ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ছাড়া সবাই শখের সহানূভূতিশীল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৭
 রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ছাড়া সবাই শখের সহানূভূতিশীল রোহিঙ্গা

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ছাড়া আর সব দেশই লোকদেখানো সৌখিন সহানুভূতি দেখাতেই ব্যস্ত। তারা কেবল ‘লিপ সার্ভিস’ই দিয়ে চলেছে। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়ে কোনো দেশই এগিয়ে আসছে না। বিশেষ কোনো দরদ নেই। তারা কিছু সফর, ত্রাণ, অর্থ ও বাণী দিয়েই ‘দায়িত্ব’ সারতে চাচ্ছে।তুরস্কও এ থেকে আলাদা নয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এমন অভিমতই পাওয়া গেছে।

তুরস্কে বাংলাদেশ দূতাবাসের উর্ধ্বতন কূটনীতিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোয়ান কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করতে ০৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ আসেন।

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরজমিনে দেখে গেছেন তিনি। কিন্তু ফলাফল বলতে গেলে শূন্য। তিনি কেবল জানিয়েছে গেছেন, তুরস্ক মায়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পাশে থাকবে। রোহিঙ্গা শিশু, নারী-পুরুষদের দুর্দশার কথা জাতিসংঘের কাছে উপস্থাপন করবেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।

কিন্তু বাস্তবে তুরস্কের অবস্থান আগের ঘোষণার ধারেকাছেও নেই। রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে পুনর্বাসনের বিষয়ে তারা যে, প্রস্তাব বাংলাদেশকে দিয়েছেন তাতে আশাবাদী হবার কিছু্ই নেই। তুরস্কের প্রস্তাবটি হচ্ছে,  সাধারণ রোহিঙ্গাদের নয়, বরং তুরস্ক ২০০ রোহিঙ্গা ছাত্র নিতে চায়। অর্থাৎ, আগে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করার কথা বলে যতোটা ঢাকঢোল পিটিয়েছিল দেশটি, বাস্তবে তা পর্বতের মুষিক প্রসবের পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। শুভঙ্করের ফাঁকিটাও এখানেই।

উর্ধ্বতন এই কূটনীতিক বলেন, আমরা লাখ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে বছরের পর বছর বসবাস করছি। আর তারা লোকদেখানো শখের ফটোসেশনেই ব্যস্ত।

তিনি বলেন, ১ সেপ্টেম্বর বিবৃতি দিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। তিনি একে ‘গণহত্যা’ বলেও উল্লেখ করেন। তার আগে ৩১ আগস্ট রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে ফোনও করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি ০৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে এসে বলেছেন, অচিরেই রোহিঙ্গা মানবিক বিপর্যয় শেষ হতে হবে। এর জন্য যা যা করণীয় সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে ইন্দোনেশিয়া সরকার। কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া দুই দেশই প্রো-বার্মিস কান্ট্রি। জাতিসংঘে যখনই আমরা মায়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা বিষয়ে কোনোও পদক্ষেপ নেবার কথা বলেছি তখন সবচেয়ে বেশি বাধা দিয়েছে এ দুটি দেশ। থাইল্যান্ডও একটি সেনাশাসিত দেশ। তাছাড়া তারাও ৩০ হাজার রোহিঙ্গা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।

অন্যদিকে ভারত ও চীন তাদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে সে অনুযায়ীই পদক্ষেপ নিচ্ছে। এটি সকলরই জানা। যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগ জানাবে। জাতিসংঘ ও পশ্চিমা দেশ কিছু সহায়তা দেবে। কিন্তু দায়িত্ব এড়াবে সকলেই।

ওআইসি মহাসচিব কিছুদিন আগে এসে রোহিঙ্গাদের সরজমিনে দেখে গেছেন। কিন্তু অন্য রাজনৈতিক বিষয়ে ওআইসিকে যতটা সোচ্চার হতে দেখা যায় এক্ষেত্রে তার ছিঁটেফোটাও দেখা যাচ্ছে না। তারা মুসলিম উম্মার ধ্বজা কতটুকু ধরে রাখছেন সেটাই এক বড় প্রশ্ন।

আর এক কর্মকর্তা জানান, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যেই সেফ জোন বা নিরাপদ এলাকা প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব রেখেছে বাংলাদেশ। এটিই হতে পারে গ্রহণযোগ্য একমাত্র ন্যায্য সমাধান। আর এটি হতে পারে জাতিসংঘের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। অন্তত পাঁচবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছিলেন জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব আন্তোনিও গুতিয়েরেস। তিনি খুব ভালো করেই জানেন রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কিভাবে হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, এবারের জাতিসংঘ সম্মেলনে নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশ এ বিষয়টি উত্থাপন করলে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে ব্যাপক সমর্থন পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। দেখা যাক, বাস্তবে তার কতোটা কী হয়!

বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০,২০১৭
কেজেড/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।