ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

পুলিশকে আইনের রক্ষকের ভূমিকায় দেখতে চাই

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭
পুলিশকে আইনের রক্ষকের ভূমিকায় দেখতে চাই পুলিশ একাডেমিতে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী

রাজশাহী:প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পুলিশকে আইনের রক্ষকের ভূমিকায় দেখতে চাই।দেশের প্রচলিত আইন, সততা ও নৈতিক মূল্যবোধই হবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের পথ প্রদর্শক।’

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সরদহে অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৪তম বিসিএস (পুলিশ) শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে অংশ নিয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'শান্তি নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রতীক বাংলাদেশ পুলিশ।

শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামেই নয়, দেশের সঙ্কটময় মুহূর্তে দেশের পুলিশ সদস্যরা সাহসিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ পুলিশের আন্তরিকতা, কর্মদক্ষতা ও পেশাদারিত্ব দেশবাসীর কাছে প্রশংসিত হচ্ছে। তাই আমরা এমন পুলিশ গঠন করবো যে, পুলিশ হবে জনগণের সেবক, শাসক নয়'।

নতুন এ পুলিশ কর্মকর্তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই মুহূর্তে দেশমাতৃকাকে ভালোবেসে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর বিশেষ অবদানের কথা উল্লেখ করে পূর্বসুরীদের অনুসরণ করতে নতুন পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে রাজারবাগ থেকে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে পুলিশ বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধে সারদা পুলিশ একাডেমিরও বিশেষ ভূমিকা আছে। এখানে ২৪ জন কর্মকর্তা শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধে জীবন দেওয়া সব পুলিশের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের মাগফেরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, 'স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুলিশ বাহিনীকে প্রথম দক্ষ করে গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলেছিলেন। আর অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সর্বপ্রথম দরকার আইন-শৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা। এজন্য আমরা সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি পুলিশ বাহিনীকে দক্ষ ও আধুনিক করে গড়ে তুলতে। আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে সে উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি'।

এ সময় পিবিআই, ট্যুরিস্ট পুলিশ কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট গঠনসহ পুলিশের উন্নয়নে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের বিবরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা জানান, পুলিশ যেন আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে পারে এজন্য তাদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। তাদের পদ-পদবীও উন্নীত করা হয়েছে। পুলিশের কল্যাণে সরকারের আরও অনেক কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা উল্লেখ করে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস মোকাবেলায় পুলিশকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।  কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করছেন প্রধানমন্ত্রী

নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘ আমি নবীন পুলিশ কর্মকর্তাদের বলবো, পুলিশ সদস্যদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস নবীন পুলিশ কর্মকর্তারা অর্জিত জ্ঞান, শৃঙ্খলা, পেশাদারিত্ব, সততা ও নিষ্ঠার সাথে দেশের সার্বিক কল্যাণে নিয়োজিত থাকবেন।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আলী সরকার, আইজিপি একেএম শহীদুল হক, অতিরিক্ত আইজিপি ও বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নাজিবুর রহমান, উপাধ্যক্ষ আবদুল্লাহ আল মাহমুদসহ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্যারেড পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশিক্ষণকালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। এর মধ্যে প্রশিক্ষণে বেস্ট একাডেমিক শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার মাশফাকুর রহমান, অশ্বারোহণে শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার বেলাল হোসেন এবং সর্ব বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করায় শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার সন্দীপ সরকারকে পদক প্রদান করা হয়। ৩৪ তম বিসিএসের ১৪১ কর্মকর্তা পুলিশ অফিসার হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করছেন। এর মধ্যে ২৬ জন নারী রয়েছেন।

এর আগে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বেলা দশটায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার।

পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজে অংশ নেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ একাডেমিতে বিশ্রাম নেন। এখান থেকে দুপুর ২টায় প্রধানমন্ত্রী হরিয়ানে থাকা রাজশাহী চিনিকল মাঠের উদ্দেশে রওনা দিবেন। সেখানে রাজশাহীর ৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১৭টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। পরে পবা উপজেলা আওয়ামীলীগের জনসভায় ভাষণ দিবেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সময়: ১২০১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭
আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।