সুজন বলেন, ‘প্রতিটা গরুতি লুসকান (ক্ষতি) হইচে। রাখলে আরও লুসকান।
গাবতলী হাটের প্রবেশদ্বারে বড় বড় করে লেখা- ‘এখানে চাপাইনবাবগঞ্জের বড় বড় গরু পাওয়া যায়’। কিন্তু প্যান্ডেলের ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে- বড় গরু নেই বললেই চলে। হাতেগোনা কয়েকটি ধরে রাখা হয়েছে বাড়তি দামে বিক্রি করার আশায়।
বড় গরুর ব্যাপারীরা দাবি করছেন, গত তিনটি কোরবানির ঈদে বড় ধরনের লোকসান গুণতে হয়েছে তাদের। তাই আতঙ্কে অল্প ক্ষতিতে আগে-ভাগেই বড় গরু বিক্রি করা হয়েছে এবার। বড় গরু রাখা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। হাটের মধ্যে ভ্যাঁপসা গরম, নোংরা পরিবেশ, হাজার মানুষের আনাগোনায় সেগুলোর মধ্যে ভয় কাজ করছে। অনেক সময় হাটে বড় গরু স্ট্রোক করে। এগুলোকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া আরও ভয়ের কারণ। তাই স্বল্প ক্ষতিতে বিক্রি করে দিয়েছেন তারা।
তারা জানান, এক সপ্তাহ আগে এসব বড় গরু হাটে এসেছে। আবার ট্রাক ভর্তি করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ও বাড়তি ভাড়া গুণতে হবে। একটি ট্রাকে ছয়টি বড় গরু বহন করা সম্ভব, ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত যার ভাড়া ৩০ হাজার টাকা থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
হাটের একটু ভেতরে বড় গরুর আরও একটি ফাঁকা প্যান্ডেলে রয়েছে একটি মাত্র গরু। সাভারের আব্দুল কুদ্দুস এবারের হাটে তিনটি বড় গরু তুলেছেন। এর মধ্যে দু’টি গরু নয় লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। ক্ষতি না হলেও লাভ হয়নি বলে দাবি সামাদের। এখনও একটি গরু তিনি রেখে দিয়েছেন লাভের আশায়। কিন্তু হাটের ভ্যাঁপসা গরমে গরুটির প্রাণ ওষ্টাগত। তাই ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গরুকে গোসল করাচ্ছেন তিনি।
আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘দু’ইটি বড় গরু নয় লাখে বিক্রি করেছি। এক এক গরুর মাংস ১১ মণের কম হবে না। বাড়িতে যে দাম বলেছে, হাটে তার অর্ধেক। ভয়ে ভয়ে গরু বিক্রি করেছি- যদি গতবারের মতো হয়। তবে একটা গরু রাখছি। হয় লাভে বিক্রি করবো, নতুবা বাসায় নিয়া যাবো’।
অধিকাংশ বড় গরুর প্যান্ডেল ফাঁকা। তবে যারা সাহস করে বড় গরু রেখেছেন তারা লাভবান হবেন বলেও মনে করছেন অনেকে। তাদের দাবি, হয়তো কোনো একজন স্বল্প লোকসানে বড় গরু বিক্রি শুরু করেছেন, তার দেখাদেখি অনেকে একই কাজ করছেন।
নাটোরের গুরুদাসপুরের রশিদ ব্যাপারী এসেছেন ১০টি বড় গরু নিয়ে। এরই মধ্যে আটটি বিক্রি করেছেন। বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) রাত থেকে বড় গরু বিক্রির হুজুগে তিনিও বিক্রি করে দিয়েছেন। লোকসানে বড় গরু বিক্রি করে এখন আক্ষেপ করছেন তিনি।
রশিদ বলেন, ‘এবাসেবা (যেমন-তেমন) করে বড় গরু ছাইড়িচি। বড় ক্ষতি হইচেরে ভাই। বড় গরু ফেরত লিয়া আরও রিকস (ঝুঁকি)। বড় গরু যদি টোক (স্ট্রোক) ত সব গ্যালো। বেশি ক্ষতি হবে সেই আশায় ঝাইড়ে দিইচি। লাখের নিচের গরু লাভ হইচে, উপরেই নচ (ক্ষতি)’।
লাভ কেমন হয়েছে? প্রশ্নের জবাবে রসিকতার সুরে রশিদ ব্যাপারী বলেন, ‘আড়াই লাখের গরু দুই লাখে ঝাইড়িচি, এডাই লাবরে ভাই’।
কুষ্টিয়ার খামারি রফিকুলও চারটি বড় গরুর মধ্যে তিনটি বিক্রি করে দিয়েছেন। রয়ে যাওয়া গরুটির মাংস ১০ মণ হবে। অথচ ক্রেতারা দাম বলছেন- মাত্র ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। অথচ কেজিপ্রতি মাংসের দরেও গরুটির দাম দুই লাখ টাকা।
রফিকুল বলেন, ‘ভাই কাক কি কবো। ১০ মণ গোস্ত হবে, গরুর দাম কয় ১০০ (এক লাখ)। অথচ গরুর দাম নিম্নে ২০০ (দুই লাখ)’।
তবে গাবতলী পশুর হাটে বৃহস্পতিবারের চেয়ে শুক্রবার সব ধরনের গরুর দাম কিছুটা কম।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর