এন্ট্রি করে ভেতরে পা বাড়াতেই লাল দেয়ালে মোটা মোটা করে লেখা সাদা অক্ষরের নির্দেশনা চোখে ভাসলো। যেখানে লেখা আছে ‘আবেদনপত্র জমা দেওয়ার কাউন্টার নম্বর ১০৭, এই অফিস সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত।
ডান দিকে তীর দিয়ে দেখানো হয়েছে তথ্য কেন্দ্র এই দিকে। আর দেয়ালের সঙ্গে রাখা হয়েছে ছোট ছোট পাঁচটি ফেস্টুন।
যেখানে লাল, নীল আর কালো কালিতে লেখা আছে কোথায় পাসপোর্ট ফরম পাবেন, কীভাবে পূরণ করবেন, পাসপোর্টের সঙ্গে কী কী আনুসাঙ্গিক কাগজ ও প্রমাণপত্র লাগবে, নিজেকে কীভাবে দালাল থেকে মুক্ত রাখবেন ইত্যাদি নির্দেশনা ও পরামর্শ।
তাই সরেজমিনে গিয়ে প্রথমে মনের মধ্যে ধাক্কা লাগলেও আগের পাসপোর্ট অফিস আর এখনকার অফিসের বিস্তর ফারাক মালুম হলো। বোঝা গেলে কোনো সচেতন মানুষ পাসপোর্ট করতে এসে যদি কেবল এসব নির্দেশনা দেখেন তাহলে তাকে আর অন্য কারো দ্বারা প্রতারিত হতে হবে না এবং ঘরে-ঘরে দৌড়ঝাঁপ করে হয়রানিও হতে হবে না।
বিশ্বাস না হলেও ধ্রুব সত্য হচ্ছে, বদলে গেছে রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের ভেতরের চেহারা। আগে যেখানে ভেতরেই দালাল ঘোরাফেরা করতো। যেখানে দালাল ধরা ছাড়া কাজই হতো না। এখন সেখানে নিজেরাই গিয়ে পাসপোর্টের ফরম সংগ্রহ, পূরণ, ছবি তোলা এবং রশীদ সংগ্রহ করছেন পাসপোর্ট প্রত্যাশীরা।
আর শারীরিকভাবে অক্ষম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের এখন আর উপরে গিয়ে সেবা নিতে হয় না। কলিং বেল টিপলে স্বয়ং পাসপোর্ট কর্মকর্তাই হাজির হয়ে যান তার সামনে। ফরম পূরণ করে ছবি তুলতে ঘরে যাওয়ার জন্য তাদের জন্য করা হয়েছে হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা।
কথা বলতেই জানা গেলো, সরকারি কোষাগার থেকে নয়। বিভাগীয় এই পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের একটি অংশ জড়ো করে জনস্বার্থে এই হুইল চেয়ারটি কেনা। তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এই চেয়ারে বসে কোনো হয়রানি ছাড়াই রাজশাহী বিভাগীয় এই পাসপোর্ট অফিসে এখন স্বস্তিতে সেবা গ্রহণ করতে পারছেন।
আরও চমক লাগলো ১০৭ নম্বর কাউন্টারে গিয়ে। কারণ হচ্ছে, কাউন্টারে বসে যিনি পাসপোর্টের ফরম জমা নিচ্ছেন, নিজ হাতে সংশোধন করে দিচ্ছেন, তিনি খোদ এই অফিসের সহকারী পরিচালক আবজাউল আলম। ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর বিভাগীয় এই পাসপোর্ট অফিসে যোগদান করেছেন। কিন্তু এক বছর পূর্ণ না হতেই বদলে ফেলেছেন পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে গিয়ে জনদুর্ভোগের সেই পুরনো চেহারা।
পাসপোর্ট সহায়ক কর্মকর্তা আলমাস জানালেন, এখানে যোগদানের পর থেকেই কিছু ব্যতিক্রম করার চেষ্টা করছেন সহকারী পরিচালক আবজাউল আলম। প্রতিদিন অফিস শুরুর সময় চাপ বেশি থাকে। তাই তিনি সবাইকে সহযোগিতা করতে নিজের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ ছেড়ে নিচে নেমে এসে তিন ঘণ্টা করে কাউন্টারে বসেন।
সরাসরি সেবা দেন পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের। তিনি স্বয়ং নিচে থাকায় অনেক জটিল সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান মেলে এখানেই। এজন্য অফিসের ১০৭ নম্বর কাউন্টার এখন পাসপোর্ট প্রত্যাশীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। ভালো কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ গত বছর ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তাও নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের সহকারী পরিচালক আবজাউল আলম বাংলানিউজকে জানান, জনসেবা মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতেই তার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। দালাল মুক্ত পরিবেশে কোনো উটকো ঝামেলা ছাড়া যেন সবাই জরুরি এই সেবা পেতে পারেন এজন্য তার তরফ থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
তিনি আসার পর গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দুই লাখ ৮১ হাজার ৯শ’ ৭২টি মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) সেবা প্রত্যাশীদের হাতে তুলে দিতে পেরেছেন।
আর এই অফিসের মাধ্যমে ৯৩ কোটি ২৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে। এছাড়া বিদেশি নাগরিকদের ১ হাজার ৬শ’ ৫০টি মেশিনি রিডেবল ভিসা (এমআরভি) প্রদান করতে পেরেছেন। ভালো কিছু করতে তার এই প্রচেষ্টা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে বলে জানান সহকারী পরিচালক আবজাউল আলম।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
এসএস/জেডএম