্ন ছুরির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

মাহাবুব আরো বলেছিলেন, ‘বাবা সোলেমান মিয়া, মা হাজু ও বোন লতিমুনিয়াকে নিয়ে তাদের চারজনের পরিবার ছিল। কিন্তু মায়ানমারে বৌদ্ধরা তাদের হত্যা করেছে। কিন্তু যখন তাকে মারতে আসে সেও একজনকে গুলি করে মেরে পালিয়ে চলে আসে। প্রথমে মায়ানমার থেকে টেকনাফ পরে সেখান থেকে ট্রেনে চড়ে নারায়ণগঞ্জে চলে আসে। ’

তবে ট্রেনের টিকিটের টাকা পরিশোধ ও নারায়ণগঞ্জে আসার রাস্তার বর্ণনা দিতে পারেনি সে।

নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার তাহমিনা নাজনীন বাংলানিউজকে বলেন, ওই যুবকের শরীরে ও গলায় আঘাতের চিহ্ন আছে। শরীরে যেসব আঘাতের চিহ্ন আছে সেগুলোও অনেক দিন আগের।


** নারায়ণগঞ্জে আটক রোহিঙ্গা যুবক কক্সবাজারে

বাংলাদেশ সময়: ০২১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৭
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।