ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার

শরিফুল ইসলাম জুয়েল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৭
প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার উদ্বোধনের অপেক্ষায় মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার- ছবি: শাকিল

ঢাকা: রাজধানীবাসীর বহুল আকাঙ্ক্ষিত মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ সমন্বিত ফ্লাইওভার অবশেষে চালু হতে যাচ্ছে। নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হওয়ায় এখন প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় ৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটারের এ ফ্লাইওভার।

ফলে দীর্ঘ ৬ বছরের অপেক্ষা-দুর্ভোগের অবসান ঘটিয়ে যান চলাচলে পুরোপুরি খুলে যাচ্ছে তিনভাগে নির্মিত ফ্লাইওভারটি।

বুধবার(১৩ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নির্মাণকাজ শেষে ফ্লাইওভারে এখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও রং করার কাজ চলছে।

শেষ এ কাজটুকু আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল।

সূত্র জানায়, এ বছর কয়েক দফায় এ ফ্লাইওভার উদ্বোধনের ঘোষণা দেওয়া হলেও যথাসময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। তবে এ যাত্রা আর তেমনটি হওয়ার আশঙ্কা একদমই নেই।

এদিকে রাজধানীর সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, মগবাজার রেলক্রসিং, মৌচাক, শান্তিনগর, মালিবাগ এলাকায় আগে থেকেই লেগে থাকা যানজট ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের কারণে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর রাস্তায় বৃষ্টির দিনে কাদা-পানি আর রোদের দিনে ধুলায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন মানুষ। রিকশা-ভ্যানগাড়ি-সিএনজির মতো ছোট ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ছিল নৈমিত্তিক। নারী-শিশু ও স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ বহু মানুষ এ পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন, আহত হয়েছেন।


প্রকল্পের পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘সকল কাজ শেষ হয়েছে। এখন রং করার কাজ চলছে, যা চলতি সপ্তাহেই শেষ হবে। আমরা উদ্বোধনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত আছি। এখন মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময়ের আবেদন করা হয়েছে। তিনি যেদিন সময় দেবেন, সেদিনই উদ্বোধন করা হবে’।

গত বছরের ৩০ মার্চ চালু হয় মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারের সাতরাস্তা-মগবাজার অংশ।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অংশেরও উদ্বোধন করেন। ১৫ সেপ্টেম্বর ইস্কাটন-মৌচাক অংশের যান চলাচল উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আর গত ১৭ মে খুলে দেওয়া হয় ফ্লাইওভারটির এফডিসি মোড় থেকে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত কারওয়ানবাজারমুখী অংশ।

এখন চালুর অপেক্ষায় রয়েছে শান্তিনগর থেকে বাংলামোটর ও রামপুরা থেকে শান্তিনগর হয়ে রাজারবাগ অংশ।

প্রকল্প অনুসারে, তিন ধাপের মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারের সাতরাস্তা থেকে হলিফ্যামিলি হাসপাতাল পর্যন্ত অংশটি মূল অংশ হিসেবে ধরা হয়। ইস্কাটন থেকে মৌচাক পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশেও যানবাহন চলাচল করছে। শেষ ধাপ রামপুরা থেকে মালিবাগ-মৌচাক হয়ে রাজারবাগ-শান্তিনগরের কাজও এখন চূড়ান্ত হওয়ার পথে।

রাজধানীর মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর ও তেজগাঁওয়ের যানজট নিরসন ও অবাধ যান চলাচল নিশ্চিত করতে ২০১১ সালে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পটি গ্রহণ করে সরকার। ওই বছরের ৮ মার্চ একনেকে প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে।

২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন। সে সময় ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরে মালিবাগ-রামপুরা-শান্তিনগর-রাজারবাগ-এফডিসি মোড়-সোনারগাঁও হোটেল এলাকা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়।  


সমন্বিত এ ফ্লাইওভারের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো ২০১৪ সালের মধ্যে। পরে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করে চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু তাও হয়নি। এরপর নকশা পরিবর্তন করায় গত বছরের ১৯ জানুয়ারি একনেক সভায় প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়। এ কারণে মেয়াদও গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু ওই সময়েও কাজ শেষ না হওয়ায় আবারো চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ে।

তৃতীয়বারে মত বেঁধে দেওয়া এ সময়েও কাজ শেষ না হওয়ায় উদ্বোধন করা যায়নি ফ্লাইওভারটির। তবে আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
এভাবে মেয়াদ বাড়ার পাশাপাশি মেগা এ প্রকল্পের ব্যয়ও কয়েক ধাপে প্রায় ৫৮ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয়েছে এক হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।  আর এ সড়কে চলাচলকারী রাজধানীবাসীর দুর্ভোগও সীমা ছাড়িয়েছে।  

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি), নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭
এসআইজে/এএসআর/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।