তাই সঠিকভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে রাজধানীর ট্রাফিক পুলিশকে গ্রহণ করতে হয় বিভিন্ন অভিনব উপায়। সেগুলোরই একটি হচ্ছে বহুল আলোচিত ‘দড়ি থেরাপি’।
রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিজয়সরণি মোড়, বনানী ও এয়ারপোর্ট রোডে গিয়ে দেখা গেল দড়ি দিয়ে সিগন্যালগুলোতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করার দৃশ্য।
বিজয়সরণি মোড়ে চারদিক থেকে গাড়ির অনেক চাপ। যে কারণে এখানে সিগন্যালের জ্যামে পড়লে সময় লাগে অনেক। এছাড়া ভিআইপিদের যাতায়াতের কারণে সাধারণের ভোগান্তিও এখানে স্বাভাবিক বিষয়। সিগন্যালের কারণে স্বাভাবিকভাবেই বিজয়সরণি মোড়ের একদিকে গাড়ির লাইন ফার্মগেট পর্যন্ত, আরেকদিকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর গেট, এদিকে চন্দ্রিমা উদ্যান সংলগ্ন মোড় ও তার অপরপাশে তেজগাঁও যাওয়ার ফ্লাইওভার পর্যন্ত থাকে।
সিগন্যাল দিয়ে কোনো দিকের গাড়িকে থামার নির্দেশ দেবার পরও পড়িমড়ি করে এগিয়ে যেতে দেখা যায় গাড়ির চালকদের। ট্রাফিক পুলিশের দু’হাত মেলে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে পথ আগলে দাঁড়ানোর আগ পর্যন্ত গাড়িগুলোকে থামতে দেখা যায় না। এছাড়া মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল আরোহীদের বিষয়টা আরও সরেস। ট্রাফিক নিয়ম তো মানতেই চান না, বরং ট্রাফিক পুলিশকে পাশ কাটিয়ে মোটর সাইকেল চালিয়ে যেতে দেখা যায়।
অনেক সময় রাস্তার মাঝখানেও একঝাঁক মোটরসাইকেল আরোহীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। যারা ট্রাফিক পুলিশের হাবভাব দেখেই মোটরসাইকেলের পিক আপ চেপে ধরেন। আবার সিগন্যাল অনুসারে রাস্তা বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পরও অনেক মোটরসাইকেল আরোহী এগিয়ে যান। বাধ্য হয়ে অন্য গাড়িদের তখন থামতে হয়। এবং চাপটা পড়ে পেছেনের দীর্ঘ গাড়ির লাইনে। এ কারণে অনেক সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যায় বলে জানিয়েছেন বিজয়সরণিতে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশরা।
গাড়িগুলোকে থামানোর পর দড়ি টেনে দেয়া হয়। এরপরই আবার পরবর্তী সিগন্যালে দড়ি না টানানো না হলেই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। আর মূলত বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল আরোহীদের জন্যই দড়ি থেরাপি ব্যাবহার করা হয়। জানালেন বিজয়সরণিতে কর্মরত ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট ইমরান হোসেন।
বাংলানিউজকে তিনি জানান, মোটরসাইকেল চালকরা খুব বেপারোয়া। তারা আসলে নিয়ম মানতেই চান না। হুট করে চলে যান দড়ি টানা না থাকলে। এই কারণে ঘটে যায় অনেক মারাত্মক দুর্ঘটনা। মাঝখানে কিছূদিন এই দড়ি থেরাপি বন্ধ ছিল। কিন্তু আবার বাধ্য হয়ে চালু করতে হয়েছে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে জরুরি কাজে যারা যান, তারা এসে বললে সিগন্যাল ছেড়ে দিই। কিন্তু দড়ি ছাড়া ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ একেবারেই অসম্ভব। এর প্রধান কারণ অসচেতনতা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত নারী মোটরসাইকেল আরোহী সাদিয়া আফরিন বলেন, মোটর সাইকেলগুলো আগে চলে যাবে এটা তো এক প্রকার নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানি বিষয়টা বেআইনি হচ্ছে, তবুও জ্যামে বসে থাকতে প্রচণ্ড বিরক্ত লাগে। তাই এমনটা হয়।
বাংলানিউজকে একই অভিমত প্রকাশ করেছেন বিজয়সরণি মোড়ে সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা আরও বেশ কয়েকজন মোটর সাইকেল আরোহী।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দড়ি থেরাপি ব্যবহার করতে দেখা গেছে এয়ারপোর্ট ও বনানী সিগন্যালেও। বনানী ও এয়ারপোর্ট সিগন্যালের ট্রাফিক সার্জেন্টরাও জানালেন একই অভিমত। এসব সিগন্যালেও মোটর সাইকেল ও বাইসাইকেলই দড়ি থেরাপি ব্যবহারের মূল কারণ।
এয়ারপোর্ট সিগন্যালে সার্জেন্ট শফিক বলেন, গাড়িগুলোকে থামানো যায়, কিন্তু মোটর সাইকেলগুলোকে নয়। চান্স পেলে বা আমাদের নজর একটু অন্যদিকে গেলেই সাঁ করে তারা বেরিয়ে যায়। ইদানীং নতুন সমস্যা হিসেবে যোগ হয়েছে বাইসাইকেল। মোটর সাইকেলগুলোর তাও গতি বেশি থাকে বলে সমস্যা কম হয়। কিন্তু বাইসাইকেলগুলো মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
এমএএম/জেএম