ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

টানা বর্ষণে নগরে জল থৈ থৈ, ভোগান্তি চরমে

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৭
টানা বর্ষণে নগরে জল থৈ থৈ, ভোগান্তি চরমে রাজধানীর মিরপুরে জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: ভোর থেকে টানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জল থৈ থৈ করছে রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ এলাকায়। জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে কমে গেছে যানবাহন। একদিকে বর্ষণ আর জলাবদ্ধতা, অন্যদিকে যানবাহন সংকটের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল-কলেজ ও কর্মস্থলগামী মানুষ।

সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে সকাল ১০টায় প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত বর্ষণ চলছিল। এর সঙ্গে চলছে বজ্রপাতও।

অবিরাম বর্ষণের কারণে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, ধানমন্ডি, জিগাতলা, রাজাবাজার, সোবহানবাগ, আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, মিরপুর, পল্লবী, কুড়িল, নর্দা, বাড্ডা, মালিবাগ, মতিঝিল, আরামবাগ, কমলাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

এই বর্ষণ ও জলাবদ্ধতার কারণে পথচারী এবং যানচলাচলে চরম বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য খোঁড়া গর্তে পড়ে গাড়ি-রিকশা আটকে যাচ্ছে। যার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটও।

শেওড়াপাড়া থেকে বাংলানিউজের আউটপুট এডিটর অশোকেশ রায় জানিয়েছেন, বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে আগারগাঁও থেকে ৬০ ফুট রাস্তা হয়ে মিরপুর-২ নম্বরগামী এবং মিরপুরের আনসার ক্যাম্প থেকে আব্দুল্লাহপুর ও নতুনবাজার-বাড্ডাগামী গণপরিবহন সংকটে স্কুল-কলেজ ও কর্মস্থলমুখী যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া ও মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় জলাবদ্ধতায় যানজটের কারণে বিভিন্ন বাস স্টপেজ ও রাস্তায় গাড়ির অপেক্ষায় ভিজতে দেখা গেছে অনেককে।

পল্লবী, মিরপুর ১২ নম্বর ও কালশীর রাস্তাগুলোতেও হালকা জলাবদ্ধতা দেখা গেছে বলে জানান অশোকেশ রায়শেওড়াপাড়া ও কাজীপাড়া এলাকার সড়কে জলাবদ্ধতা।  ছবি: অশোকেশ রায়ধানমন্ডি ২৭ নম্বর রোড থেকে স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট খুররম জামান জানিয়েছেন, বর্ষণের কারণে রিকশাগুলো নড়ছেই না। স্বাভাবিক নেই অন্য যানবাহন চলাচলও। ছোট-বড় গর্তে পড়ে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাচ্ছে অনেক যানবাহনের। কোথাও কোথাও গাড়ির জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়েও ফল মিলছে না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে যাত্রীরা ভিন্ন উপায়ে রওয়ানা হতে বাধ্য হচ্ছেন।

খুররম জামান বলছেন, যানবাহনের এই সংকটের সুযোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলমুখী মানুষের কাছ থেকে চড়া ভাড়া চাইছেন রিকশাচালকরা। এই চড়া দামের কারণে অনেকে বাধ্য হয়ে হাঁটু পানি ঠেলেই সামনে এগোচ্ছেন। ভারী বর্ষণের কারণে সারারাত ধরে স্তূপ করা রাস্তা আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ছে সড়কে। এতে আটকে যাচ্ছে পানি নিষ্কাশন। ফলে তৈরি হচ্ছে আরও জটিল পরিস্থিতি।

ধানমন্ডি এলাকা থেকে আরেক স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ইলিয়াস সরকার জানিয়েছেন, বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যাওয়ায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বিপরীতে শুক্রাবাদ ও পশ্চিম রাজাবাজার এলাকার মানুষ একপ্রকার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মিরপুর সড়ক থেকে শুক্রাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় সড়কের কাঁচা বাজার পর্যন্ত জমে গেছে হাঁটু পরিমাণ পানি।  
 
