ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অবৈধ ক্ষমতা দখলের সময় প্রধান বিচারপতি কোথায় ছিলেন?

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭
অবৈধ ক্ষমতা দখলের সময় প্রধান বিচারপতি কোথায় ছিলেন?

সংসদ ভবন থেকে: সংবিধানকে স্থগিত করে যখন সেনাশাসকরা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে দেশ শাসন করেছিলেন তখন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা কোথায় ছিলেন বলে প্রশ্ন তুলেছেন ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, আজকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে বিচারপতিরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুলিং দিচ্ছেন, অবজারভেশন দিচ্ছেন, কিন্তু জাতির পিতার সপরিবারে নিহত হওয়ার পরে সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার করা যাবে না-এমন আইন অবৈধভাবে পাস হওয়ার পরেও বিচার বিভাগ কেন সম্পূর্ণভাবে নির্লিপ্ত ও নিশ্চুপ ছিল? সংবিধান সমুন্নত রাখার শপথ নিয়েও কেন সেদিন বিচারকরা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেননি? সে না হয় তিন যুগ আগের কথা। তখন হয়তো বা আমাদের স্বঘোষিত আইনের দেবতা সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিচারালয়ে ছিলেন না।

কিন্তু ২০০৬ সালে যখন সেনাশাসিত সরকার আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেশ পরিচালনা করেছিল এবং ক্যাঙ্গারু কোর্ট বানিয়ে রাজনীতিবিদদের বিচারের নামে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া চালু করেছিল, আমার প্রশ্ন, সিনহা সাহেব তখন কি অবকাশে গিয়েছিলেন? নাকি তার চৈতন্যের বিনাশ ঘটেছিল?

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সংসদে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ (১) বিধি অনুযায়ী প্রস্তাব সাধারণের ওপর আনীত নোটিশের আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তাহজীব আলম সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে তিনি নির্বাচন প্রক্রিয়া, সংসদীয় চর্চা, রীতিনীতি ও কার্যক্রম নিয়ে আপত্তিকর এবং নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। সংসদের পরিপক্কতা ও সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থা নিয়েও তিনি মন্তব্য করেছেন এবং অবিবেচকের মতো দেখিয়েছেন, সংসদের হাতে বিচারকদের অভিশংসন ক্ষমতা দেওয়া আত্মঘাতী হবে। তিনি (প্রধান বিচারপতি) শুধু সংসদ ও সদস্যদের খাটো করেননি, সমাজ-রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান পঙ্গুত্ববরণ করেছে বলে বিতর্কিত অভিমত দিয়েছেন। এটি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক, অনভিপ্রেত এবং সিনহা সাহেবের এক্তিয়ার বহির্ভূত। তবে তার মতে এই সামগ্রিক অবক্ষয়ের মধ্যে একমাত্র স্বচ্ছ এবং জনগণের আস্থাশীল প্রতিষ্ঠান হলো বিচার বিভাগ।

তাহজীব আলম আরও বলেন, সিনহা সাহেব একেবারেই অপ্রাসঙ্গিকভাবে ইতিহাসকে টেনে এনেছেন এবং বিতর্ক তৈরি করেছেন। বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি, সিনহা সাহেব জাতির পিতাকে ইঙ্গিত করেও খাটো করেছেন। এইসব বিতর্কিত যুক্তি এবং পর্যবেক্ষণের বাইরে সবচেয়ে বিপজ্জনকভাবে যে বিষয়টি আমি এই রায়ে লক্ষ্য করেছি তা হলো, সিনহা সাহেবের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচারবিভাগের পরিধি এবং বিস্তৃতি।

তিনি আরো বলেন, সিনহা সাহেব বিচার বিভাগকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করেছেন। কিন্তু স্বাধীন হওয়ার মানে এই নয় যে, বিচার বিভাগ দায়বদ্ধতার ঊর্ধ্বে থাকবে। গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রে এই দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে পারে শুধু সংসদ। আমি সিনহা সাহেবকে বিতর্কিত পর্যবেক্ষণগুলো প্রত্যাহার করতে বলব এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের প্রতি আমার দাবি, তারা যাতে রিভিউ করার ব্যবস্থা নেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭
এসএম/এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।