ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘শখের তোলা আশি টেখা, নিলে নেন’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭
‘শখের তোলা আশি টেখা, নিলে নেন’ লেবু হাতে বিক্রেতা চাঁন মিয়া, ছবি: বাংলানিউজ

সিলেট: বিক্রির জন্য মাত্র ১৬টি জারা লেবু নিয়ে নগরীতে এসেছেন সিলেটের হরিপুর এলাকার বাসিন্দা চাঁন মিয়া।

ওজনে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার কেজি এক-একটি লেবু। ব্যস্ত সড়কে রাস্তার ধারে খাঁচা পেতে বসতেই  লোকজনের ভিড়।

কৌতুহল বশত; কেউ দেখতে, কেউ এমনিতে দর হাঁকাচ্ছেন, কেউবা কিনতে। লেবুর দাম বেশি হওয়ায় ভিড় জমান উসুক জনতা।

বিক্রি করতে দর কষাকষি হলেও দামও ছাড়ছেন না চাঁন মিয়া। একটু কম দামে বিক্রি করেন, বলতেই চাঁন মিয়া বলে ওঠেন-‘শখের তোলা আশি টেখা, নিলে নেন। লেবু , ছবি: বাংলানিউজএ লেবুকে সিলেটে বলা হয় শাসনি লেবু। সাতকড়ার মতো সিলেটে জনপ্রিয় এ শাসনি লেবু। পার্থক্য শুধু একটাই-সাতকড়া খেতে হয় রান্না করে, আর শাসনি লেবুর ঠনা (খোসা) ও রস ভাতের সঙ্গে কাঁচা খাওয়া যায়। ফলে সিলেট ও সিলেটের বাইরে বিভিন্ন জেলায় রয়েছে এ লেবুর কদর একটু বেশি।

আকারে খানিকটা ছোট-বড় শাসনি লেবু নিম্নে ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা থেকে হাজার দুই হাজার টাকা দর হাঁকাচ্ছেন চাঁন মিয়া। দাম এতো বেশি জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এর চেয়ে বড় লেবুও আছে, দাম পড়বে দুই থেকে তিন হাজার টেখা। ’

লেবুগুলো নিজের গাছের কি না, জানতে চাইলে চাঁন মিয়া বলেন, ‘গ্রামে বিভিন্ন বাড়িতে ফলে। নির্দিষ্ট কোনো বাগান নেই। সেসব বাড়ি থেকে কিনে এনে বিক্রি করেন তিনি। শহরে নিয়ে এসেছি, দু’টাকা লাভের আশায়। ’

‘সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরের পাহাড়ি ভূমি উৎলার পাড়, শ্যামপুর, বাগরখাল, মালগ্রাম, ফতেহপুর গ্রামে বিভিন্ন বাড়িতে এসব লেবুর ফলন হয়, বলেন চাঁন মিয়া। ’

জৈন্তাপুর ছাড়াও বৃহত্তর সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলে লেবুর চাষ হয়। তবে মাটির গুনাগুন ভাল হলে জারা লেবুর চাষ ভাল হয়, আকৃতিও বড় হয়। লেবুর দাম নিয়ে কথা বলছেন বিক্রেতা চাঁন মিয়া, ছবি: বাংলানিউজসিলেটের বাজারে প্রতিনিয়ত জারা লেবু উঠলেও আকার-আকৃতি ও ওজনের দিক থেকে চাঁন মিয়ার লেবুর সঙ্গে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। এক-একটি লেবু ওজনে সাড়ে ৩ থেকে ৪কেজি হবে।

রসে ভরা লেবুর খোসাও চিবিয়ে খেতে অনেকটা মিষ্টি লাগে। সিলেটে আসা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে এই লেবু।

ফেব্রুয়ারি ও আগস্টে জারা লেবুর ফলন ভাল হয় বলে জানিয়েছেন কৃষিবিদরা। এ মৌসুমে সবুজ সতেজ জারা লেবু পাওয়া যায় সিলেটের বাজারে। স্থানীয়ভাবে দেশের অভ্যন্তরে ছাড়াও ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে রফতানি হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের আওতাধীন জৈন্তাপুর সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ঝুটন চন্দ্র সরকার বাংলানিউজকে বলেন, বেলে-দু’আশ মাটিতে জারা লেবুর ফলন ভাল হয়। বছরের মাত্র দুইবার এ লেবু ধরে।

প্রথম দফা ফেব্রুয়ারিতে। লেবু হাতে বিক্রেতা চাঁন মিয়া, ছবি: বাংলানিউজতখন লেবু আরো পুষ্ট হয়, বড় হয়। পরে আগস্টের ফলনে লেবুর আকৃতি একটু ছোট হয়ে আসে। জারা লেবু বড় হতে অন্তত তিনমাস সময় লাগে। কমপক্ষে ছয় থেকে সাতশ’ গ্রাম ওজনের লেবু রফতানিযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।

তিনি বলেন, সিলেটের হরিপুর ছাড়াও জৈন্তাপুর নিজপাঠ ইউনিয়ন, ফেঞ্চুগঞ্জ, কানাইঘাটে জারা লেবুর ফলন হয়। কাটিং পদ্ধতিতে রূপনকৃত চারা থেকে দুই বছরের মাথায় ধরা শুরু করে ১০ বছর পর্যন্ত লেবু ধরে।

এবার এক মাসের মাথায় লেবু ধরানোর প্রক্রিয়া চালিয়েছেন এই বিজ্ঞানী। এ চারা কৃষকদের মধ্যেও বিলিয়ে দেবেন, বলেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭
এনইউ/এএটি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।