ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নিউইয়র্কের পথে প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭
নিউইয়র্কের পথে প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিদায় জানান মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের নেতা, বেসামরিক ও সামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। ছবি: পিআইডি

ঢাকা: জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-১৯১১ ফ্লাইট নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যায়।

বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর জ্যেষ্ঠ সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন তিন বাহিনী প্রধান, পুলিশ প্রধানসহ বেসামরিক ও সামরিক উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তারা।

স্থানীয় সময় বিকেল ৫টায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবী বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন তিনি। সেখানে যাত্রা বিরতির পর ১৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ১০টায় ইতিহাদ এয়ারলাইন্সের ইওয়াই-১০১ ফ্লাইটে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হবেন শেখ হাসিনা। স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা প্রধানমন্ত্রীর।

২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সক্রিয় অংশগ্রহণ করবেন শেখ হাসিনা। এর ফাঁকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও মিলিত হবেন তিনি।

নিউইয়র্কে পৌঁছানোর পরদিনই ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী অংশ নেবেন যৌন নিপীড়ন ও নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ক একটি শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে।  

এরপর ‘জাতিসংঘ সংস্কারে রাজনৈতিক ঘোষণা’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এক সভায়ও অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে অনুষ্ঠেয় এ সভায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সভাপতিত্ব করবেন এবং জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বক্তব্য রাখবেন।  

একই দিন প্রধানমন্ত্রী ভালো কাজ ও অংশগ্রহণমূলক প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ভূমিকা বিষয়ক একটি শীর্ষ পর্যায়ের ফলোআপ বৈঠকে অংশ নেবেন।

বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিদায় জানান মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের নেতা, বেসামরিক ও সামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।  ছবি: পিআইডি
১৯ সেপ্টেম্বর তিনি অংশ নেবেন ‘নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে কেউ পিছিয়ে পড়বে না বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের সর্বোচ্চ পরিষদের শীর্ষ পর্যায়ের গোলটেবিল আলোচনায়’।

একইদিন রোহিঙ্গাদের ওপরে মিয়ানমার সরকারের সহিংসতা, নিপীড়ন এবং এর ফলশ্রুতিতে প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার বিষয়ে ওআইসি’র যোগাযোগ গ্রুপের একটি সভায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।

২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালে বাংলাদেশের আয়োজনে দু’টি উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভা দু’টি হলো— ‘এসডিজি বাস্তবায়ন, অর্থায়ন ও পর্যবেক্ষণ: দক্ষিণ দক্ষিণ ও ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্ভাবনমূলক কাজ ভাগাভাগি’ এবং ‘এসডিজির জন্য অর্থায়নে নীতি ভিশন তৈরি: এসডিজি খাতে বেসরকারি বিনিয়োগের সুবিধা বাড়ানো’। দুই সভায়ই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।  

এদিন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পুনর্গঠন এবং সংস্কারের বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি ইথিওপিয়া কর্তৃক আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের (রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান পর্যায়ের) উন্মুক্ত বিতর্কেও অংশগ্রহণ নেবেন শেখ হাসিনা।

এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ২০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।  

২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের মহাসচিবের উদ্যোগে গঠিত পানিসম্পদ বিষয়ক শীর্ষ পর্যায়ের পরিষদের চতুর্থ বৈঠকেও অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।  

২১ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে বক্তব্য রাখবেন। প্রতিবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় বক্তব্য রাখবেন।

বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইস্যু, দারিদ্র্য, সুশাসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

সফরের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, এবার প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণগুলো তুলে ধরে এর আশু সমাধানে বাংলাদেশের প্রস্তাবগুলো সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরবেন। তিনি মিয়ানমার কর্তৃক রোহিঙ্গাদের ওপরে চালানো জাতিগত নিধন অভিযান মানবতা এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে যে কোনো গণহত্যা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাবেন।

তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী অবিলম্বে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নেরও জোর দাবি জানাবেন জাতিসংঘে।  

জানা গেছে, ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিও জানাবেন প্রধানমন্ত্রী।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞ, বিশেষ করে একাত্তরের ২৫ মার্চের গণহত্যার কথা স্মরণ করে দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত হয় গত ১১ মার্চ।

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের বিভিন্ন উদ্যোগও তুলে ধরবেন জাতিসংঘ অধিবেশনে।

এ সময় তিনি জাতিসংঘের শান্তি প্রতিষ্ঠা তহবিল ও ভিকটিম সহায়তা তহবিলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এক লাখ ডলার অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেবেন।

গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, নারীর ক্ষমতায়ন, অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার আদায়, দারিদ্র্য দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশের কর্মপন্থা ও সাফল্যের কথা তুলে ধরার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া সুনির্দিষ্ট কার্যক্রমও তুলে ধরবেন তিনি।

এসব কর্মসূচির বাইরে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হবেন।

২৯ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসির ডালেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ারের একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন প্রধানমন্ত্রী।  এর মধ্যে লন্ডনে যাত্রা বিরতি দিয়ে ২ অক্টোবর ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৭
এমইউএম/এইচএ/

** শনিবার দুপুরে নিউইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।