ঘরবাড়ি ছেড়ে আসা,স্বজন হারানো এইসব রোহিঙ্গার প্রায় বেশির ভাগই বাংলাদেশে এসেছেন টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ হয়ে নদী ও সাগর পাড়ি দিয়ে। প্রায় পুরো টেকনাফেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন তারা।
মিয়ানমার থেকে আসা এই লাখ লাখ রোহিঙ্গার চাপ ও নেতিবাচক প্রভাব এরইমধ্যে অনুভূত হতে শুরু করেছে টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবনে। বেড়ে চলেছে স্থানীয়দের জীবনযাত্রার ব্যয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা মানবিক বিপর্যয়ের দিকেও মোড় নিতে যাচ্ছে বলেও মনে করছেন অনেকে।
টেকনাফে এসেই দেখেছিলাম হোটেল-রেস্টুরেন্টে খাবার জোটে না। লাইন দিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরই মেলে খাবার। স্থানীয় অনেকেই হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতে শতশত পিস রুটি, পারোটার অর্ডার দিয়ে রেখেছেন অভুক্ত ও জ্বরাক্রান্ত, পথশ্রমে ক্লান্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য। সেখানে তাদের জন্য সব সময়ই রান্না হচ্ছে হাজার হাজার প্যাকেট খিচুড়ি, ভাত, ডাল ও সব্জি। তাই হোটেল-রেস্টুরেন্ট মালিকদের নিয়মিত কাস্টমারদের দিকে তাকানোর সময় খুব একটা নেই।
অন্যদিকে এর প্রভাব পড়েছে বাজারেও। কিছুদিন আগেও আলুর কেজি উঠেছিলো ১০০ টাকায়। এখন তা নেমে ৫০ ও ৬০ টাকার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে স্থানীয়দের মতে, টেকনাফের গ্রামগুলোতে ঠিকই ৭০ থেকে ৮০ টাকা করে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সব্জির দামও আকাশছোঁয়া।
অন্যদিকে রোহিঙ্গাঢলের কারণে চালাঘর তোলার জন্য বাঁশ, প্লাস্টিক শিট, লবণ ক্ষেতের কালো পলিথিন, প্লাস্টিকের সুতা, পানির ড্রাম, অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র, মাদুরের ব্যবসা জমজমাট। সুযোগসন্ধানী স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মিয়ানমার থেকে আগে আসা পুরোনো রোহিঙ্গারা এই ব্যবসা করে আখের গোছাচ্ছে। এই দেশে টাকার মান ও জিনিসপত্রের সঠিক দাম না জানায় অনেকেই নতুন আসা রোহিঙ্গাদের ঠকাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে এইসব পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন অনেকে।
স্থানীয়রা বলছেন, চলমান সংকটে এমনিতেই নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। বসে রয়েছে বেশিরভাগ সমুদ্রগামী মাছধরা ট্রলারও। ফলে স্থানীয়দের নগদ টাকার সংস্থান প্রায় বন্ধ। তার উপর আবার বাজারে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, সব্জির অস্বাভাবিক চাহিদার কারণে দাম এক লাফে আকাশে উঠে যাওয়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে স্থানীয়দের জীবনে। বেড়ে যাচ্ছে সব খরচ। কেবল তাই নয়, টেকনাফ থেকে কক্সবাজারগামী, বাস, ট্রাক, লরি, অটোরিক্সা, ইজিবাইকের সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। দুই গুণ বেশি ভাড়াতেও গণ পরিবহন মিলছে না। সবাই অধিক ভাড়ায় কেবল রোহিঙ্গাদেরই অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে। এতে অল্প সময়ে অধিক টাকা আয়ের মওকা মিলেছে পরিবহন মালিকদের।
টেকনাফের স্থানীয় ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দীন জানান, প্রথম ধাক্কায় আলুর কেজি ১০০ টাকায় উঠেছিল। এখন টেকনাফে ৫০ ও গ্রামে ৬০/৭০ বিক্রি হচ্ছে। বেশিরভাগ সব্জিই ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা পেঁপে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে মাছের দাম আকাশছোঁয়া। সিটিং বাসে আগে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ভাড়া ছিলো ১২০ টাকা। এখন গাড়িতে উঠলেই একশ টাকা নিচ্ছে। ৫০ টাকার অটো ভাড়া হয়েছে ১০০ টাকারও বেশি। তারপরও টাকা দিলেই যে আপনি পরিবহন পাবেন এমন নিশ্চয়তাটুকুও নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
আরএম/জেএম
আরও পড়ুন
** মিনারাকে নিয়েই যতো আতংক
** গুলিতে ঝাঁঝরা, শরীরে পচন সাব্বিরের
** জন্মের অভ্যর্থনা যেখানে গম্ভীর, নিরুৎসব, বিষণ্ন
** শৃঙ্খলাহীন ত্রাণ বিতরণ
** শেইম লেস লেডি অ্যান্ড ফেইস অব বুড্ডিস্ট টেররের গল্প
** বোকা বানানো হয় রোহিঙ্গাদের: বিশেষ সাক্ষাৎকারে ইদ্রিস
** স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা
** আজও জ্বলছে সীমান্তের ওপারের রোহিঙ্গা গ্রাম!
** ‘সেপ্টেম্বর অন টেকনাফ রোড’
** সব হারানোর কষ্ট
** আঞ্জুমান পাড়ায় ঘেরের আইলে শরণার্থী জীবন
** বাংলাদেশমুখী আরো ৫ লাখ রোহিঙ্গা
** রোহিঙ্গা পার করে রাতারাতি কোটিপতি শাহপরীর নৌকা মালিকরা
** প্রাণে বাঁচার আনন্দ, ধন্যবাদ বাংলাদেশ
** রোহিঙ্গাময় টেকনাফ, ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই’ আর!
** ওপারে জ্বলছে আগুন, এপারে মানবিকতা
** এর নাম কি মানব জনম!