সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হলেও দীর্ঘ দিন তাদের রাখা বাংলাদেশের জন্য বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। তাই আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে এদেরকে দ্রুত ফেরত পাঠানোকেই টার্গেট করা হয়েছে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের ওই নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এক্ষেত্রে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের ভূমিকার পাশাপাশি চীন ও ভারতের ভূমিকা অনেক বড় প্রভাব ফেলবে। ভারত, চীন, মিয়ানমার, বাংলাদেশ ভৌগলিক অবস্থান থেকে কাছাকাছি এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র। মিয়ানমারের উপর চীন ও ভারতের প্রভাব রয়েছে এবং এই সংকট নিরসনে এ প্রভাব কাজ করবে।
মিয়ানমারের সঙ্গে সব চেয়ে ভালো সম্পর্ক রয়েছে চীনের। ভারতের সঙ্গেও মিয়ানমারের সম্পর্ক ভাল। ভারত এবং চীন এই উভয় দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। ফলে এ দুটি দেশ বাংলাদেশের সমস্যার বিষয়টি সহজেই বুঝতে পারবে এবং এই সংকট সমাধানে দেশ দুইটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অব্যাহত নির্যাতন ও গণহত্যার ঘটনায় গত ২০ দিনে প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। রোহিঙ্গা প্রবেশের স্রোত অব্যাহত রয়েছে এবং এই সংখ্যা ১০ লাখে দাঁড়াতে পারে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও সংস্থার ধারণা। ইতোমধ্যেই রোহিঙ্গাদের এই চাপ বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের শুধু খাদ্য এবং রাখার সমস্যাই বড় সমস্যা নয়, এরা দীর্ঘ দিন এখানে থাকলে আরও অনেক বড় বড় সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিপথগামী কোনো গোষ্ঠীর হাতে এদের কেউ কেউ ব্যবহার হয় কি না সে বিষয়টিও সরকারের চিন্তায় রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন গোষ্ঠী তৎপর আছে। এই সব গোষ্ঠীর অপতৎপরতা শক্ত হাতে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। নির্যাতিত ও দেশ ছাড়া এই বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা দীর্ঘদিন এখানে থাকলে তাদের কাউকে কাউকে এই সব গোষ্ঠী ব্যবহারের সুযোগ নিতে পারে। এছাড়া সার্বিক আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টিও সরকারের ভাবনায় রয়েছে। এ সব কারণে দ্রুত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টিই এখন সরকারের প্রধান এজেন্ডা।
সরকারের ওই নীতিনির্ধারকরা জানান, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এই বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক চাপ জোরালো করার জন্য জাতিসংঘের অধিবেশনকে কাজে লাগানো হবে। মিয়ানমারের উপর চাপ দিতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে বলেছেন, মানবিক কারণে আমরা এদের আশ্রয় দিয়েছি। এদেরকে ফেরত নিতে হবে। আমি জাতিসংঘে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো।
এদিকে চীন ও ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও এই দুই দেশের সঙ্গে তৎপরতা চালানো হবে। চলতি মাসে চীনে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে এবং আগামী মাসে ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি‘র আমন্ত্রণে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল যাবে। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য দুই দেশের দুই ক্ষমতাসীন পার্টিকে এ সময় অনুরোধ করা হবে। চীন সফরের নেতৃত্ব দেবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্ণেল (অব.) ফারুক খান এবং ভারত সফরে নেতৃত্ব দেবেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ওবায়দুল কাদের দলের এক সভায় বলেন, আমাদের একটা শক্তিশালী টিম চীন যাচ্ছে। সেখানে দ্বিপাক্ষিক বিষয় ছাড়াও অবশ্যই রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হবে। আগামী মাসে বিজেপি‘র সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের আমন্ত্রণে একটি টিম ভারত যাবে। আগামী মাসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বাংলাদেশ সফরের পরেই এ সফর হবে বলে আমরা আশা করি।
এ সব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কর্ণেল (অব.) ফারুক খান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে সেখানে যাচ্ছি। অবশ্যই আমরা এ বিষয়টি আলোচনায় তুলবো। আশা করি চীন আমাদের সমস্যা বুঝতে পারবে। কারণ চীনের সীমান্তেও মিয়ানমারের অধিবাসীরা আছে। তারা অত্যাচারিত হয়ে চীনে আশ্রয় নিয়েছিলো। চীন যেহেতু শক্তিশালী দেশ তাই চীনের চাপে মিয়ানমার পরে তাদেরকে ফেরত নিয়েছে। চীন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বিষয়টি বুঝতে পারবে এবং সহযোগিতা করবে বলে আশা করি।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারকে এই রোহিঙ্গাদের ফোরত নিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেখানে একটি সেফ জোন করে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে তাদের রাখা যেতে পারে। কসোভোতে জাতিসংঘ এটা করেছে এবং সফল হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭
এসকে/আরআই