ইলিয়াস বলছেন, স্কয়ার হাসপাতালের পূর্বপাশ ঘেঁষে পশ্চিম রাজাবাজার সড়কেও ময়লা পানির সয়লাব। পশ্চিম রাজাবাজার থেকে ফার্মগেট যাওয়ার পথে কিছুটা পানি উঠেছে ইন্দিরা রোডের পশ্চিম রাজাবাজার অংশে। একইভাবে রাজাবাজার থেকে সোবহানবাগের সড়কও পানির নিচে। এ কারণে দুর্ভোগে পড়ছে এই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসগামী বাসিন্দারা।  
 
এসব রাস্তা পারাপারে রিকশা এবং ভ্যানগাড়ি জনপ্রতি ১০ টাকা হারে ভাড়া নিচ্ছে বলেও জানান ইলিয়াস সরকার

মতিঝিল এলাকা থেকে সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মাহফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টিপাত হলেই মতিঝিল, আরামবাগ ও কমলাপুর এলাকার সড়কে পানি জমে যায়। সোমবারও হয়েছে তাই। এসব এলাকার রাস্তায় জমে থাকা পানির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন ক্ষুদ্র আয়ের মানুষ। মিরপুর এলাকার সড়কে জলাবদ্ধতা।  ছবি: জিএম মুজিবুরকমলাপুর-আরামবাগ ঘুরে মাহফুজুল ইসলাম দেখেছেন, রাস্তায় কোনো কোনো জায়গায় হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে গেছে, ঠিক একই অবস্থা আরামবাগ মোড় এলাকায়। বৃষ্টির কারণে ফুটপাতে কোনো দোকান নেই। জলাবদ্ধতার কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কোনো গাড়ি রাস্তায় থামছে না। এই সুযোগে রিকশাওয়ালারা দ্বিগুণ ভাড়া হাঁকছেন।

মিরপুর থেকে সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট জিএম মুজিবুর জানান, মিরপুর ১০ নম্বর ছাড়াও ১৩ নম্বর, ১৪ নম্বর, পুলপাড় ও ইব্রাহিমপুরের মতো নিম্নাঞ্চলের রাস্তায় এবং টিনশেড বাড়িগুলোতে পানি উঠে গেছে। এ কারণে অফিস ও স্কুলগামীদের যাতায়াত ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হচ্ছে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

মিরপুর থেকেই স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মানসুরা চামেলী জানিয়েছেন, ভোর থেকে মুষলধারায় বৃষ্টির কারণে পল্লবী ও চিড়িয়াখানা রোডের বিভিন্ন জায়গায় হাঁটুর উপরে পানি জমেছে। ইব্রাহিমপুর এলাকার বিভিন্ন স্থানে একতলা বাড়িতেও পানি ঢুকে গেছে। অলি-গলিতে সৃষ্টি হয়েছে কোমর পরিমাণ জলাবদ্ধতার।

চামেলী বলছেন, জলাবদ্ধতার কারণে মানুষের স্বাভাবিক চলাচলে বিপত্তির সৃষ্টি হয়েছে। পরিবহন সংকটের কারণে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়েও বাসে উঠতে পারছেন না যাত্রীরা। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও অফিস-আদালতগামী মানুষ। যানবাহন না পেয়ে কাদা-পানি মাড়িয়ে, ছাতা মাথায় গন্তব্যস্থলে রওনা দিচ্ছেন তারা। স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা বাবা-মায়ের হাত ধরে ঝুঁকি নিয়ে খানা-খন্দ ভরা হাঁটু পানি মাড়িয়ে রওয়ানা হচ্ছে গন্তব্যে।

কলাবাগান-কাঁটালবাগান এলাকা ঘুরে স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মনি আচার্য্য জানিয়েছেন, জলাবদ্ধতার কারণে ম্যানহোল তলিয়ে যাওয়ায় ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ছে রাস্তায়। জলাবদ্ধতা ও আবর্জনা জড়িয়ে পড়ায় রাস্তাঘাটে তৈরি হয়েছে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি।  

কাঁঠালবাগানের বাসিন্দা হায়দার মিয়া বাংলানিউজের মনিকে বলেন, বৃষ্টিপাতের কারণে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমেছে রাস্তায়। এখন কোনোভাবে পান্থপথের মেইন রোডে এলেও গাড়ি পাচ্ছি না।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৭/আপডেট ১০১৮ ঘণ্টা
কেজেড/ইএস/জিএমএম/এমসি/এএসআর/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।