ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কেজি মাত্র ৪'শ, নিয়া যান, ফ্রিজে ভরেন…

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৭
কেজি মাত্র ৪'শ, নিয়া যান, ফ্রিজে ভরেন… ইলিশে সয়লাব মাছের বাজার; ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা:সকাল থেকেই নিরবচ্ছিন্ন বৃষ্টি। মুহূর্মুহূ আকাশভাঙা বজ্রপাত আর বিজলি-চমক। বাড়ির সামনে ডুবে যাওয়া পথঘাট। তবু কোনো প্রতিকূলতাই যেন বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। গৃহস্থালির কাজ শিকেয় তুলে গৃহিনী রোকসানা রহিম ব্যাগ হাতে ঠিকই ছুটে এসেছেন বাজারে। একটি দুটি নয়। ইলিশ কিনলেন ১৪টি।

কেবল রোকসানা একাই নন,তার মতো ধুম বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনেক গৃহিনীকেই দেখা গেলো বাজারে। সবাই ব্যস্ত ইলিশের দরদামে।

যেমন শারমিন সোহানা। স্কুল থেকে সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে বাজারে ঢুঁ মেরে নিজেও থলেতে ভরলেন দুই হালি ইলিশ।

"সাভারের ব্যস্ততম রাজ্জাক মার্কেটের কাঁচাবাজার ‘বৌবাজার’ হয়ে গেলো না'কি?" --গৃহিনীদের ভিড়ের ভেতর দাঁড়িয়ে ইলিশের দরদাম করতে গিয়ে দু’একজন পুরুষ ক্রেতা হাস্যচ্ছলে এমনটিই বলছিলেন বাংলানিউজকে।
ইলিশে সয়লাব মাছের বাজার; ছবি: বাংলানিউজ
"কেজি মাত্র ৪'শ। কেজি মাত্র ৫'শ। নিয়া যান। ফ্রিজে ভরেন" বিক্রেতাদের এমন হাঁকডাকে সরগরম ইলিশের বাজার।

দেশি পাবদা আর আইড় মাছ নিয়ে বসেছিলেন সুজন রাজবংশী। বাংলানিউজকে আক্ষেপ করে জানালেন,"অন্যান্য দিন আমার দোকানেই ভিড় থাকে। দিন কি উল্টায়া গেলো! আজ ধারে কাছে আইসা দাম জিগানোর কাস্টমার নাই। বেবাকতে (সবাই) ছুটতাছে ইলিশের পেছনে। "

সুজন রাজবংশীর কথার সত্যতা মেলে মাছ বিক্রিতা আশরাফুলের কথায়:"আইজকা এক লাখ ২০ হাজার ইলিশ তুলছি। মোকামে দাম পড়ছে ১৪ হাজার থেকে ২৬ হাজার টাকা মন।

সে হিসেবে প্রায় ৫'শ গ্রামের ইলিশ ৩৫০ আর ৭ থেকে ৮'শ গ্রামের ইলিশ কেনা পড়েছে ৬'শ ৫০ টাকা। কেজিপ্রতি মাছে ২০ থেকে ৫০ টাকা ছাইড় দিচ্ছি''- বলছিলেন আশরাফুল।
ইলিশে সয়লাব মাছের বাজার; ছবি: বাংলানিউজ
টানা বর্ষণে আজ সোমবার অফিসে যাননি সৈকত হাবিব। বাংলানিউজকে জানান, কাল থেকেই ফেসবুকের নিউজ ফিডে "সস্তায় ইলিশ খাওনের এখনি সময়"শিরোনামের একটি নিউজ ঘুরপাক খাচ্ছিল। নিউজটাই বৃষ্টির মাঝে আমাকে বাজারে টেনে এনেছে।

আসলেই বেশ সস্তা। আগে ইলিশের দরদাম করার সাহস পেতাম না। ধারে কাছেও ঘেষতাম না। আজ ৭টা কিনলাম। ৬ কেজি ওজন।
মাছের আড়তদাড় মো: রুদ্র বাংলানিউজকে জানান, এখন স্বাদেগন্ধে ভাল আর ডিম ছাড়া মাঝারি মানের ইলিশ কেনাই উত্তম। এই আকৃতির ইলিশ যেমন তেলাল, স্বাদেও সেই রকম।

পটুয়াখালি,পাথরঘাটা, কুয়াকাটা,বরিশালের বিভিন্ন মোকাম থেকে হাজার হাজার ককশিটে করে আসা ইলিশে এখন বাজার সয়লাব। ‘মাছের রাজা’কে এখন কেউ কেউ বিক্রি করছেন পদ্মার বলে। আবার চাঁদপুর,চট্টগ্রাম থেকে আসা ইলিশ বরিশালের ইলিশের সাথে মিশিয়েও বিক্রি করছেন অনেকে।

তবে চট্রগ্রামের চাইতে বরিশাল অঞ্চলের ইলিশের স্বাদ বেশি। তাই একেবারে সস্তায় গলে না গিয়ে একটু সচেতন হয়ে ইলিশ কেনার পরামর্শ দেন রুদ্র নামের ইলিশের পাইকার।

নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ক্রেতাদের ঢলে রূপালী ইলিশে চকচকে ভবিষ্যতের স্বপ্নও দেখছেন অনেকে।

আগের বার দেড় লাখ টাকা লস খাইছি। ধার দেনায় জেরবার। খোদা চায় তো এবার ভাগ্যটা অনেক সুপ্রসন্ন- হাঁকডাকের মধ্যেই বেশ উচ্ছ্বাসের সুরে আশাবাদের কথা শোনাচ্ছিলেন ইলিশবিক্রেতা মজিবর।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৭
জেডআর/ জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।