ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সরে যাচ্ছে চায়না কোম্পানি, দোলাচলে ঢাকা-সিলেট চারলেন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭
সরে যাচ্ছে চায়না কোম্পানি, দোলাচলে ঢাকা-সিলেট চারলেন

ঢাকা: বেশ কয়েকদফা দর কষাকষির পরও ঢাকা-সিলেট চারলেন নির্মাণে চায়না  কোম্পানি হারবারের সঙ্গে মূল্য চূড়ান্ত করতে পারেনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। শেষ পর্যন্ত চায়না হারবার সরকারের নির্ধারিত মূল্যে প্রকল্পটির কাজ করবে কি-না- তা ঈদ-উল আযহার পর পরই জানানোর কথা ছিল।

কিন্তু ঈদ শেষে আর যোগাযোগ করেনি চায়না হারবার। এ ‍অবস্থায় পুরো প্রকল্পটির বাস্তবায়নই অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে।

 

চায়না হারবার যদি নির্মাণ কাজ না করে, তাহলে নির্ধারিত ২০১৮ সালের মধ্যে ঢাকা-সিলেট চারলেন হবে না- বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দাযিত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, চীনের কোম্পানি হারবার ইঞ্জিনিয়ার ঢাকা-সিলেট ‍চারলেন সরকার নির্ধারিত দামে না করলে এডিবি, জাইকা বা নিজস্ব অর্থায়নে করার চিন্তা করবে সরকার। তখন এটি শেষ হতে ২০২২ সাল লেগে যাবে। তবে শুধু দরদাম ঠিক করা নিয়েই এক বছর পার হয়ে গেছে।  

সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের হিসেবে, ঢাকার কাঁচপুর থেকে সিলেট পর্যন্ত ২২৬ কিলোমিটার সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে পৌনে ১০ হাজার কোটি টাকা।  এর সঙ্গে ১৮ শতাংশ ‘অ্যাডজাস্টমেন্ট কস্ট’ ও ২০ শতাংশ ‘কনটেনজেন্সি কস্ট’ মিলিয়ে ১৪ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি হয় বাংলাদেশ সরকারের হিসেবে। কিন্তু চায়নিজরা ‘অ্যাডজাস্টমেন্ট কস্ট’ নিয়ে আপত্তি তুলেছে।
 
তাদের হিসেবে কনটেনজেন্সি কস্ট ও  ভ্যাট মিলিয়ে চারলেন নির্মাণ ব্যয় দাঁড়ায় ১৩ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি।  এ হিসেবে এক হাজার ৩০ কোটি টাকার ব্যবধান হয় বাংলাদেশ সরকারের দামের সঙ্গে।  
 
চায়না হারবার সূত্র জানিয়েছে, অ্যাডজাস্টমেন্ট কস্ট না কমালে তারা আর এ প্রকল্পে থাকছে না।  

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন)  মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘ ঈদের পর পরই চায়না হারবার জানাবে বলেছিলো। ঠিক ১৫ দিন সময় চেয়েছিলো তারা। আমাদের নির্মাণ ব্যয় আমরা জানিয়ে দিয়েছি। এখন যদি ওই কোম্পানি না আসে, তাহলে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) করে এডিবি, বিশ্বব্যাংক, জাইকা বা আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে এটি করতে হবে। তবে এতে অনেক দেরি হবে’।  
 
তিনি আরও বলেন, ‘শিগগিরই আমরা তাদের ডাকবো। আমাদের দামের আর পরিবর্তন হবে না। এ দামে যদি চারলেন তারা করে, তাহলে করবে। না হলে আমাদের নতুন কাউকে খুঁজতে হবে। তবে আমাদের দাম এটিই থাকবে’।  
 
তবে চায়না হারবার আর ফিরবে না বলে মনে করছেন উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ও অথমন্ত্রীর ভাই ড. এম এ মোমেন। তিনি এ প্রকল্পে গতি আনতে সরকারকে বার বার তাগিদ দিচ্ছিলেন।  
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘চায়না হারবার যদি চারলেন নির্মাণের কাজ না করে, তাহলে কাজ শুরু ও শেষ হতে অনেক দেরি হবে। ২০২২ সালের আগে হবে না। এতে সরকারের প্রতিশ্রুতি নষ্ট হবে। আগামী নির্বাচনের আগেই সিলেটবাসীকে চারলেন উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার’।  
 
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ঢাকা-সিলেট চারলেন নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই ও বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করা হয়। শুধু নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৬৬৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ছোট আকারের ৬০টি সেতু, চারটি ফ্লাইওভার ও ২৭টি বক্স কালভার্টও নির্মাণ করার কথা।  এর সঙ্গে জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, পরিষেবা সংযোগ লাইন অপসারণ ও পরামর্শক ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করে প্রকল্পের মোট সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিলো ১৭ হাজার কোটি টাকা।  
 
ব্যয়ের শেষ চারটি অংশ বহন করবে বাংলাদেশ সরকার। আর জি-টু-জি ভিত্তিতে মহাসড়কটির নির্মাণ ব্যয় বহন করার কথা চীন সরকারের। তবে ব্যয় নিয়ে সমঝোতা না হলে পুরো প্রকল্পটিই ঝুলে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর সেতু থেকে সিলেট শহর পর্যন্ত ২২৬ কিলোমিটার দুইলেন সড়ককে চারলেনে উন্নীত করাই ছিলো এ প্রকল্পের কাজ।  প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা থেকে সিলেট তিন থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টায় যাতায়াত করা যেতো।  

আগামী বছরের জুনের মধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চারলেন নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭
এসএ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।